১৫ই আগষ্ট ২০১৭ আমাদের কাবিন হয়ে যাবার পর আমি ঢাকায় চলে আসি। অফিসের কাজের ফাকে দিনে ৬/৭ বার জান্নাতে সাথে ফোনে কথা বলতে হয় । কথা না বললে বিভিন্ন ভাবে অশান্তি শুরু করে। মানসিকভাবে এতটাই বিপযস্ত করে ফেলে যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।এভাবেই চলে যাচ্ছে দিন। কিন্তু মানসিক ভাবে আমি ধুকে ধুকে মরছি।
আমি দুপুরে লাঞ্চ করতে গিয়েও ওর সাথে কথা বলি। যতবার ফোন করি আধঘন্টা একঘন্টার আগে ফোন রাখা যাবে না।তাহলেই শুরু হয়ে যাবে, বিশ্রি ভাষা। আমি কাজের ব্যস্ততায় ফোন করতে সময় কম পাই। জান্নাতই আমাকে ফোন করে। আমি কল ব্যাক করি।
প্রতিদিন দুপুরে লাঞ্চে , আমার খাওয়া শেষ হতে না হতেই কল দিবে। কলিগদের সামনে প্রতিদিন কেমন যেন হাসির পাত্র হয়ে গেছি। সামনে কিছু না বললেও পিছনে হাসাহাসি করে।
হঠাৎ একদিন আমাকে জান্নাত লাঞ্চটাইমে ফোন করলো। যথারিতি আমি কল ব্যাক করলাম। জান্নাত ফোন রিসিভ করেই আমাকে বললো - আমার বাপ-মাকে তুই ফোন দিস না কেন?
আমি আকাশ থেকে পড়লাম একি ব্যবহার । ঘন্টা খানেক আগেও কতো সুন্দর কথা হলো। আমি বুঝিয়ে বললাম তুমি তো, ওখানেই থাকো। আমি প্রতিদিন ৬/৭ বার তোমার সাথে কথা বলছি। তোমর কাছথেকেই তো আমি তাদের খবর নিচ্ছি তার পর আবার বিনা প্রয়োজনে আবার তাদের কেন ফোন দিবো। কোন কথায় কাজ হবে না। তার বাবা মাকে আমার ফোন করে খোজ খবর নিতে হবে।
এভাবেই সপ্তাহে দুটো দিন ভালো কাটলে ৪টা দিন আমার কাটাতে হয় নির্ঘুম, মানসিক যন্ত্রনার মধ্যে দিয়ে। কাজে কর্মেও তেমন মন বসে না। দিন দিন আমি যেন পাগল হয়ে যা্চ্ছি। জান্নাতের বাড়ির সবাইকে ঘটনার আদ্যপান্ত জানালাম কিন্তু কোন কাজ হলো না। এ যেন কুকুরের লেজ। আমার নানী শ্বাশুড়ি মামী শ্বাশুড়ী বললো একটা বাচ্চা নাও আর ওকে ঢাকায় নিয়ে যাও সব ঠিক হয়ে যাবে।
আল্লাহর রহমতে তাই হলো। ঢাকায় নিয়ে এলাম । ঢাকায় এনে কিছুদিন পর আবিস্কার করলাম একটা হিন্দু ছেলের সাথে সম্পর্কের কথা। রাগের বসে লাথি চড় দুচারটে মারলাম। তখন জান্নাত অন্তসত্যা।
যাই হোক সবকিছু মানিয়ে নেয়ার জন্য দাতে দাত লগিয়ে চুপ থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু মানুষতো কতোক্ষন পারি......
সম্বভত ৬/৭ মাসের অন্তসত্তা অবস্থায় আমি জান্নাতকে ওদের বাড়িতে রেখে আসি। জান্নাতের ইচ্ছাতেই আমি ওকে ওখানে রেখে আসি। আমি প্রতি মাসে খরচ পাঠাই এবং দিনে ৫/৬ বার খোজ খবর নেই। থাকে বাপের বাড়ি অথচ জান্নাতের যাবতীয় খরচ আমি পাঠাচ্ছি। এর মধ্যে ঘটে গেছে আরো অনেক কাহিনী। গভীর ষড়যন্ত্র । আমার বাপ মা নিয়ে নানান মিথ্যা ঘটনা- রটনা। ওরা কেন এমন করছে জানিনা। জান্নাত তো কখনোই আমার বাড়িতে থাকেনি। তাহলে আমার বাবা মা তাকে কিভাবে নির্যাতন করলো। প্রতিটা দিন ফোন করলেই আমার বাপ-মা সম্পর্কে একটা না একটা মিথ্যা রটনা রটাতেই হবে।
জান্নাতের বাপ-মা শুধু বড় বড় কথা আর অশান্তি সৃষ্টি করা ছাড়া আর কিছুই না। আমি আর না পেরে জান্নাতের ফোনে অটো কল রেকর্ড সেট করলাম।তার পর ধরা পড়লো ওদের ষড়যন্ত্র। এবার আব্বা আম্মার সাথে ফোনে যে কথা হয় তার উল্টো সাজিয়ে সবাই মিলে রটনা ঘটনা শুরু করে। কল রেকডিং থেকে শুনতে পারলাম কিভাবে ওরা মিথ্যা সাজায় আর সেটা নিয়ে ঝগড়া ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে।
