Tuesday, January 11, 2022

12.01.2022


 আজ ১২ই জানুয়ারী ২০২২। সকাল সাড়ে ৯ টায় অফিসের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলাম্। দুঃখ জনক হলেও সত্য যে, বাসাথেকে নাস্তা না করেই বের হতে হলো। 

রাতে বাসায় ফেরার সময় মুড়ি, পানি, আটা ও আনজুমার জন্য প্যাম্পাস নিয়ে ফিরলাম। হাতমুখ ধুয়ে খাওয়া শেষ করে শুযে পড়লাম। জান্নাত আশপাশ থেকে গোত গোত করে বেড়াচ্ছে, এখানে গিয়ে মুখ ভার করে বসে থাকছে, সেখান থেকে উঠে আরেক জায়গায় দিয়ে বসছে।  আমি বুঝতে পারছি কিছু জিজ্ঞাসা করলে বা বললেই শুরু হয়ে যাবে। তাই কিছু বললাম না। শুযে পড়লাম। মশারী না টানিয়ে বসে আছে। আমি টানাতে বললেই শুরু করবে। তাই আমি কিছু না বলে নিজেই মশারি টানিয়ে শুয়ে পড়লাম।

তখন ভোর ৫টা। জান্নাত আমাকে ঘুম থেকে ডেকে উঠিয়ে বলছে, নাহ তোমার সাথে আমার সংসার হবে না। যেসব স্বপ্নে দেখেছি। তাতে আর সংসার হবে না।

আমি জানতে চাইলাম কি স্বপ্নে দেখেছো বলো ? কি দেখেছো ?

কিছুই বললো না। কয়েকবার জানতে চাওয়ার পরেও কিছু বললো না। আমি চুপ করে শুয়ে রইলাম। সাড়ে ৫ টার দিকে আবার আমাকে ডেকে বলছে চিরুনী কোথায় রেখেছো। চিরুনী পাচ্ছি না। 

আমি বললাম ওযারড্রবের উপর রেখেছিলাম। তাওতো সেই সকালে অফিসে যাবার সময়, সারাদিন গেল, সারারাত গেলো এখন তোমার ................... চুপ করে গেলাম ।

কিছুক্ষনপর আবার ডাকলো-বললো উঠো এখানে আসো। আমি কোন কথা না বলে বিছানা থেকে উঠে আসলাম। 

জান্নাত বললো ওই ঘরে চলো।ওর সাথে ওই ঘরে গেলাম। সোফার উপর পাশাপাশি বসলাম। মিনিট খানেক পরে জান্নাত আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। আমি ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম। মাথাটা বুকের সাথে জড়িয়ে রাখলাম। মিনিট দুয়েক পরে জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে তোমার ?

জান্নাত- ভালো লাগছে না।

কেন ? কি হয়েছে?

জান্নাত- জানিনা মনটা ভালো লাগছে না। 

আমি কিছু বললাম না, ওর মাথাটা বুকের সাথে জড়িয়ে রাখলাম। 

কযেক মিনিট পর জান্নাত বললো-আমার কি কোন স্বাদ, আহ্লাদ নাই। সারাদিন একা একা ঘরের মধ্যে আর ভালো লাগে না। 

সেই একই কথা শুনতে খারাপ লাগলেও আমি বললাম শোনো আমি তো পরের চাকরী করি।  চাকরীর বাইরে যখন সময় পাই তখনই তো তোমাকে নিয়ে বাইরে যাই।  আমার উপর বিশ্বাস রাখো, নিজের মনটাকে ধৈর্য্যশীল করো। যা আশা করছো তার চেয়ে বেশি পাবা। 

জান্নাত ক্ষেপে গিয়ে বললো-আর কতো ধৈর্য্য ধরবো। চারটা, পাচটা বছর ধরে ধৈর্য্য ধরছি। 

আমি বললাম তুমি ভূল বলছো। তুমি ধৈর্য্য ধরলে এতো অশান্তি কখনো হতো না। আমি অফিসে মানুষের মধ্যে থাকি তুমি জানো, তারপরও বার বার ফোন করে আজেবাজে কথা বলে আমার আত্মসম্মান নষ্টকরো, আমাকে মানষিক টর্চার করো। যাতে আমার কাজকর্মে ভূল হতে থাকে। বসের গালিগালাজ শুনতে হয়। আমার ক্যারিয়ার পুরো ধ্বংস হযে যাচ্ছে। এই একটি ব্যাপারেও তোমাকে হাজার বার বুঝিয়েছি।

জান্নাত আমার কথা কেড়ে নিযে বললো- আর তুমি যে আমার জীবনটাই ধ্বংস করে দিচ্ছো।

আমি ওর কথার উত্তর না দিয়ে বলতে থাকি- আমি ঘরের বাইরে গেলে আর ঘরে ফিরতে ইচ্ছা করেনা। যে কোন উপায় মরে যেতে ইচ্ছা করে তবু ঘরে ফিরতে ইচ্ছা করেনা। তুমি ঘরটাকে জাহান্নাম বানিয়ে রেখেছো। 

জান্নাত বললো-তাহলে আসো কেন ?

