Tuesday, January 4, 2022

নতুন বছর-২০২২



 দিনটি ছিলো ৩১ ডিসেম্বর ২০২১। ৫দিন আগে থেকেই অফিসের প্রোগ্রাম সেট করা কিশোরগঞ্জ যেতে হবে।কারন আমার বস ওখানে একটি ছোট অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।ঢাকা থেকে ১০ জন যাবে তার মধ্যে আমিও। আমি বলেছিলাম যদি দিনে দিনে চলে আসা যায় তাহলে আমি চেষ্টা করবো। 

পারসোনাললি আমার যাওয়ার কোন ইচ্ছাই ছিলোনা। বসকে কয়েকবার বোঝাতে চেষ্টা করেছি যে, আফিসে জরুরী কাজ আছে আমি ঢাকায় থাকি। ফ্যামিলির অজুহাত দিলে , আমার ফ্যামিলি তার কাছে ছোট হয়ে যাবে তাই নানানভাবে বোঝাতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু অফিসের কাজ সস্পর্কে  বসের থেকে ভালো কে জানে ?

রওনা দেয়ার ১০ মিনিট আগেও একবার বলেছি। কিন্তু বস বললেন তুমি আসো । তুমিতো আর থাকছো না। যে গাড়িতে আসবে সেই গাড়িতেই রওনা হয়ে চলে যাবা। কোন ঝামেলা নাই।আমার কোন রকম যাওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও একপ্রকার বাধ্য হয়েই রওনা হতে হলো। আমার না যাওয়ার মূল ইচ্ছাটাই ছিলো পরিবারের জন্য। 

যাইহোক   হায়েস গাড়ি । আমরা ৭ জন । গাড়ি চলছে বেশি কিছুদুর যাওয়ার পর জান্নাতের ফোন। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে তুমি কোথায় এখন ?

আমি বললামা গাড়িতে। 

তুমি যাচ্ছো তাহলে। যাও এসে আমাকে মরা পাবে। আমি গলায় দড়ি দিবো। মেয়েকেও খুন করবো। তোমার যা ইচ্ছা তাই করো। বলেই ফোন কেটে দিলো। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার আত্মসম্মান লুটিয়ে পড়লো ধুলোয়।কারন ফোনের কথা শুনে ফেলেছে পাশে থাকা কেউ কেউ। সবাই আমার দিকে কেমন যেন তাকা্চ্ছে। তারপরও আমি আবার ফোন দিলাম দেখলাম জান্নাতের ফোন বন্ধ। পুরো রাস্তাতে কয়েকবার ট্রাই করেছি। ফোন বন্ধই পেয়েছি। আমি তো ফুর্তি করতে যাচ্ছি না , এটা তো অফিসের কাজ। তারপরও কেন ? 

বাসায় না আসা পর্যন্ত আমি ছিলাম অস্তির। কিভাবে চাকরী করবো ? প্রতিনিয়ত পরিবার কোন কারন ছাড়াই এমন করে 

সবাই খুব হাসি-খুশি । একটা নতুন জায়গায় যাচ্ছে। গল্পগুজব করছে কতো কি। কিন্তু আমার ভীরটা অবাধে রক্তক্ষরন চলছে। সারাটা দিন সবার সাথ হাসিমুখে কথা বললেও আমার ভীতরটা ‍গুমরে কাদছিলো। মানুষের স্ত্রী কামনা করে , স্বামী যেখানেই যাক ভালো ভাবে সুস্থভাবে বাসায় ফিরে আসুক। আর আমার স্ত্রী আমাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। 

বিকার সাড়ে ৪টার দিকে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ঢাকায় পৌছালাম রাত ৯টায়। মেযের জন্য সামান্য কিছু খাবার কিনে বাসায় ফিরে । নিজের মতো করে খেয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে বসে রইলাম। মেয়েকে নিয়ে মজা করছি। রাত ১২ টা বাজেতেই । নতুন বছরের আনন্দে আতশবাজির শব্দ হতে লাগলা খই ভাজার মতো ।আকাশ ঝলমল করতে লাগলো। আমি উৎফুল্ল হয়ে জান্নাতে একবার এপাশে আরেকবার ওপাশে দেখতে বললাম। জান্নাত আমার উপর খেকিয় উঠলো। আমি কোন উত্তর না দিয়ে চুপচাপ মেয়েকে নিয়ে বসে রইলাম। মেয়েকে আতশবাজির ঝলমলে আকাশ দেখাতে লাগলাম। জান্নাত চিৎকার করে মেয়েকে ডাকতে লাগলো-এই এদিকে আয় , ঘুমাতে হবে। আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেলো, একটা যন্ত্রনা হইছিস আমার পেটে। বুক ফেটে কান্না আসছিলো , রাগে ক্ষোভে শরীর যেন থরথর করে কাপছিলো। তবুও চুপ করে নিজেকে সামাল দিয়ে, ঘরের এক ছোফায় বসে রইলাম। 

এভাবে দুদিন কাটলো । আমি খুব বেশি জরুরী না হলে জান্নাতের সাথে তেমন কথা বলিনা। কি আর বলবো ?


