Wednesday, April 27, 2022

27.04.2022


 রমজান মাসটা মোটামুটি ভালোই কাটছিলো। জান্নাত এক হুজুরের মাহফিল শুনে বুঝতে পারলো যে, ও আমার সাথে অনেক অন্যায় করেছে। আমাকে অনেক নির্যাতন করেছে। 

আমি ইফতারের পরে অফিসে আসার জন্য রেডি হচ্ছি এমন সময় জান্নাত এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেললো। আমি বললাম কি হয়েছে ? এমন করছো কেন ?

জান্নাত বললো আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি। তোমাকে অনেক যন্ত্রনা ‍ দিয়েছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও। 

আমি কি বলবো ঠিক বুঝতে পারলাম না। চুপচাপ থাকলাম। আর মনে মনে বললাম আলহামদুলিল্লাহ।  কিন্তু শুধু বুঝলে হবেনা কাজেও লাগাতে হবে।

এক সপ্তাহ পরেই জান্নাত আবার নিজের রুপে ফিরে এলো। ২০ রমজান থেকে শুরু করে দিয়েছে নানা অসৌজন্য মূলক আচরন। যেমনঃ আমরা এবার ঈদে বাড়ি যাবোনা। তুমি বেশি টাকা পয়সা খরচ করতে যেয়োনা। কারো জন্য কিছু কিনবা না। আমাদের কে কি দেয়। 

বাসায় গেলেই একা একা শুরু করবে। এই একই কথা প্রতিদিন। আমি রেগে গিয়ে একদিন বললাম। আব্বা মারা গেছে ৬ মাস আগে , আম্মা বাড়ি একা। এই প্রথম আব্বাকে ছাড়া ঈদ করছে। একটাবার মানুষের মতো করে ভেবে দেখো, জানোয়ারের রুপে থাকলে কোনদিন এসব বুঝবে না।

আমি যেদিন রোজা রাখছি না, সেদিন দুপুরে বাসায় গিয়েও কোন খাবারের বন্দবস্ত নাই। ক্ষুধায় চরম খারাপ লাগে তারপরও কিছু বলি না। আমি যখন কাজে খুব ব্যস্ত থাকি তখনই জান্নাতের ফোন আসে। কোন জরুরী কথা নয়। কথা হলো কখন বাসায় আসবা, আমার একা একা মেয়েকে সামলাতে খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছে, দরাকারের সময় কোনদিন তোমাকে কাছে পেলাম না। তুমি কোনদিন আমার কোন উপকারে আসালে না। ইত্যাদি ইত্যাদি। 

জান্নাতের মনে হয়, ঘরের মধ্যে থেকে শুধু মেয়েটার খেয়াল রাখবে, এটা অনেক বড় ঝামেলার কাজ। আর আমি অফিসে এসে ঘুমাই। এখনতো রমজান মাস, দুপুরে রান্নার ঝামেলা নাই। তাই এতো কথা।

প্রতিদিন জান্নাত কোন কারন ছাড়াই চিল্লাচিল্লি করতে থাকে । আমি কোন কথার উত্তর দেই না। চুপচাপ শুধু শুনি। এবং নানান কথায় টপিক অন্যদিকে নিতে চেষ্টা করি। সেখানেও বিপত্তি। জান্নাতের চিল্লাচিল্লির কেনো উত্তর দেই। টপিক কেন অন্যদিকে নিয়ে যাই। 

 আমি অফিসের কাজে কক্সবাজার গিয়েছিলাম ২ দিনের জন্য। তখন অনিক ( জান্নাতের ভাই ) এসেছিলো। বাসায় থাকার জন্য।

১৬ রমজানে অনিক রাড়ি চলে গেলো। আমি কতো করে অনুরোধ করলাম বোঝালাম যে ঈদের আগে রাস্তায় প্রচুর জ্যাম হবে।  তোমাদের নিয়ে রাড়ি যেতে খুব কষ্ট হবে। বাস-ট্রেন কোন পরিবহনের টিকিট পাওয়া যায় না। আর অফিস কবে বন্ধ হবে ঠিক নাই। সুযোগ আছে, আমি ট্রেনের টিকিট কেটে দিচ্ছি , তুমি মেয়েকে নিয়ে অনিকের সাথে খুলনায় চলে যাও।কোন ভাবেই গেলো না। 


