১০ই সেপ্টম্বর ২০২১ অফিসে থেকে বাসায় ফিরে দুপুরে খেতে বসেছি। হঠাৎ জান্নাত বললো - তোমার মা আমার সাথে বেয়াদবী করেছে। সে বেয়াদব।শুনেই আমার রক্ত টগবগ করে ফুটে উঠেছে। নিজেকে সামলে নিয়ে , কষ্টটা বুকের ভিতর চাপা দিয়ে । নরম শুরে বললাম-একথা কিভাবে বলো তুমি। মুরব্বিদের সম্পর্কে এমন কথা বলা কি উচিত।
জান্নাত রাগান্বিত স্বরে- বললো কি বলবো, জানো এক বিয়ে বাড়ি গিয়ে আমাকে একটা মেয়েকে দেখিয়ে উনি বলেছিলো । দেখো বউ - এই মেয়ের মা , এর জন্য - জাহিদীর সাথে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো। একথা বলে, ঐ মেয়েকে দেখিয়ে আমাকে অপনাম করা হযেছে। আমাকে ছোট করা হয়েছে।
আমি বললাম দেখো এটা অতি স্বাভাবিক ব্যাপার। যেকোন বাবা-মা ছেলে মেয়েকে নিয়ে এমন কথা বলতেই পারে এটা কোন মান অপমানের কথা না।
জান্নাত-ও তোমার তো মা, তাই তার কোন কথাই তোমার খারাপ লাগে না। আমি তো পরের মেয়ে তাই আমার কথা খারাপ লাগে।
আমি বললাম- তুমি যা বলছো , ঠিক বলছো না। ভালোভাবে কথা বলো।
জান্নাত-আমি তোমার আপন নাকি উনি তোমার আপন।
আমি বললাম -আজব কথা, আমার মা সে আমার পর, আর তুমি আমার আপন। যে মেয়ে বা বউ স্বামীর বাবা-মা নিযে এমন বাজে মন্তব্য করে এবং তাদের সম্মান দিয়ে কথা বলতে জানেনা সে মেয়ে কোন বৈধ বাব-মার সন্তান হতেই পারেনা।
আমি আর কোন কথা বললাম না। এভাবে রাত কেটে গেলো।
যে বিয়ের কথা জান্নাত বলছে সেই বিয়ে আনুমানিক ২ বছর বা তার আগের ঘটনা। আমি ঠিক বুঝলাম না সেই কথা এখন তুলে সংসারে অশান্তি করার কি মানে আছে। সম্ভবত অশান্তি করার একটা ইস্যু ..............।
আরেকটা কথা আমার বাবা-মা নাকি ওকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিয়েছ। বিষিয়ে দিয়েছে ওর জীবন।এখানে কথা হলো ও আমার বাব-মার সাথে একত্রে ২মাসও এক ছাদের নিচে থাকেনি। তাহলে তারা কিভাবে তাকে জ্বালা যন্ত্রনা দিলো। আমি ওর ফোনে অটো কল রেকর্ড করে রেখেছিলাম । যেখান থেকে কিছু কথা শুনে পরিস্কার জানতে পারি ও এবং ওর পরিবার মিলে প্রতিনিয়ত মিথ্যা কথা সাজায়ি থাকে যা কখনো কোন দিন ঘটেনি।
সকালে উঠে কোন কথা না বলে কোন রকম নাস্তা সেরে অফিসে চলে এলাম। আনুমানিক ১২টার দিকে জান্নাতের ফোন পেলাম। ফোন রিসিভ করতেই ও বললো কোথায় ?
আমি বললাম অফিসে।
জান্নাত- আজকে বাসায় আসবা না। বাসায় এলে তোমাকে খুন করবো। মেয়েকেও খুন করবো। আরো অনেক বিশ্রি বিশ্রি গালিগালাজ, তু্ই তোকারি করতে লাগলো। আমি চুপ করে শুনতে লাগলাম। অফিসে আছি কোন উত্তর ও দিতে পারছি না। মানসম্মান ঠোটের আগায়।
সবশুনে জানলাম আমাদের বিয়ের আগে ২০১৬ সালের ফেব্রুুয়ারী মাসে সম্ভবত আমার ফেসবুক আইডি থেকে একটি মেয়ের ছবি শেয়ার করা আছে। আর এজন্য ২০২১ সালের ১১ সেপ্টম্বর এসে আমার ঘরের মানুষের কাছে অপমানিত হতে হলো। আমি কাদবো নাকি , আত্মহত্যা করবো বুঝতে পারছি না। কষ্টে বুকটা চৌচির হয়ে যাচ্ছে। চোখ দুটো ছলছল করছে, নিজেকে চরমভাবে ঘৃনা হতে লাগলো। এমন সময় কি ভেবে মাথায় এলো ইভার নাম। ইভা হলো জান্নাতের ফুফাতো বড় বোন। তাকে কোন ঘটনা না বলে বাসায় আসার অনুরোধ জানালাম। প্রথমে সে অস্বিকার করলেও পরে রাজি হলো এবং আমার বাসায় এলো।ইভা আপা জান্নাতের কাছ থেকে সবঘটনা শুনলো, আমি ইভা আপাকে রেকর্ডিং শুনালাম। সে সব বুঝে জান্নাতকে দুই তিন ঘন্টা ধরে বুঝালো, বুঝানোর সারমর্ম ছিলো এমন, জান্নাত তুই এই সকল ফালতু বিষয় নিয়ে সংসারে অশান্তি করিস কেন ?