আমি বললাম তুমি যদি বুঝতে তাহলে এমন করতে না। শুধু মেযেটার মুখটা চোখের সামনে ভাসে। মেযেটার কি দোষ। ওকে কিভাবে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিবো। বিবেক সায় দেয় না। মেযের কথা মনে পড়তেই কান্না আসে। মনে হয় আমি না থাকলে তুমি মেয়েটাকে মেরেই ফেলবা।আর অবুঝ মেয়েটা আমাকে সারাজীবন ভূল বুঝবে। তাই আবার ফিরে আসি।

জান্নাত বললো- তুমি , আমাকে মোহরানা দিয়ে দাও আমি চলে যাচ্ছি। তুমি আমার জন্য কি করেছো। আমাকে একটুও সুখি করতে পারো নাই। 

আমি বললাম- তোমার জন্য আমি কি করেছি, কি করছি, তা আল্লাহ ভালো জানে। আর আমি বলতে পারি আমি সর্বোচ্চে চেষ্টা করি তোমাদের সুখে রাখার জন্য। নিজের জীবনের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করি এবং করছি তোমাদের সুখে রাখার জন্য। আর এতে যদি তোমার মন না ভরে তাহলে আমাকে মাফ করে দাও। আমি অপারগ। তোমার সুখ, তুমি খুজে নাও। 

জান্নাত বললো- শুধু ভরপুর খাওয়া পড়া দিলেই কি হয় ? আমার কি ইচ্ছা করে না রাস্তা দিয়ে হাটবো বাদাম খাবো।

আমি একটু হেসেই বললাম হায়রে পাগলী- সারাজীবনের তিল তিল করে গড়া সংসারের শান্তির চেয়ে , রাস্তায় হেটে আধঘন্টা বাদাম খাওয়া, তোমার কাছে বেশি মূল্যবান মনে হলো। তোমাকে আমার কিছু বলার নাই।

জান্নাত আমার কোল থেকে লাফ দিয়ে উঠে গিযে পাশেই ফ্লোরে পাতা বিছানায় শুয়ে গায়ে কম্বল টানতে টানতে জান্নাত বললো। আমার একা একা ঘরে ভালো লাগে না এভাবে সংসার করতে পারবো না।

আমি বললাম তু্মিই তো এক সময় ঠিক এভাবে অশান্তি করতে আর বলতে , একটা বাচ্চা নাও , বাচ্চা হলে তাতে নিয়েই ঘরে আমার খুব ভালো সময় কাটবে। কথা দিলাম তোমাকে আর বিরক্ত করবো না। আর এখন ...................পুরো উল্টো কথা বলছো। আসলে তোমার মন কোন দিন পূর্নতা পাবেনা। একটা চাওয়া পূর্ন করলে , আরো দুইটা হাজির করে , নতুন করে অশান্তি শুরু করো।

আমি বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম।একটু ঘুম ঘুম ভাব এসেছে তখন জান্নাত আবার আমাকে ডাকলো।

জান্নাত- আমাকে মোহরানা দিয়ে দাও। আমি সংসার করবো না। 

আমি বললাম ঠিক আছে, তোমার আব্বাকে ফোন দিয়ে বলো এসে তোমাকে নিয়ে যেতে। 

জান্নাত বললো-ওদের টানো কেন তুমি ? আমার জীবন তো জ্বালিয়ে শেষ করে ফেলছো ওদের ও জ্বালিওনা।

জান্নাতের কথা শুনে আমার প্রচন্ড রাগ হলো কিন্তু  নিজেকে সামাল দিয়ে বললাম। আমি তো তোমাকে রাস্তা থেকে, বা প্রেম করে বের করে আনিনি ।ওনারা আমার কাছে তোমাকে তুলে দিয়েছে , আমিও তোমাকে ওনাদের হাতেই দিবো।

জান্নাত বললো -মেয়েটার জন্য মুখ বুজে আছি।

আমি বললাম -নিশ্পাপ মেয়েটার দোষ কেন দাও ? মেয়েটা আছে বলে তুমি এখনো ভালো আছো। শুকরিয়া আদায় করো।শুরু করে দিলো সেই পুরোনো কথা । 