এভাবে ৪ জুলাই ২০১৯ আনজুমার জন্ম হয়। এখানেও আছে অনেক বড় ষড়যন্ত্র। হাসপাতালে নেওয়ার আগেও সে কি গড়িমসি। মেয়ে মারা যাচ্ছে তারপরও তাদের তেমন কোন দৌড় ঝাপ নাই। দুদিন ধরে বাচ্চা নড়ছেনা। তারপরও ঘরে বসে আছে। আমি ঢাকা থেকে ফোন করে বার বার বলছি দ্রুত হাসপাতালে নিতে । আমার শ্বাশুড়ি বলে একটু জ্বর আসছে সেরে যাবে। হাসপাতালে নেয়া লাগবেনা। ওর গায়ে জ্বর তো তাই বাচ্ছা নড়ছে না।
অনেক জোরাজুরির পরে হাসপাতালে নিলো, কাজদিয়া উপজেলা হাসপাতালে , সেখান থেকে ডাক্তার বললো আমরা এই রোগী রাখতে পারবোনা । আপনার খুব দ্রুত খুলনায় নিয়ে যান। সেখানেও অলসতা এম্বুলেন্সে রোগী তুলে অপেক্ষা নানীর জন্য। নানী না আসলে এম্বুলেন্স ছাড়া যাবেনা। এ যেন বিয়ে বাড়ি দাওয়াত খেতে যাওয়া্ । আমি অলরেডি চিল্রাচিল্লি বকাঝকা করেই যাচ্ছি। অবশেষে অনেক রাত্রে খুলনায় নেয়া হলো। ডাক্তার অক্সিজেন দিয়ে বাচ্চা সুস্থ করলো এবং জান্নাতের ডায়াবেটিস ধরা পড়লো ২৮। সেখানেও তারা মিথ্যার আশ্রয় নিতে ততপর। আমাকে ফোন করে বিভিন্ন ডাক্তারের রেফারেন্স দিয়ে বলতে লাগলো। অমুক নার্স বলেছে, অমুক বড় ডাক্তার বলেছে এই ডায়বিটিকসে কিছু হয় না- ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমি পরিস্কার বুঝতে পারিছ যে, এরা সবাই আমাকে অনরগল মিথ্যা বলে যাচ্ছে। আমি শুধু আমার শ্বশুরকে বলেছিলাম যে, আমি কি ডায়সেটিকসের কথা কিছু বলেছি আপনাদের ?
শ্বশুর না- তাহলে আপনারা এতো প্যাচঘোচ দিচ্ছেন কেন?
আমার বাপ-মাকে জানালাম তার ক্লিনিকে আসলো । তাদের সাথে তেমন ভালো ব্যবহার তারা করলো না। বরঞ্চ খোচা মেরে মেরে কথা বলতে লাগলো।
ডেলিভারীর ব্যবস্থা করতে হবে। সেটাও আমার করতে হবে । তারা কোন দায় ভার নিতে পারবে না। আমি ফোন করে রুপসা ইনসাফ ক্লিনিকে ব্যবস্থা করলাম। আমার শ্বশুর বাড়ির লোকদেরও এটাই পছন্দ কম খরচ। ডাক্তার ভালো যাইহোক সবার মতামতে এখানে ডেলিভারীর ব্যবস্থা করা হলো। আমার শ্বাশুড়িকে দেখে মনেই হয়না যে, তিনি মেয়ের মা। দায়ছাড়া গোছের, হাসপাতালে এসেছে অথচ মেয়ের জন্য বাড়তি একটা কাপড়ও আনেননি।
তবে হ্যা আমার মেঝ ফুফু শ্বাশুড়ি ওনি যা করেছেন তা ভোলার নয়। আমার অবর্তমানে ফুফুই পুরো দায়িত্ব পালন করেছেন। ফুফুর কথা বলে শেষ করা যাবেনা। যাবতীয় সব উনিই করেছেন। আমি ফোন করে বাকি দোকান ঠিক করে দিয়েছ। ফুফু সেখান থেকে যাবতীয় ওষুধ আনা, বাচ্চা নিয়ে শিশু হাসপাতারে যাওয়া , জান্নাতের কাপড় বদলানো, গোসল করানো থেকে যাবতীয় সব ফুফুেই করেছেন। এমনকি মেয়ের অভ্যন্তরিন যা করার কথা ছিলো আমার শ্বাশুড়ির তাই করেছে ফুফু্। ফুফু অনেক ভালো মানুষ , তবে একটু কথা বেশি বলে তাই একজনের কথা আরেক জনের কাছে মাঝে মাঝে বলে ফেলে।
আমি অফিসের কাজে এতোটাই ব্যস্ত ছিলাম যে, আমার মেয়ে হবার সময় আমি জান্নাতের পাশে থাকতে পারিনি। অফিসের সবাই ঢাকার বাইরে ছিলো। আমিই শুধু ঢাকাতে ছিলাম। তাই পুরো অফিসের দায়িত্ব ছিলো আমার কাধের উপর। এনিয়ে শ্বশুর বাড়ির লোকজনসহ বউয়ের কাছে অনেক বেশিকম শুনতে হয়েছে।