জান্নাত নানাভাবে ঘুরিয়ে পেচিয়ে ইভা আপাকে কনভেন্স করার চেষ্টা করলো কিন্তু । ইভা আপা মন্দকে মন্দ ভালোকে ভালোই বলতে লাগলো।
পরক্ষনেই আমি কি যেন মনে করে ইভা আপাকে বললাম, আপা ও আমাকে এতো সন্দেহ করে কেন ? কোনদিন আমার কোন সমস্যা ওর চোখে পড়েছে , শোনেন তো । এবং ওর মোবাইলটা একটু দেখেন।আমার মোবাইল ও সবসময় ঘাটাঘাটি করে , আমি তো কখনো ওর মোবাইল ছুয়েও দেখি না। আজকে আমি আপনার সামনে ওর মোবাইলে দেখতে চাই। অনেক জোর কারার পর ইভা আপা বললো , দেখি তোর মোবাইল দেখা। প্রথমে দেখাতে চাইলো না , পরে ইভা আপার হাতে ওর মো্বাইলটা দিলো। ইভা আপা মোবাইল হাতে নিয়ে বললো আমি তো এসব বুঝি না। তখন আমি ইভা আপার হাত থেকে মোবাইলটা নিলাম । ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ড়ুকেতো আমার চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিলো না। দশ তেকে বারো জনের সাথে বিভিন্ন আপত্তি কর কথা বার্তা। ইভা আপার মুখ থেকে কোন কথাই বের হচেছ না। আমি মেসেঞ্জারের কথা পড়ে শুনাচ্ছি আর ইভা আপা শুনছে। একপর্যায়ে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে , উঠে জান্নাতকে মারধর শুরু করলাম। ইভা আপা থামাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। আমি রাগে ক্ষোভে ওকে যথেষ্ট মারধর করি। মোবাইলটা ঘরের ফ্লোরে আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেলি। ইভা আপার অনুরোধে তারপর আমি ওকে আর কিছু না বলে চুপচাপ থাকি। এবং ইভা আপা ওকে ওর বাড়ি নিয়ে যেতে চায় আমি প্রথমে রাজি না হলেও পরে বলেছে, নিয়ে যান ওকে আমি আমার চোখের সামনে দেখতে চাই না।
ইভা আপার সামনে আমাকে ধোকাবাজ, লুচ্চা, বাটপার, বেঈমান বলে গালি দিয়েছিলো, অবশেষে প্রমান হয়ে গেলো জান্নাত কতোবড় মাপের মিথ্যাবাদী। শুধু জান্নাত নয় ওর পরিবারের সবাই প্রচন্ড মিথ্যা কথা বলে।
ইভা আপা আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বললো, ভাইয়া এটা শুধু হায় হ্যালো করেছে, প্রেম করেনি।
আমি বললাম এটা যদি হায় হ্যালো হয় , .............................
আমি অমানবিক নির্যাতন ও যন্ত্রনা সহ্য করছি শুধু আমার মেয়েটার মুখের পানে চেয়ে। আমি যদি কোন বড় সিদ্ধান্ত নিতে যাই । মেয়ের মুখটা চোখের সামনে ভাসে।ভাবি মেয়েটার ভবিষ্যত অন্ধকার হযে যাবে।আমার ত্যাগ তিতিক্ষা দুর্ভোগ,কোন কিছুই মেযেটা জানবে না। আমাকে ভূল বুজবে সারা জীবন। এক কথায় মেযেটাকে অনিশ্চিত ভবিষ্যেতের দিকে ঠেলে দেয়ার কথা আমি ভাবতে পারিনা। তাই নিরবে একা একা চোখের জল ফেলা চলেছি। .............................................................................................
জান্নাতের পরিবার যে কিছু জানেনা তা নয় , ওরা সবাই জানে যে উনাদের মেয়ে এমন বাজে ব্যবহার করে। কিন্তু কখনো তারা তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি। জান্নাতের বাবাকে যদি ওনার মেয়ের ব্যাপারে বলা হয় তাহলে উনি বলে আমি মেয়ের ত্যাজ্য করে দিয়েছি, আমার মেয়ে আমার কাছে মরে গেছে। তোমার যা ভালো লাগে করো। আমি যখন বলি আপনি ঢাকায় আসেন দেখে যান কি করে , কি করছে। তখন উনি বলে আমার দাতে ব্যাথা ,আমি খুব অসুস্থ। কালকে ডাক্তার দেখিয়ে এসেছি ইত্যাদি ইত্যাদি। কোন সমস্যা হলেই উনি প্রতিবারই একই রকম কথা বলেন। অথচ কিছু দিন আগের উনার মেয়ের পক্ষ নিয়ে আমাকে আমার পরিবারকে যানা তাই বলেছেন।