০২ জানুয়ারী ২০২২। অফিসে সন্ধ্যায় সেন্ডুইজ নাস্তা দিলো। নাস্তাটা দেখেই জান্নাতের কথা মনে হলো। ও খুব পছন্দ করে। আমি না খেয়ে কৌশলে প্যাকেট করে রাখলাম। বাসায় আসার সময় ভাবলাম , এটা দেখে হয়তো খুশি হবে। কিন্তু বাসায় ফিরে পোড়া মুখ দেখতে হলো। কপাল কুচকিয়ে, দাতে দাত লাগিয়ে কেমন এক ভাব। যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

কোন কথা না বলে ,কাপড় সেরে খেতে বসলাম । মেয়ে বার বার আমার কাছে আসার চেষ্টা করছে , আর ধমক দিয়ে বলছে ঘুমা , না হলে আছাড় দিয়ে নাড়ি বের করে দিবো। ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমি মেয়েকে শান্ত করার জন্য বললাম-আম্মু কম্বলের নিচে শুয়ে থাকো, বাইরে খুব ঠান্ডা। আমি ভাত খেয়ে তোমার কাছ আসছি। মেয়ে চিতকার করে বলল-আমিও ভাত খাবো।

তখন আমি মেয়েকে বিছানা থেকে কোলে করে নিয়ে আমার পাশে বসিয়ে ভাত  দিতে লাগলাম। এভাবেই সেদিন কাটলো। 

০৪ জানুয়ারী ২০২২। অফিসের কাজে খুব ব্যস্ত। আমার উপর দিয়ে কতোটা চাপ যাচ্ছে। আমি অফিসে  কতোটা বিপদে আছি জান্নাত ভালো করেই জানে। বসেরা এখন আমাকে কেউ আগের মতো স্নেহ করেনা। এর কারনও জান্নাত । কেন বলছি সেটা হলো প্রতিনিয়ত যদি মাথায় এমন পারিবারিক নির্যাতন থাকে, যন্ত্রনা থাকে তাহলে অফিসের কাজে কেমন করে মন বসবে। একের পর এক ভূল হতে থাকে। যা আমার অবস্থানকে নড়বড়ে করে ফেলেছে। আমার ক্যারিয়ার জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে। জান্নাতকে সবই বোঝানো হয়েছে। তারপরও ৫টা বছর ধরে একই মানষিক যন্ত্রনা। জানিনা কতোদিন সহ্য করতে পারবো। কয়েকবার জান্নাতের সামনেই আত্মহত্যা করার চেষ্টাও করেছি তারপরও জ্ঞান হয়না। 

দুই,তিনবার ফোন দিয়েছে জান্নাত। কাজের ব্যস্ততায় এবং আশেপাশে বেশি মানুষ থাকায় ফোন ব্যাক করিনি। ৩য় বার রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে জান্নাত- আমার ভালো লাগছে না তাই ফোন করলাম। 

আমি বললাম কেন কি হয়েছে ?

জান্নাত বলল মনটা ভালো লাগছে না। মনের ভিতর কেমন কেমন করছে। 

আমি আস্তে করে বললাম - একটু পরে ফোন দিচ্ছি। আমি জরুরী কাজ করছি।কাজের থেকে বড় কথা পাশে মানুষ আছে। একটু ফ্রি হয়ে ফোন দিচ্ছি।

জান্নাত বললো- এই অজুহাত আর কতকাল ‍শুনবো। 

আমি বললাম এটা কোন কথা বলার ভাষা না। অফিসে মানুষ থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক। অফিস কি আমার একার ?