প্রতিদিন অশান্তি সৃষ্টি করার জন্য একটার পর একটা ঝামেলা করতে থাকে।  যেমন ২৪ রমজান দিবাগত রাতে আমি পাশের রুমে নামাজ পড়ছি। জান্নাত দেখেছে  মন্তব্য ও করেছে যে, এতো রাতে কিসের নামাজ পড়ছে আল্রাহ ভালো জানে। তারপরও রুমের দরজা ভিতর  থেকে আটকে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি নামাজ শেষ করে দরজা বন্ধ পেয়ে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। ঘন্টাখানেক সোফায় বসে থেকে আবার দরজা নক করলাম। বেশি জোরে শব্দ করতে পারছি না, লজ্জায় কারন নিচের ফ্লাটের মানুষ যদি শব্দ শোনে কি মনে করবে। তখন রাত সাড়ে ১২টা বা ১টা হবে। শব্দ অনেক দুর পর্যন্ত শোনা যাবে। বেশকিছুক্ষন পর জান্নাত দরজা খুললো। আমি কিছু না বলে , নিজের জায়গায় শুয়ে পড়লাম।

পরের দিন ইফতারের পর আমি ইউটিউবে একটা ব্যবসার ভিডিও দেখে জান্নাতকে ডাকলাম দেখো খুব ভালো একটা আইডিয়া পেয়েছি। জান্নাত আমার কাছে আসলো তখন আমি ফেসবুক চালাচ্ছি । ফেসবুকে কে বা কাহারা একটি মেয়ের ছবি পোষ্ট পড়েছে সেটা আমার স্কিনেও দেখা যাচ্ছে। শুরু হয়ে গেলো জান্নাতের ফালতু প্যাচাল-এই মেয়েটা কে ? এই সব করে বেড়াচ্ছো।

আমি যতই বোঝাতে চেষ্টা করছি যে, ততই বেশি বেশি চিল্লাচ্ছে। তখন আমারও প্রচন্ড রাগ হয়ে গেলো কারন জান্নাত প্রতিনিয়ত এভাবে আমাকে চরিত্রহীন প্রমান করার চেষ্টা করে। আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলে। যার কোন ভিত্তি নাই। তখন আমি জান্নাতকে খুব গালিগালাজ করলাম। 

Tuesday, April 5, 2022

05.04.2022

 


আজ ২০২২ সালের ৩য় রমজান। রমজানে আমার অফিসের রুটিন পরিবর্তন হয়েছে। সকাল ১০ টায় অফিসে আসি দুপুর ২টা থেকে ৩ টার মধ্যে বাসায় চলে যাই। ৬ টা ২০ মিটিটে ইফতার করে, নামাজ পড়ে ৭ টা থেকে সাড়ে ৭টার দিকে বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা করি। 

প্রতিদিন অফিসে আসার পর ঘন্টা পার হতে না হতেই জান্নাতের ফোন আসতে শুরু করে। সেই পুরোনো প্যাচাল। কখন বাসায় আসবা। আমার শরীর ভালো লাগছে না। মেয়েটা বিরক্ত করছে  ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রতিদিন কানে মেয়ের কান্নার আওয়াজ শুনেতে পাই। যদি জিজ্ঞাসা করি জিদনী কাদছে কেনো ?

জান্নাতের উত্তর ইচ্ছা মতো মারছি। খুব বিরক্ত করছিলো। 

আমার কলিজাটা কষ্টে ফেটে যায়। আর কতো বুঝাবো ?

