Tuesday, December 21, 2021

মরে যেতে ইচ্ছা করে প্রতিটি মূহূর্তে


 বাচার কোন ইচ্ছা বা স্বাদ নাই। যতটুকু ছিলো তাও শেষ হয়ে  গেছে আব্ব মারা যাবার পরে। কারন, ভাবতাম আমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে হয়তো অসুস্থ আব্বাকে আর বাচানো যাবে না। তারপর আবার আত্মহত্যা মহাপাপ।সর্বপরি সকলের উদ্ধে আমার মেয়ের মুখটা জ্বলে ভেজা চোখের সামনে ভাসে। 

কিন্তু বউ নামক এই  মানুষটার অত্যাচার আর সহ্য  হচ্ছে না। 

১৫.১২.২০২১ দিনগত রাত। তখন ঘড়ির কাটায় ৩টা বাজে। সবাই ঘুমিয়ে, আমার মতো কিছু হতভাগা ও নির্যাতিত পুরুষ ছাড়া। এদের জন্য সকাল থেকে রাত অবধি খেয়ে না খেয়ে মানুষের বকাঝকা শুনে। চুপটি মেরে থাকি শুধু মাত্র এই এর মুখে হাসি ফুটানোর জন্য।অথচ এর তা বুঝতেই চায় না। জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে একে সুখে রাখার চেষ্টা করি।

আর এই কিনা আমার রাতের ঘুমটাও , ‍ঘুমাতে দেয় না। নিজেদের কি মনে করে এক আল্লাহ ভালো জানে।

প্রতিদিনের মতো সুন্দর ভাবে রাতের খাওয়া শেষ করে মেয়েকে কোলে নিয়ে ঘুমাতে গেলাম। ঘুম ভাঙ্গলো জান্নাতের গলা শুনে। মেয়েকে বকছে তোর জ্বালায় একটু ঘুমাতেও পারবো না ? তোকে পেটে ধরে আমার সুখ শান্তি সব শেষ হয়ে গেছে। একটা বাড়া পেটে ধরছি, জীবনটাই শেষ হয়ে গেছে। নরক যন্ত্রনা ভোগ করছি ইত্যাদি ইত্যাদি ।

আমি শোয়া থেকে পাশ ফিরে আস্তে করে বললাম -মাঝরাতে কি শুরু করলা তুমি।অবলা নিশ্পাপ বাচ্চাটাকে সব সময় এমন আজে বাজে কথা বলো, কি সমস্যা তোমার ? এটা কি কোন মানুষের ব্যবহার ?

জান্নাত খেকিয়ে উঠলো আমার উপর-তোমার কি সমস্যা ?

এতোরাতে মানসম্মানের ভয়ে চুপচাপ থাকলাম। ভীতরটা দাউ দাউ করে জ্বলছে, চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।  এসব কি একদিন , দুদিন পর পর। কোন সিদ্ধান্ত নিতে গেলেই মেয়ের মুখটা চোখের সামনে ভেসে আসে। ওরাও এই দুর্বলতা কাজে লাগিয়েই যা না তাই করে। মানুষকে মানুষ হিসাবে মনে করেনা। এগুলো পরিবারের কু-শিক্ষা। যা সমাজ পরিবার ভেঙ্গে তছনছ করে দিচ্ছে। মানুষকে প্রতিনিয়ত মরন যন্ত্রনায় পতিত করছে। 

আমার শুধু মেয়েটাকে নিয়ে ভয় হয়। সারাক্ষন মেয়েটাকে যেভাবে বিশ্রি ভাষায় কথা বলে কোন , শালীন , ভদ্র পরিবারের মা, তার সন্তানের সাথে এমন ব্যবহার করে কিনা আমার জানা নাই।

কথায় আছে বোবার শত্রু নাই। কিন্তু এক্ষেত্রে পুরোটাই উল্টো। চুপ থাকলেও নিস্তার নাই। প্রতিনিয়ত এমন পরীক্ষায় পতিত হচ্ছি যে, কতোক্ষন উত্তর না দিয়ে থাকবা। কখন যেন মুখ ফসকে কি বের হয়ে যাবে, শুরু হবে ঝগড়া তাই আস্তে  করে বিছানা ছেড়ে বারান্দায় গিয়ে বসলাম। যদিও শীতের রাত , শীতের কষ্ট ও মশার কামড় উপলব্ধি হচ্ছে না। শুধু আল্লাহকে বলছি আল্লাহ আমার বাচ্চাটাকে তুমি রক্ষা করো, হেফাজত করো। আর ওর মাকে হেদায়েত দান করো। 

ওর এই অত্যাচারে আমি কয়েকবার অত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছি। সেটা কি ও ভূলে গেছে,  নাকি আমার মৃত্যূই ওর কাম্য। তা না হলে দুদিন একদিন পর পর কেন এমন করবে। 

মেয়েটা জোরে চিতকার করে কেদে উঠলো। আমার ভীতরটা কেমন যেন হয়ে গেলো। দৌড়ে ঘরে গেলাম, ভাবলাম মেয়েটার গলা টিপে ধরলো কিনা। ওর পক্ষে কোন কিছুই অসম্ভব নয়। মানুষ হলে তো অশান্তিই করতো না। আমি দেখলাম মেয়ে শুয়ে কাদছে আর ও পাশে বসা। মশারি উচিযে আমি মেয়েটাকে কোলে তুলে নিলাম। এই পর্যন্ত আমি সব শুনে যাচ্ছি কোন কথার উত্তর দিচ্ছি না। আমি মেয়েকে কোলে করে আমার কাধে মেয়ের মাথা রেখে ঘুম পড়ানোর চেষ্টা করছি আর বলছি , আম্মু কি হয়েছে কাদছো কেন ? ভয় পেয়েছো ? কোন ভয় নাই  ইত্যাদি ইত্যাদি ।

ওদিকে জান্নাত আমার আশপাশ দিয়ে ঘুরছে আর বিড়বিড় করে গালিগালাজ করছে যা , আমি পরিস্কার শুনতে পাচ্ছি। 

আমার সহ্য হলোনা। আমার ডান কাধে মেয়ে। তাই বাম হাত দিয়ে মারলাম কয়েকটা থাপ্পড়। থাপ্পড় খেয়ে খাটের উপর পড়ে গিয়ে বলে আমায় আর মারিশ না, আমায় মাফ করে দে, আর এমন করবো না। আমায় মাফ করে দে এমন ভাষা যাখন ছাড়লো তখন আরো দটো মারলাম। তখন আমার মনে হলো কতোটা দুষিত রক্তের  জন্ম হলে এমন ভাষা ব্যবহার করে এবং প্রতিনিয়ত কোন কারন ছাড়াই সংসারে অশান্তি করে। 

পরক্ষনেই দেখি জান্নাতের ঠোটে কিঞ্চৎ রক্ত। বুঝলাম দাতের সাথে লেগে ঠোট কেটে গেছে। খুব খারাপ লাগলো। জান্নাতকে কাছে টেনে বললাম-সরি। তুমি যা শুরু করেছিলে আমি নিজেকে সামলাতে পারিনি। 
 

No comments:

Post a Comment

শুধু সন্তানের জন্য

 আমি চরম অসহায়। জীবন যুদ্ধে যার সাথে মাঠে নেমেছি  সেই আমার প্রতিদ্বন্দি। সে আর কেউ নয় আমার স্ত্রী। কেন বলছি কারন, আমার আয় করা টাকা থেকে বছরে...