Tuesday, March 29, 2022

সৎ মা



 প্রতিদিন একই আচরন একই গালি গালাজ। আমি এখন আর কোন কথায় কোন উত্তর দেই না। চুপচাপ থাকি তারপরও শান্তি নাই। নিজের সাথে সাথে মেয়েটাকে নিয়ে খুব খারাপ লাগে। 

আমার মেয়েটা বেশ কিছুদিন ধরে খুব অসুস্থ। প্রসাব আটকে যায়। প্রসাব করতেই চায় না। প্রসাব করার সময় প্রচুর কান্নাকাটি করে। আমার মেয়ে যেমন শান্ত স্বভাবের তেমনি খুব শক্ত। শক্ত বলার কারন হলো সহজে কাদে না।  তার মানে বোঝা যায়, প্রসাব করার সময় প্রচন্ড জ্বালাপোড়া হয়, তাই কাদে। আমার কষ্টটা হলো অসুস্থ মেয়ে জন্ত্রনায় কাদছে। তাকে কোলে করে শান্তভাবে বোঝাতে হবে, কান্না থামানোর চেষ্টা করতে হবে।

জান্নাত করে তার উল্টোটা। মেয়েটা যন্ত্রনায় প্রসাব করতে চায় না, তারউপর মার শুরু করে। রাগ দেখায় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এর থেকে আমাকে ও বাদ দেয় না। আমাকে ফোন করে, যা খুশি তাই বলতে থাকে। যেমন আগে বলেছে- তোমার মেয়ের জন্য আমি মরে যাবো, আমার সহ্য হচ্ছে না। আমার জীবনটা মাটি হয়ে গেছে। একটা ভাইরাস পেটে ধরছি। জ্বালায়ে শেষ করে দিচ্ছে, ইত্যাদি। 

আমি বুঝিনা কি করবো ?

জান্নাত অসুস্থ হলে, বা সামান্য শরীর খারাপ লাগলে আমাকে ফোন করে শুরু করে- তোমার সাথে বিয়ে হয়ে আমার জীবনটা মাটি হয়ে গেছে। আমি যন্ত্রনায় মরে যাচ্ছি তুমি থাকো তোমার চাকরী নিয়ে, আজকে আর বাড়ি আসবা না, পিওনদের সাথে অফিসে ঘুমাবা। আমি বাচি না আমার জ্বালায় তারউপর জন্ম দিছো একটা ভাইরাস । আমাকে জ্বালিয়ে মারছে। 

আমি বলি কি এমন করেছে আমার নিস্পাপ শিশুটি যে, তুমি এমন বাজে বাজে কথা বলছো। 

জান্নাত বলল- বমি করে ঘর ভাসিয়ে দিয়েছে। খুব কান্নাকাটি করছে, কোন ভাবেই থামেছে না। দিছি ইচ্ছা মতো মাইর, তারপরও থামে না। লজ্জা নাই।

আমি বললাম- তাহলে তুমি কি বুঝতে পারছো না, যে ওর খারাপ লাগছে, তারপর তুমি যদি ওর সাথে এমন করো, ও কোথায় যাবে, আমি আর তুমি ছাড়া আর কে আছে। আমি থাকি অফিসে , ও সারাদিন তোমার সাথে থাকে। তুমি একটু সংযত হও। তুমি যা করতেছো এগুলো  ঠিক না।

জান্নাত বললো-আমি শুধু তোমাদের বুঝবো , আমাকে বোঝার কে আছে? আমি অত কিছু বুঝতে চাই না। তোমার সাথে বিয়ে হয়ে আমার জীবনটা ধ্বংস হয়ে গেছে। এই ভাইরাসটা পেটে না ধরলে চলে যেতাম। আমার জীবন অন্য রকম হতো। এমন নরকের জীবন হতো না।

আমি কিছু না বলে ফোন কেটে দিলাম। আমার ঘৃনা ধরে গেছে ওর উপর,  ওর আচার ব্যবহারে আমার প্রচন্ড খারাপ অবস্থা।