তিনদিন পরে যখন আমার শ্বশুর হঠাৎ একটি এম্বুলেন্স ঠিক করে মেয়ে-নাতীতে বাড়িতে নিয়ে যায়। তখন আমার আব্বাকে আমার শ্বশুর ফোন করে বলেছিল- বিয়াই আমরা ক্লিনিক থেকে বাড়ি চলে যাচ্ছি। আপনার আর এখন আসবেন কি করতে ? সময় করে কাজদিয়ায় আসবেন পুতনী দেখতে।
আমি চুপচাপ ওনাদের কার্যকলাপ শুধু দেখছি আর শুনছি। ওখানে যা ঘনটা ঘনে সব কিছু ফুফু আমাকে টাইম টু টাইম জানাচ্ছে। আমি ফুফুকে বললাম ফুফু ক্লিনিক থেকে যাবার আগে আমার আব্বা আম্মাকে একটু খবর দিলে ভালো হতো না। ফুফু বললো আমিই তো জানিনা , তোমার শ্বশুর হঠাৎ এম্বুলেন্স নিয়ে হাজির ।
আমার বাপ-মা, আত্মিয় স্বজন আমার মেয়ে দেখতে কেন আমার শ্বশুর বাড়িতে কেউ এলোনা, আমার কি কেউ নাই ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রশ্নে আমি প্রতিদিন জর্জরিত্ মর্মাহত্ । একটা সন্তান হয়েছে , একটা তৃপ্তির হাসি হাসবো সেই উপায় টুকু্ও নাই।
কখনো আমার শ্বশুর, কখনো নানী শ্বাশুড়ি, আর বউ সেতো প্রতিনিয়ত কিভাবে ছোট করা যাবে, কিভাবে অপমান করা যাবে সেই নিয়ে ব্যস্ত।
আমি আমার মেয়েকে এখন দেখতে পেলাম না। ওর বয়স ৪দিন হয়ে গেছে। এটা আমার জন্য কষ্টদায়ক না। আমার কি এখানে পড়ে থাকতে ভালো লাগছে। বসের অনুমতি ছাড়া চলে আসলে আমার চাকরি থাকবেনা। তারপর কি হবে। আমার সন্তানকে আমি ২দিন ৪দিন পরে হলেও দেখতে পাবো। কিন্তু চাকরী চলেগেলে। তখনতো কেউ পাশে দাড়াবে না। আমার কষ্টটা কেউ বোঝে না। আমার বউ তার কথা আর কি বলবো সেতো .................................
আমার মেয়ের বয়স যখন ৬ দিন তখন আমি আমার শ্বশুর বাড়ি গেলাম। তখন ভোর ৬ টা। মেয়ের সকল অশোভন আচরন তুলে ধরলাম আমার শ্বশুর বাড়ীর সকলের কাছে। সেদিন প্রচুর চেচামেচি করলাম। তিন বছরের মধ্যে এই প্রথম আমি আমার শ্বশুর বাড়ির মুরব্বিদের সাথে উচ্ছস্বরে কথা বললাম। তারপরও তারা বুঝলো না যে, এই পরিস্থিতি কেন তৈরি হলো। আমার শ্বশুর সব শুনে আমাকে বললো -তোমার মেয়ে তুমি নিয়ে যাও , আমার মেয়ে আমার কাছে থাকুক। এটা মাছে কোচ দাবড়ানো ছাড়া আর কি ?
আমি রাগ করে সকাল ৭টার দিকে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম। আমার বউ বারান্দায় চেয়ার পেতে বসে আছে। আমার দিকে ফিরেও তাকালো না। এক ঘন্টার মধ্যেই সব ঘটল। আমি একটু পানিও খেলাম না ওখানে। বাড়িতে এসে আমার আব্বাকে পাঠালাম। তখন আমার শ্বশুর বাড়ির মানুষগুলো অবুঝরে মতো , কিছু বোঝেনা।
আমি যখন চলে আসি তখন আমার শ্বশুর বললো , রাগ করে তো চলে গেলো কিন্তু ক্লিনিকের বিল তো দিল না।
আমার শ্বশুরের গল্পে মানুষ টিকা কঠিন। তিনি নাতীর জন্য এটা করবেন ওটা করবেন ইত্যাদি। অথচ আমার শ্বশুর বাড়ি এলাকায় মিষ্টি খাওয়ানোর জন্য আমার টাকা পাঠাতে হয়েছে। তারপর ক্লিনিকের বিলটা হাতে ধরিয়ে দিলাম। উনার মেয়ের মাধ্যমে। সাাক্ষী রাখলাম নানী শ্বাশুরীকে। আমার মেয়ে ওখানে যতদিন ছিলো , আমার বউ বাচ্চার একটা টিস্যু পর্যন্ত কিনার জন্য আমি ঢাকা পাঠিয়েছি। শ্বশুর বাড়িতে শুধু ঘরভাড়াটা দেয়া হয়নি।