আমি জান্নাতকে কয়েক হাজারবার বলেছি যে, দেখো মেয়েটার তুুমি আর আমি ছাড়া কেউ নাই। দাদা-দাদী , নানা- নানী কেউ কাছে থাকে না। আদর ভালোবাসা যা পাওয়ার তোমার আমার কাছ থেকেই পায়। আমি সারাদিন অফিসে থাকি, ওর যা কিছু চাওয়ার পাওয়ার সব তোমার কাছে। মেয়েটার উপর এমন অবিচার করোনা। এটা খুবই খারাপ কাজ।

কে শোনে কার বুঝ। শুরু করে নিজের অমানুষিক রুপটাকে আরো ফুটিয়ে তোলার বিষবাক্য। যেমন -আমার মনে হয় ওকে মেরে ফেলি। এতো বেয়াদপ হয়েছে যা, বলার না। আমার একটুও শান্তি নাই। 

আজ ৫টা বছর ধরে জান্নাত নিজের অমানুষিক ব্যবহার , আচরনের কারনে পুরো সংসারটাকে নরক বানিয়ে রেখেছে। হাজার বুঝানোর পরেও বোঝে না। আর এই নিস্পাপ বাচ্চা মেয়েটা ওর কথা না শুনলে ইচ্ছা মতো শারিরিক নির্যাতন করে। বাচ্চার শাস্তি যদি এই হয় তাহলে ওর শাস্তি কি হওয়া উচিত।

আমি জান্নাতকে বলি জীদনিকে মেরে ফেললে এবং আমিও মরে গেলে কি তুমি সুস্থ হয়ে যাবে। তাহলে তাই করো আমাদের দুজনকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলো। তুমি যদি সুস্থ হয়ে যাও, সুখি হও। আমার তোমাকে আর কিছু বলার নাই। বলেই ফোনটা কেটে দিলাম।

আমি বুঝতে পারিনা কিভাবে বাচবো ?

নিজের শরীরের দিকে নিজে তাকাতে পারি না। শরীর শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। সহজেই বুঝতে পারি কারন, প্রতিদিন জামা কাপড় লুজ ‍লুজ লাগে। প্যান্ট খুলে পড়ে যায়। 

রাতে ঘুমাতে পারিনা। অফিসে শান্তিকে কাজ করতে পারিনা। কোন কাজে মন দিতে পারিনা। 

আমি নিজেই বুঝতে পারি যে, আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। নিজের আচার ব্যবহারে অসামঞ্জ্যতা লক্ষ করতে পারি। রাস্তায় একা একা হাটি আর বকবক করতে থাকি। ২/৪ মিনিট পর সেঞ্চ আসলে , এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। 

মন মেজাজ সব সময় প্রচন্ড খিট খিটে থাকে কেউ ভালো কথা বললেও গা জ্বলে ওঠে। নিরবে মাঝে মাঝে একা একা কাদি আর ভাবতে থাকি আমার মেয়েটার কি হবে। এই অমানুষ জানোয়ারটা তো আরেকটা বিয়ে করবে। আমার মাঝে মাঝে বিশ্বাসেই হয় না, নিজের বাচ্চার সাথে এমন দুঃব্যবহার করতে পারে। তাও আবার অবুঝ নিস্পাপ দুধের বাচ্চা। হায়রে কপাল। 

জান্নাতের  বাপ-মা, অত্মিয়-স্বজন , গুরুজন কাউকে অভিযোগ করতে বাদ রাখিনি। কোন কিছুতে কোন কাজ হয়নি। এখন এদের কাউকে কিছু বলতে আমার নিজের ঘৃনা লাগে। মনে হয় এদের সবগুলোকে জুতার মালা পরিয়ে ঘুরানো উচিত। একটা ভালো ব্যবহার এরা এদের মেয়েকে শিক্ষা দিতে পারেনি। 

Friday, April 1, 2022

০১.০৪.২০২২


 আজ শুক্রবার অফিসে আসার কোন পরিকল্পনা ছিলো না। আর যদিও আসতে হয় তাহলে হয়তো সন্ধ্যায় আসতে হতে পারে। কিন্তু আমার বস হঠাৎ ফোন করে জানালেন ৩টার সময় প্রোগ্রাম আছে আড়াইটায় চলে আসবা। চাকরী করি তাই শত অনিচ্ছা থাকলেও আসতে হবে। 

নিজের অনিচ্ছা , কষ্ট বসদের কাছে কোন পাত্তা না। বিশেষ করে আমার বসের কাছে তো নাই.................