স্বাভাবিক ভাবে ও প্রতিনিয়ত আমার সাথে  এমন করে ফলে আমার মন মানসিকতা ভালো থাকেনা। অফিসের কাজে ভূল হয়, বসের কাছে নানান কথা শুনতে হয়। আমার কষ্টগুলো  কোন দিন জান্নাত বুঝবে না। শুধু আমার নয় ও হয়তো কোনো দিন কাউকে বুঝবে না। ও শুধু মানুষের জীবনকে নরক বানাতে পারে। কারো মুখে হাসি ফুটানোর ক্ষমতা ওর নাই। নিস্পপ শিশু মেয়েটার সাথে যা করে তাতে বাইরের কেউ দেখলে মনে করবে, এটা ওর সৎ মা। 

আমি মাঝে মাঝে ভাবনায় পড়ি যে, জান্নাত যদি কারো সৎ মা হতো তাহলে তার জীবনটা কি হতো। আর সেই সাথে  দোয়া করি যে পৃথিবীর কোন বাবা-মায়ের ঘরে যেন এমন মেয়ে না জন্মায়।

জান্নাতের গুনের কথা বলে শেষ করা যাবেনা, যেমন আমি দুপুর তিনটায় বাসায় লাঞ্চে গেলাম। জান্নাত গোসল করে পরিপাটি হয়ে তারপর খেতে দিবে। তাই খেতে খেতে ৫ টা বেজে গেলো। রুটিন অনুযায়ী দেরি না করে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হতে হবে। এখানেও জান্নাতের আপত্তি কেন এখনই রওনা হতে হবে। আরেকটু দেরি করে গেলে কি হয়। শুরু করবে বাজে বাজে ব্যবহার। আর আমি নিরবে সেগুলো শুনতে শুনতে ঘরে থেকে বের হয়ে আসি। 

আমি হয়তো কোন পাপ করেছিলাম যার ফল হিসেবে এমন অমানুষ পেয়েছে কিন্তু আমার মেয়েটাতো নিস্পাপ ওর কি দোষ , ভেবে পাইনা। 

আমি তো  পুরুষ যাই হোক পেটের ধান্ধায় থাকতে হয়। একটু স্বচ্ছলতার আশায় আমার এক ধর্ম খালাত ভাইয়ের চাকরীর তদবির করার চেষ্টা করছিলাম। আমার সেই খালাতো ভাই আমাদের খুলনার বাড়িতে গিয়ে আমার আম্মার কাছে বিষয়টি জানাতে চায়। এবং তখন আমার আম্মা আমাকে ফোন দেয়। জান্নাত দেখলো যে আম্মা ফোন দিয়েছে তারপরও আমাকে জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে। আমি সরল মনে সত্যিটা বললাম। 

জান্নাত আমার কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো- শুরু করলো আজে বাজে বিশ্রি কথাবার্তা বলতে। আমার তখন মনে হচ্ছিলো ওকে টেনে ছিড়ে ফেলি। মা খালা নিয়েও বাজে কথা বলতে একটু বাঝে না। 

আমি শুধু বলেছিলাম - জানোয়ারের বাচ্চা আর একটা কথা বললে তোর কান ফাটিয়ে ফেলবো। তুই তোমা মার কাছে ভালো শুনে দেখ, তুই কোন বৈধ সন্তান না। কোন বাবা মার কোন বৈধ সন্তান এমন কথা বলতে পারেনা। বলে অন্য রুমে চলে গেলাম। মেয়েটা আমার পিছন পিছন আসলো এবং ছোট ছোট করে আমাকে বলছে- আব্বু এসব কথা বলতে হয় না। এগুলো বাজে কথা সরি বলো।

আমি মেয়েকে কোলে তুলে নিলাম। আদর করে চুমু দিয়ে বললাম । ওকে আব্বু সরি।

এই শিশুর কাছ থেকেও যে শিক্ষা নেয়ার আছে সেটা বুজতে ওর কষ্ট হয়। মানুষ হলে অবশ্যই সুধরে যেতো। এখনো যখন সুধরায়নি তখন...............................................

Sunday, March 20, 2022

এটা কি জীবন ?

