আজ ২০২২ সালের ৩য় রমজান। রমজানে আমার অফিসের রুটিন পরিবর্তন হয়েছে। সকাল ১০ টায় অফিসে আসি দুপুর ২টা থেকে ৩ টার মধ্যে বাসায় চলে যাই। ৬ টা ২০ মিটিটে ইফতার করে, নামাজ পড়ে ৭ টা থেকে সাড়ে ৭টার দিকে বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা করি।
প্রতিদিন অফিসে আসার পর ঘন্টা পার হতে না হতেই জান্নাতের ফোন আসতে শুরু করে। সেই পুরোনো প্যাচাল। কখন বাসায় আসবা। আমার শরীর ভালো লাগছে না। মেয়েটা বিরক্ত করছে ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রতিদিন কানে মেয়ের কান্নার আওয়াজ শুনেতে পাই। যদি জিজ্ঞাসা করি জিদনী কাদছে কেনো ?
জান্নাতের উত্তর ইচ্ছা মতো মারছি। খুব বিরক্ত করছিলো।
আমার কলিজাটা কষ্টে ফেটে যায়। আর কতো বুঝাবো ?
আমি জান্নাতকে কয়েক হাজারবার বলেছি যে, দেখো মেয়েটার তুুমি আর আমি ছাড়া কেউ নাই। দাদা-দাদী , নানা- নানী কেউ কাছে থাকে না। আদর ভালোবাসা যা পাওয়ার তোমার আমার কাছ থেকেই পায়। আমি সারাদিন অফিসে থাকি, ওর যা কিছু চাওয়ার পাওয়ার সব তোমার কাছে। মেয়েটার উপর এমন অবিচার করোনা। এটা খুবই খারাপ কাজ।
কে শোনে কার বুঝ। শুরু করে নিজের অমানুষিক রুপটাকে আরো ফুটিয়ে তোলার বিষবাক্য। যেমন -আমার মনে হয় ওকে মেরে ফেলি। এতো বেয়াদপ হয়েছে যা, বলার না। আমার একটুও শান্তি নাই।
আজ ৫টা বছর ধরে জান্নাত নিজের অমানুষিক ব্যবহার , আচরনের কারনে পুরো সংসারটাকে নরক বানিয়ে রেখেছে। হাজার বুঝানোর পরেও বোঝে না। আর এই নিস্পাপ বাচ্চা মেয়েটা ওর কথা না শুনলে ইচ্ছা মতো শারিরিক নির্যাতন করে। বাচ্চার শাস্তি যদি এই হয় তাহলে ওর শাস্তি কি হওয়া উচিত।
আমি জান্নাতকে বলি জীদনিকে মেরে ফেললে এবং আমিও মরে গেলে কি তুমি সুস্থ হয়ে যাবে। তাহলে তাই করো আমাদের দুজনকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলো। তুমি যদি সুস্থ হয়ে যাও, সুখি হও। আমার তোমাকে আর কিছু বলার নাই। বলেই ফোনটা কেটে দিলাম।
আমি বুঝতে পারিনা কিভাবে বাচবো ?
নিজের শরীরের দিকে নিজে তাকাতে পারি না। শরীর শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। সহজেই বুঝতে পারি কারন, প্রতিদিন জামা কাপড় লুজ লুজ লাগে। প্যান্ট খুলে পড়ে যায়।
রাতে ঘুমাতে পারিনা। অফিসে শান্তিকে কাজ করতে পারিনা। কোন কাজে মন দিতে পারিনা।
আমি নিজেই বুঝতে পারি যে, আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। নিজের আচার ব্যবহারে অসামঞ্জ্যতা লক্ষ করতে পারি। রাস্তায় একা একা হাটি আর বকবক করতে থাকি। ২/৪ মিনিট পর সেঞ্চ আসলে , এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
মন মেজাজ সব সময় প্রচন্ড খিট খিটে থাকে কেউ ভালো কথা বললেও গা জ্বলে ওঠে। নিরবে মাঝে মাঝে একা একা কাদি আর ভাবতে থাকি আমার মেয়েটার কি হবে। এই অমানুষ জানোয়ারটা তো আরেকটা বিয়ে করবে। আমার মাঝে মাঝে বিশ্বাসেই হয় না, নিজের বাচ্চার সাথে এমন দুঃব্যবহার করতে পারে। তাও আবার অবুঝ নিস্পাপ দুধের বাচ্চা। হায়রে কপাল।
জান্নাতের বাপ-মা, অত্মিয়-স্বজন , গুরুজন কাউকে অভিযোগ করতে বাদ রাখিনি। কোন কিছুতে কোন কাজ হয়নি। এখন এদের কাউকে কিছু বলতে আমার নিজের ঘৃনা লাগে। মনে হয় এদের সবগুলোকে জুতার মালা পরিয়ে ঘুরানো উচিত। একটা ভালো ব্যবহার এরা এদের মেয়েকে শিক্ষা দিতে পারেনি।
No comments:
Post a Comment