প্রতিনিয়ত নিজের কষ্ট নিজের ভিতর লুকিয়ে রাখতে হয়। হয়তো মানুষ এমন অসহায় হলে পরিবার থেকে সাপোর্ট পায় বা শান্তনা পায়। কিন্তু আমার পরিবার বলতে শুধু আমার আড়াই বছরের মেয়ে আর অমানুষ একটা বউ। অমানুষ বলার কারন হলো কোনদিন কোন কাজে কখনো আমাকে সহযোগীতার হাত বাড়ানোর সাধ্য তো নাই , শুধু অতিষ্ট করা যন্ত্রনা, আর অকথ্য ভাষাজ্ঞান ছাড়া এর ভিতর আর কিছুই নাই। 

প্রতিদিন বিকালে ফোন করে বলবে- রাস্তাদিয়ে বিটারা যাচ্ছে আর তুমি অফিসে বসে আছো। আমার ভালো লগাছে না। ঐ বিল্ডিয়ের ঐ বিটা তার বউকে নিয়ে ঘুরছে, ইত্যাদি ইত্যাদি সব অসামঞ্জস্য কথাবার্তা। যা যে কোন মানুষকে অতিষ্ট মুহূর্তেই অতিষ্ট করে তোলে। 

তাই বসের হুকুম মতো জুম্মার নামাজ পড়ে না খেয়ে চলে এলাম অফিসে। অফিসে আসার পর ১০ মিনিট পর পর ফোন কখন আসবা বাসায়। আমার ভালো লাগছে না। আমি এভাবে আর সংসার করতে পারবো না। আমাকে খুলনায় দিয়ে আসো। কি বালের চাকরী করো ......................। আর বিটারা চাকরী করেনা । আরো কতো কি। 

মানুষের মধ্যে থাকি তাই কথার উত্তর দিতে পারিনা। কিন্তু মনের ভিতরটা খেয়ে যায়। কারন সারাদিন অফিসে বসের নানান কথা শুনি । বউয়ের বকাঝকাও শুনি । কোথায় যাবো ??? 

আমি শুধু বলি পরে কথা বলছি কাজে ব্যস্ত আছি। তাতে আরো বেশি কথা শুনতে হয়। মাঝে মাঝ মনে হয় আমি মনে হয় সবার চাকর হয়ে জম্মেছি। সবাই শুধু বলবে আর আমি মুখ বুজে শুনবো।

অফিসে একটা জরুরী কাজে বা কোন প্রোগ্রামে থাকলে যদি এমন বার বার ফোন করতে থাকে তাহলে মান সম্মান কোথায় যায়। এই কথা ওনাকে কয়েক হাজারবার বোঝানো হয়েছে তারপরও উনি বোঝেননা । প্রতিদিন এমন কাজ করছে তো করছেই। 

আমি দোয়া করি আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ির ঘরে এমন একটা বউ আসুক। যাতে করে তার বুঝতে পারে তাদের মেয়ের কি যোগ্যতা। 

নাম জান্নাতুল ফেরদাউস কিন্তু মুখের ভাষা এতটাই কর্কট ও জগন্য যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। ভাষার সাথে সাথে কপাল মুখ চুচকিয়ে, ঘুচিয়ে যা করে, সেটা যে কি জগন্য তা বলার নয়। 

আল্লাহর ৩০টা দিন এমন যন্ত্রনা সহ্য হয় না। করতেও চাই না। কিন্তু আমার নিস্পাপ মেয়েটার মুখের দিকে তাকালে কান্ন এসে যায়। মেয়েটাও চরম অত্যাচারে থাকে। শুধু অপেক্ষা মেয়েটা একটু বড় হোক, বুঝতে শিখুক। বাকিটা আল্লাহর হাতে .................................................................

শুধু সন্তানের জন্য

 আমি চরম অসহায়। জীবন যুদ্ধে যার সাথে মাঠে নেমেছি  সেই আমার প্রতিদ্বন্দি। সে আর কেউ নয় আমার স্ত্রী। কেন বলছি কারন, আমার আয় করা টাকা থেকে বছরে...