 


শুনেছি বা দেখেছি পুরুষ বা নারী বিবাহের পর তাদের জীবনে শুধু সঙ্গী বা সঙ্গীনা নয় । অনুপ্রেরনা ও উৎসাহের একটা বড় জায়গা হয়। কিন্তু আমার বেলায় পুরোটাই উল্টো। 

বিয়ের পর থেকে আমার জীবনে উন্নতির সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে বললে ভূল হবে। বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সে আমার স্ত্রী নয় তো যেন আমার জীবনধ্বংস কারীনি।শুনতে খারাপ শোনা গেলেও এটাই সত্য।

আমার ইনকাম আমাকে খাওয়াতে কষ্ট হয়। আমার আয়ের ১০ টাকা থেকে ২ টাকা আমার বাবা মাকে দিলে ওর কলিজা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তাও প্রতিদিন বা প্রতিমাসে নয়, দেখা যায় ছয়মাস বা একবছরে একবার । যেমন আব্বা মারা যাবার পর পেনশনের টাকা পেতে দেরি হচ্ছে দেখে আম্মাকে ২০০০ টাকা দিয়েছিলাম। তার জন্য কতো কি শুনতে হলো। অথচ ঈদের দুই মাসে আগে থেকে প্লান করতে থাকে আমার ছোট ভাইকে এবার ১০০০ টাকা দিতে হবে। ও বড় হয়ে গেছে। এখন ৫০০ টাকা দিলে মানসম্মানে লাগে।

আমি কি কাজ করি , কখন বাসায় ফিরি সব কিছু জান্নাতের জানা। তারপরও প্রতিদিন রাত ৯টা বাজতেই কখন বাসায় আসবা। এখনো অফিসে কি করো। সপ্তাহে দুই একদিন একটু আগে আগে আসা যায় না। এই  একই কথা প্রতিদিন শুনতে হয়। 

আমি বুঝিয়েছি কয়েকশত বার যে, আমি তো পরের চাকরী করি। তারা ছুটি না দিলে কিভাবে আসবো। তুমি তো জানো। 

আমি প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯ টায় অফিসে আসি। দুপুর ২ টা বা আড়াই টার দিকে বাসায় লাঞ্চ করতে যাই। কোন কোন দিন যেমন সপ্তাহে ১ দিন বা মাসে ৪/৫ দিন হঠাৎ জরুরী মিটিং বা কাজ থাকলে  একবারে রাতে বাসায় ফিরি। কিন্তু প্রতিদিনের রুটিন হলো ২ টায় লাঞ্চ করতে যাওয়া, লাঞ্চ করে ৫ টা বা সাড়ে ৫টার মধ্যে আবার অফিসে ফিরে আসা। তারপর যতক্ষন বস অফিসে থাকে ততক্ষন অফিসে থাকতে হয় রাত ১০টা বা ১১ টা।  

সকালে  ৯ টা বা সাড়ে ৯ টার দিকে বাসা থেকে বের হলে অফিসে আসতে আসতে ১০ টা বেজে যায়। দুপুর ১২টার দিকে জান্নাত ফোন করবে।  প্রতিদিন একই বুলি আমার ভালো লাগেছে না। মনটা খুব খারাপ লাগেছে। রাস্তা দিয়ে কতো মানুষ যাচ্ছে আমার ঘরের মধ্যে বন্দি থাকতে মন চাচ্ছে না। তুমি আমাকে একটুই সুখ দিতে পারলে না। সেই একমাস আগে একবার ঘুরতে বের হয়েছি আর এই একমাস ধরে ঘরের মধ্যে পচে মরছি। আরো কতো কি যা ভাষায় বলার মতো না।

তারপর দুপুরে লাঞ্চ সেরে অফিসে আসার পর ৬টা সাড়ে ৬ টার দিকে জান্নাত আবার ফোন দিবে। আমার ভালো লাগেছে না। মনটা খুব খারাপ লাগেছে। রাস্তা দিয়ে কতো মানুষ যাচ্ছে আমার ঘরের মধ্যে বন্দি থাকতে মন চাচ্ছে না। তুমি আমাকে একটুই সুখ দিতে পারলে না। সেই একমাস আগে একবার ঘুরতে বের হয়েছি আর এই একমাস ধরে ঘরের মধ্যে পচে মরছি। আরো কতো কি যা ভাষায় বলার মতো না।