জান্নাত আবার বলল- জানি, এসব তোমার ফোন রাখার অজুহাত। 

কথাটা শুনে খুবই খারাপ লাগলো, তাই কোন কথা বলে ফোন কেটে দিলাম।

এক মিনিট যেতে না যেতেই আবার জান্নাতের ফোন, রিসিভ করলাম না। বারবার ফোন দিয়েই যাচ্ছে। 

আমার আত্মসম্মান আর কতো নিচে নামারে ওর এই অত্যাচার শেষ হবে ?

 আমাকে কতোটা নিশ্বেস করে ও শান্ত হবে ?

হয়তো আমার শরীরে প্রান যেদিন প্রান থাকবেনা সেদিন ওরা বুঝবে। 

এতো যন্ত্রনার পরে কিভাবে একটা মানুষ ভালো কথা বলে, মন খুলে হাসে আমি জানিনা। অফিসেতো বাধ্য হয়েই সব লুকাতে হয়। 

রাতে বাসায় ফিরলাম মেয়ের জন্য আমসত্ব ও রান্নার তেল নিয়ে। দেখেলাম ছোলা মুড়ি বানিয়েছে। না খেলে কি না কি হয়ে। তা্ খেলাম। ছোলা মুড়ি খেয়ে সেই যে, মোবাইল নিযে বসেছে , আর কোন খেয়াল নাই। আমি যদি মোবাইল নিয়ে এমন ১০ মিনিট থাকতাম তাহলেই আমার জাতি বেজাতি শুরু হয়ে যেতো।

আমি নিজে ভাত নিয়ে খেতে বসলাম। খেতে খেতে বললাম -চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে, ১০/৫ কেজি করে না কিনে , একবস্তা চাল কিনে রাখতে হবে। 

জান্নাত উত্তর দিলো বেতন পেয়েছো তো টাকা খরচ করার জন্য কামড়াচ্ছে। 

আমি এক নজর ওর দিকে তাকিয়ে আর কোন কথা বললাম না। চুপচাপ খেয়ে শুয়ে পড়লাম। রাত ৩টার সময় মোবাইলের টুংটাং শব্দে পাশ ফিরে দেখি জান্নাত মোবাইল চালাচ্ছে। দেখে মনে হলো চ্যাট করছে। সেকেন্ডে সেকেন্ডে টুংটাং শব্দ শুধু চ্যাট করলেই হয়।
এটা যদি আমি করতাম তাহলে হয়তো ঘর ছেড়েই চলে যেতো।

আমি কিছু না বলে চুপ করে শুযে রইলাম। বেশকিছু ক্ষন পর আমি দেখছি আমার সহ্যর বাধ ভেঙ্গে যা্চ্ছে । কখন কি বলে ফেলি তাই বিছানা ছেড়ে , পাশের ঘরের সোফায় এসে বসে রইলাম। শীতের রাত। তাই ঘন্টা দুয়েক পরে  ৫টার দিকে গিয়ে দেখলাম জান্নাত শুয়ে পড়েছে। আমিও আস্তে করে নিজের কম্বল নিয়ে একপাশে শুযে রইলাম। সকালে ৮টায় উঠে গোসল করে অফিসে চলে এলাম। তখনও জান্নাত বিছানা থেকে উঠেনি। তাই সকালের খাওয়া আর হলোনা। হায়রে রিজিক। নিজে ইনকাম করে নিজেই খেতে পারিনা। 

কখনো কোন দিন কোন মেয়ের সাথে এক সেকেন্ডের জন্য কথা বলতে দেখেনি, মোবাইলে  কোন মেয়ের নাম্বারও পায়নি তাই জনে জনে বলে বেড়ায় আমি অগনিত মেয়ের সাথে পরকিয়া করে বেড়াই। মেয়েটার কথা চিন্ত করে সব মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। দিনের পর দিন বুঝালাম, গায়ে হাত তুললাম তারপরও ঠিক স্বভাব ঠিক হয় না। 

আমার দৃষ্টিকোন থেকে এর জন্য দায়ী ওর মা ( আমার শ্বাশুড়ি) । কারন ওনি ভালো হলে মেয়েকে ভালো শিক্ষা দিতেন। মেযেকে যতপ্রকার কুশিক্ষা সব ওখান থেকেই আসে। এই চরিত্রহীন অমানুষটি উনার তৈরি। 






No comments:

Post a Comment

শুধু সন্তানের জন্য

 আমি চরম অসহায়। জীবন যুদ্ধে যার সাথে মাঠে নেমেছি  সেই আমার প্রতিদ্বন্দি। সে আর কেউ নয় আমার স্ত্রী। কেন বলছি কারন, আমার আয় করা টাকা থেকে বছরে...