প্রতিদিন একই আচরন একই গালি গালাজ। আমি এখন আর কোন কথায় কোন উত্তর দেই না। চুপচাপ থাকি তারপরও শান্তি নাই। নিজের সাথে সাথে মেয়েটাকে নিয়ে খুব খারাপ লাগে।
আমার মেয়েটা বেশ কিছুদিন ধরে খুব অসুস্থ। প্রসাব আটকে যায়। প্রসাব করতেই চায় না। প্রসাব করার সময় প্রচুর কান্নাকাটি করে। আমার মেয়ে যেমন শান্ত স্বভাবের তেমনি খুব শক্ত। শক্ত বলার কারন হলো সহজে কাদে না। তার মানে বোঝা যায়, প্রসাব করার সময় প্রচন্ড জ্বালাপোড়া হয়, তাই কাদে। আমার কষ্টটা হলো অসুস্থ মেয়ে জন্ত্রনায় কাদছে। তাকে কোলে করে শান্তভাবে বোঝাতে হবে, কান্না থামানোর চেষ্টা করতে হবে।
জান্নাত করে তার উল্টোটা। মেয়েটা যন্ত্রনায় প্রসাব করতে চায় না, তারউপর মার শুরু করে। রাগ দেখায় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এর থেকে আমাকে ও বাদ দেয় না। আমাকে ফোন করে, যা খুশি তাই বলতে থাকে। যেমন আগে বলেছে- তোমার মেয়ের জন্য আমি মরে যাবো, আমার সহ্য হচ্ছে না। আমার জীবনটা মাটি হয়ে গেছে। একটা ভাইরাস পেটে ধরছি। জ্বালায়ে শেষ করে দিচ্ছে, ইত্যাদি।
আমি বুঝিনা কি করবো ?
জান্নাত অসুস্থ হলে, বা সামান্য শরীর খারাপ লাগলে আমাকে ফোন করে শুরু করে- তোমার সাথে বিয়ে হয়ে আমার জীবনটা মাটি হয়ে গেছে। আমি যন্ত্রনায় মরে যাচ্ছি তুমি থাকো তোমার চাকরী নিয়ে, আজকে আর বাড়ি আসবা না, পিওনদের সাথে অফিসে ঘুমাবা। আমি বাচি না আমার জ্বালায় তারউপর জন্ম দিছো একটা ভাইরাস । আমাকে জ্বালিয়ে মারছে।
আমি বলি কি এমন করেছে আমার নিস্পাপ শিশুটি যে, তুমি এমন বাজে বাজে কথা বলছো।
জান্নাত বলল- বমি করে ঘর ভাসিয়ে দিয়েছে। খুব কান্নাকাটি করছে, কোন ভাবেই থামেছে না। দিছি ইচ্ছা মতো মাইর, তারপরও থামে না। লজ্জা নাই।
আমি বললাম- তাহলে তুমি কি বুঝতে পারছো না, যে ওর খারাপ লাগছে, তারপর তুমি যদি ওর সাথে এমন করো, ও কোথায় যাবে, আমি আর তুমি ছাড়া আর কে আছে। আমি থাকি অফিসে , ও সারাদিন তোমার সাথে থাকে। তুমি একটু সংযত হও। তুমি যা করতেছো এগুলো ঠিক না।
জান্নাত বললো-আমি শুধু তোমাদের বুঝবো , আমাকে বোঝার কে আছে? আমি অত কিছু বুঝতে চাই না। তোমার সাথে বিয়ে হয়ে আমার জীবনটা ধ্বংস হয়ে গেছে। এই ভাইরাসটা পেটে না ধরলে চলে যেতাম। আমার জীবন অন্য রকম হতো। এমন নরকের জীবন হতো না।
আমি কিছু না বলে ফোন কেটে দিলাম। আমার ঘৃনা ধরে গেছে ওর উপর, ওর আচার ব্যবহারে আমার প্রচন্ড খারাপ অবস্থা।
