রমজান মাসটা মোটামুটি ভালোই কাটছিলো। জান্নাত এক হুজুরের মাহফিল শুনে বুঝতে পারলো যে, ও আমার সাথে অনেক অন্যায় করেছে। আমাকে অনেক নির্যাতন করেছে।
আমি ইফতারের পরে অফিসে আসার জন্য রেডি হচ্ছি এমন সময় জান্নাত এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেললো। আমি বললাম কি হয়েছে ? এমন করছো কেন ?
জান্নাত বললো আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি। তোমাকে অনেক যন্ত্রনা দিয়েছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও।
আমি কি বলবো ঠিক বুঝতে পারলাম না। চুপচাপ থাকলাম। আর মনে মনে বললাম আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু শুধু বুঝলে হবেনা কাজেও লাগাতে হবে।
এক সপ্তাহ পরেই জান্নাত আবার নিজের রুপে ফিরে এলো। ২০ রমজান থেকে শুরু করে দিয়েছে নানা অসৌজন্য মূলক আচরন। যেমনঃ আমরা এবার ঈদে বাড়ি যাবোনা। তুমি বেশি টাকা পয়সা খরচ করতে যেয়োনা। কারো জন্য কিছু কিনবা না। আমাদের কে কি দেয়।
বাসায় গেলেই একা একা শুরু করবে। এই একই কথা প্রতিদিন। আমি রেগে গিয়ে একদিন বললাম। আব্বা মারা গেছে ৬ মাস আগে , আম্মা বাড়ি একা। এই প্রথম আব্বাকে ছাড়া ঈদ করছে। একটাবার মানুষের মতো করে ভেবে দেখো, জানোয়ারের রুপে থাকলে কোনদিন এসব বুঝবে না।
আমি যেদিন রোজা রাখছি না, সেদিন দুপুরে বাসায় গিয়েও কোন খাবারের বন্দবস্ত নাই। ক্ষুধায় চরম খারাপ লাগে তারপরও কিছু বলি না। আমি যখন কাজে খুব ব্যস্ত থাকি তখনই জান্নাতের ফোন আসে। কোন জরুরী কথা নয়। কথা হলো কখন বাসায় আসবা, আমার একা একা মেয়েকে সামলাতে খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছে, দরাকারের সময় কোনদিন তোমাকে কাছে পেলাম না। তুমি কোনদিন আমার কোন উপকারে আসালে না। ইত্যাদি ইত্যাদি।
জান্নাতের মনে হয়, ঘরের মধ্যে থেকে শুধু মেয়েটার খেয়াল রাখবে, এটা অনেক বড় ঝামেলার কাজ। আর আমি অফিসে এসে ঘুমাই। এখনতো রমজান মাস, দুপুরে রান্নার ঝামেলা নাই। তাই এতো কথা।
প্রতিদিন জান্নাত কোন কারন ছাড়াই চিল্লাচিল্লি করতে থাকে । আমি কোন কথার উত্তর দেই না। চুপচাপ শুধু শুনি। এবং নানান কথায় টপিক অন্যদিকে নিতে চেষ্টা করি। সেখানেও বিপত্তি। জান্নাতের চিল্লাচিল্লির কেনো উত্তর দেই। টপিক কেন অন্যদিকে নিয়ে যাই।
আমি অফিসের কাজে কক্সবাজার গিয়েছিলাম ২ দিনের জন্য। তখন অনিক ( জান্নাতের ভাই ) এসেছিলো। বাসায় থাকার জন্য।
১৬ রমজানে অনিক রাড়ি চলে গেলো। আমি কতো করে অনুরোধ করলাম বোঝালাম যে ঈদের আগে রাস্তায় প্রচুর জ্যাম হবে। তোমাদের নিয়ে রাড়ি যেতে খুব কষ্ট হবে। বাস-ট্রেন কোন পরিবহনের টিকিট পাওয়া যায় না। আর অফিস কবে বন্ধ হবে ঠিক নাই। সুযোগ আছে, আমি ট্রেনের টিকিট কেটে দিচ্ছি , তুমি মেয়েকে নিয়ে অনিকের সাথে খুলনায় চলে যাও।কোন ভাবেই গেলো না।
প্রতিদিন অশান্তি সৃষ্টি করার জন্য একটার পর একটা ঝামেলা করতে থাকে। যেমন ২৪ রমজান দিবাগত রাতে আমি পাশের রুমে নামাজ পড়ছি। জান্নাত দেখেছে মন্তব্য ও করেছে যে, এতো রাতে কিসের নামাজ পড়ছে আল্রাহ ভালো জানে। তারপরও রুমের দরজা ভিতর থেকে আটকে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি নামাজ শেষ করে দরজা বন্ধ পেয়ে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। ঘন্টাখানেক সোফায় বসে থেকে আবার দরজা নক করলাম। বেশি জোরে শব্দ করতে পারছি না, লজ্জায় কারন নিচের ফ্লাটের মানুষ যদি শব্দ শোনে কি মনে করবে। তখন রাত সাড়ে ১২টা বা ১টা হবে। শব্দ অনেক দুর পর্যন্ত শোনা যাবে। বেশকিছুক্ষন পর জান্নাত দরজা খুললো। আমি কিছু না বলে , নিজের জায়গায় শুয়ে পড়লাম।
পরের দিন ইফতারের পর আমি ইউটিউবে একটা ব্যবসার ভিডিও দেখে জান্নাতকে ডাকলাম দেখো খুব ভালো একটা আইডিয়া পেয়েছি। জান্নাত আমার কাছে আসলো তখন আমি ফেসবুক চালাচ্ছি । ফেসবুকে কে বা কাহারা একটি মেয়ের ছবি পোষ্ট পড়েছে সেটা আমার স্কিনেও দেখা যাচ্ছে। শুরু হয়ে গেলো জান্নাতের ফালতু প্যাচাল-এই মেয়েটা কে ? এই সব করে বেড়াচ্ছো।
আমি যতই বোঝাতে চেষ্টা করছি যে, ততই বেশি বেশি চিল্লাচ্ছে। তখন আমারও প্রচন্ড রাগ হয়ে গেলো কারন জান্নাত প্রতিনিয়ত এভাবে আমাকে চরিত্রহীন প্রমান করার চেষ্টা করে। আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলে। যার কোন ভিত্তি নাই। তখন আমি জান্নাতকে খুব গালিগালাজ করলাম।