আবার রাত ৯ টা থেকে সাড়ে ৯ টা বাজলেই একই সুর-আমার ভালো লাগেছে না। মনটা খুব খারাপ লাগেছে। রাস্তা দিয়ে কতো মানুষ যাচ্ছে আমার ঘরের মধ্যে বন্দি থাকতে মন চাচ্ছে না। তুমি আমাকে একটুই সুখ দিতে পারলে না। সেই একমাস আগে একবার ঘুরতে বের হয়েছি আর এই একমাস ধরে ঘরের মধ্যে পচে মরছি। আরো কতো কি যা ভাষায় বলার মতো না।

আমার সামনে মানুষ বসা থাকে তাই কোন উত্তর দিতে পারিনা। কিন্তু কেমন নিজের অজান্তেই চোখ থেকে জল গড়িয়ে আসতে চায়। এ কি যন্ত্রনা। এটা মানুষ নাকি ..............................অন্য কিছু। 

ঘরে ডুকলেই শুরু করবে টাকা পয়সা নাই। কিভাবে সংসার চলবে ? ভবিষ্যত কি ? ইত্যাদি 

আবার আমি চাকরীর পাশাপাশি বাইরে কিছু করবো তারও উপায় নাই। একটা চাহিদা পুরন করলে আরেকটা এনে হাজির করে। ঘ্যান ঘ্যান করতেই থাকে। আমি ভালোবেসে ওকে জান্নাত নাম দিয়েছিলাম কিন্তু এই পাঁচ বছরে ওর এবং ওর পরিবারের অত্যাচারে আমি এতোটাই অতিষ্ট যে, জান্নাতকে ছুয়ে দেখতেও আমার ঘৃনা লাগে। ওর কাছে গেলে আমার কোন অনুভূতি জাগে না। মন থেকে ভালোবাসার কোন সায় পাই না। যা করতে হয় সংসারের শান্তির জন্য নিজের উপর জোর করে করতে হয়।

জান্নাতের ডায়াবেটিস আছে তাই যে কোন কারনেই শরীর খারাপ হতেই পারে। কোন রকম একটু খারাপ লাগলেই শুরু হয়ে যাবে- আমি তো মানুষ না । আমার কোন দাম নাই । গাধার মতো খাটতে খাটতে শেষ হয়ে যাচ্ছি। একটু ডাক্তারের কাছে নেয়ার ও প্রয়োজন মনে করোনা। আমাকে তুমি আসলে ভালোবাসোনা তোমার মনের মধ্যে অন্য কেউ। ইত্যাদি ইত্যাদি  যা শুনলে কোন সুস্থ মানুষ স্থির থাকতে পারে না। কতোরাত চুপচাপ বিছানা ছেড়ে উঠে এসে পাশের ঘরে বসে বসে মশার কামড় খেয়েছি ,তবুও জান্নাতের পাশে ঘুমাতে যেতে ইচ্ছা করে না।  সপ্তাহে দু একবার আরামের বিছানা ছেড়ে পাশের ঘরে ফ্লোরে এসে শুয়ে মাশার কামড়ে রাত কাটিয়েছি। সকালে উঠে না খেয়ে অফিসে চলে এসেছি। 

 এটা কি জীবন ?

আমার বাচ্চার মতো এমন শান্ত বাচ্চা আমার দেখা দ্বিতীয়টা নেই। তারপরও সপ্তাহে দুই  একবার জান্নাতের কাছ থেকে আমার শুনতে হয় - তোমার মেয়ে চরম বেয়াদপ হয়েছে। আমাকে প্রচন্ড জ্বায়ায় মন চাচ্ছে গলাটিপে মেরে ফেলি। জান্নাত যখন এই ধরনের হাজার কথা বলে তখন আমার বুকের ভেতরটা কেপে ওঠে। কি যে করবো ভেবে পাইনা। কোন উত্তর দেবার ভাষা থাকে না। যে উত্তর দেয়া দরকার তা দিতে পারছি না। কারন মেয়েটা ছোট, মাত্র ২ বছর।

শুধু সন্তানের জন্য

 আমি চরম অসহায়। জীবন যুদ্ধে যার সাথে মাঠে নেমেছি  সেই আমার প্রতিদ্বন্দি। সে আর কেউ নয় আমার স্ত্রী। কেন বলছি কারন, আমার আয় করা টাকা থেকে বছরে...