স্বাভাবিক ভাবে ও প্রতিনিয়ত আমার সাথে এমন করে ফলে আমার মন মানসিকতা ভালো থাকেনা। অফিসের কাজে ভূল হয়, বসের কাছে নানান কথা শুনতে হয়। আমার কষ্টগুলো কোন দিন জান্নাত বুঝবে না। শুধু আমার নয় ও হয়তো কোনো দিন কাউকে বুঝবে না। ও শুধু মানুষের জীবনকে নরক বানাতে পারে। কারো মুখে হাসি ফুটানোর ক্ষমতা ওর নাই। নিস্পপ শিশু মেয়েটার সাথে যা করে তাতে বাইরের কেউ দেখলে মনে করবে, এটা ওর সৎ মা।
আমি মাঝে মাঝে ভাবনায় পড়ি যে, জান্নাত যদি কারো সৎ মা হতো তাহলে তার জীবনটা কি হতো। আর সেই সাথে দোয়া করি যে পৃথিবীর কোন বাবা-মায়ের ঘরে যেন এমন মেয়ে না জন্মায়।
জান্নাতের গুনের কথা বলে শেষ করা যাবেনা, যেমন আমি দুপুর তিনটায় বাসায় লাঞ্চে গেলাম। জান্নাত গোসল করে পরিপাটি হয়ে তারপর খেতে দিবে। তাই খেতে খেতে ৫ টা বেজে গেলো। রুটিন অনুযায়ী দেরি না করে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হতে হবে। এখানেও জান্নাতের আপত্তি কেন এখনই রওনা হতে হবে। আরেকটু দেরি করে গেলে কি হয়। শুরু করবে বাজে বাজে ব্যবহার। আর আমি নিরবে সেগুলো শুনতে শুনতে ঘরে থেকে বের হয়ে আসি।
আমি হয়তো কোন পাপ করেছিলাম যার ফল হিসেবে এমন অমানুষ পেয়েছে কিন্তু আমার মেয়েটাতো নিস্পাপ ওর কি দোষ , ভেবে পাইনা।
আমি তো পুরুষ যাই হোক পেটের ধান্ধায় থাকতে হয়। একটু স্বচ্ছলতার আশায় আমার এক ধর্ম খালাত ভাইয়ের চাকরীর তদবির করার চেষ্টা করছিলাম। আমার সেই খালাতো ভাই আমাদের খুলনার বাড়িতে গিয়ে আমার আম্মার কাছে বিষয়টি জানাতে চায়। এবং তখন আমার আম্মা আমাকে ফোন দেয়। জান্নাত দেখলো যে আম্মা ফোন দিয়েছে তারপরও আমাকে জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে। আমি সরল মনে সত্যিটা বললাম।
জান্নাত আমার কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো- শুরু করলো আজে বাজে বিশ্রি কথাবার্তা বলতে। আমার তখন মনে হচ্ছিলো ওকে টেনে ছিড়ে ফেলি। মা খালা নিয়েও বাজে কথা বলতে একটু বাঝে না।
আমি শুধু বলেছিলাম - জানোয়ারের বাচ্চা আর একটা কথা বললে তোর কান ফাটিয়ে ফেলবো। তুই তোমা মার কাছে ভালো শুনে দেখ, তুই কোন বৈধ সন্তান না। কোন বাবা মার কোন বৈধ সন্তান এমন কথা বলতে পারেনা। বলে অন্য রুমে চলে গেলাম। মেয়েটা আমার পিছন পিছন আসলো এবং ছোট ছোট করে আমাকে বলছে- আব্বু এসব কথা বলতে হয় না। এগুলো বাজে কথা সরি বলো।
আমি মেয়েকে কোলে তুলে নিলাম। আদর করে চুমু দিয়ে বললাম । ওকে আব্বু সরি।
এই শিশুর কাছ থেকেও যে শিক্ষা নেয়ার আছে সেটা বুজতে ওর কষ্ট হয়। মানুষ হলে অবশ্যই সুধরে যেতো। এখনো যখন সুধরায়নি তখন...............................................