আমি হাতজোড় করে বললাম তুমি আমাকে মাফ করো, আমি আর সহ্য করতে পারছি না। তোমার ভালো না লাগলে তুমি তোমার সুখ খুজে নাও। দেখো কে তোমাকে সুখে রাখতে পারে ? তবে আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি তুমি কোথায় শান্তিতে থাকতে পারবে না। তোমার সাথে কারো বনিবনাই হবে না। তুমি তোমার বাপের বাড়িতেও ২মাসের বেশি শান্তিতে থাকতে পারবে না। তারাও তোমাকে বের করে দিবে। আমি যতটা সহ্য করছি আর কেউ করবে না। গিয়ে দেখো তোমার বাপ-মা, ভাই, কেউ না। যদি ২মাসের বেশি টিকতে পারো তবে আমি নাকেখর ‍ুদিয়ে আসবো। এবং সারাজীবন তোমার কথা শুনবো। 

ওর মতে ও অনেক কিছু বলতে লাগলো আমি কোন উত্তর দিচ্ছি না। কারন উত্তর দিলেই কথা বাড়বে, অশান্তি আরো বাড়বে....................................

মনে হচ্ছে এখনই আত্মহত্যা করি (12.01.2022)

 


আজ ১১ ই জানুয়ারী ২০২২। সকাল থেকে অফিসে । দুপুরে কোন খাওয়া হয়নি। তার উপর বউয়ের যন্ত্রনা। ৫ মিনিট পর পর ফোন আর আজে বাজে কথা। মানুষের সামনে না পারছি কোন উত্তর দিতে , না পারছি সহ্য করতে। 

কয়েক বার ফোন করে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। যে কথা ফোনে বলতে পারিনি সেটা মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি। তারপরও একের পর এক ফোন করেই যাচ্ছে। 

আর ফোন রিসিভ করেই এক কথা -আমার ভালো লাগছে না। ছুটি নিয়ে বাসায় চলে আসো। কেমন চাকরী করো ছুটি নিয়ে আসতে পারবা না। অফিসের চাপ তারউপর এই জেরা ...................... হায়রে কপাল।

কষ্টে বুকটা ফেটে কান্না আসছে। কারো কোন কথা ভালো লাগছে না। মনে হচ্ছে এখনই আত্মহত্যা করি । মুক্তি দিয়ে যাই এই  নিকৃষ্ট অমানুষটিকে। যে আমাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিযেছে। 

Monday, January 10, 2022

আর কতো (11.01.2022)

 

০৮ জানুয়ারী ২২, থেকে সকাল ৭ টায় অফিসে আসতে হচ্ছে। আমি তো চাকরী করি, তাই বসের হুকুম মানতে বাধ্য। কেনো এতো সকালে  অফিসে আসতে হবে তাতেও জান্নাতের আপত্তি। বাসায় গেলেই কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকে। আমি কোন উত্তর দেই না। চুপ করে থাকি । 

জানি কুকুরের লেজ সোজা হতে পারে এই অজাত কোনদিন বুঝবে না। তাই চুপ করে থাকি। আমি সকালে নাস্তা ন করেই অফিসে চলে যাই। কারন এতো সকালে ওর নাস্তা তৈরি করতে সমস্যা হয় ।

আরেকটি কথা না বললেই না। এই কয়েকদিন বাদে প্রতিদিনই আমি অফিসে আসি সকাল ১০ টায়, দুপুরে বাসায় থেকে যাই ২টার দিকে, ৪টা বা সাড়ে ৪ টার দিকে আবার অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা করি। অফিস শেষ করে রাতে বাসায় ফিরতে ফিরতে সাড়ে ১০ টা ১১ টা  বা তার বেশিও বেজে যায়। যতটুকু সময় অফিসে থাকি তার মধ্যে কয়েকবার জান্নাত ফোন করে বলতে থাকে , আমার কিছু ভালো লাগছে না, আমার কিছু ভালো লাগছে না। 

প্রতিদিনের মতো ১১ জানুয়ারী ২২, সকালে অফিসে কাজ করছি। তখন ঘড়ির কাটায় ১১টা। জান্নাতের ফোন।ফোন কেটে দিয়ে আমি ব্যাক করে বললাম। কাজ করছি বলো কি বলবা, 

জান্নাত- ন্যাকামীর সুরে কথায় টান দিয়ে বললো, আমার কিছু ভালো লাগছে না। 

আমি বললাম তোমার ভালো লাগছে না, শুনলাম আমি কি করতে পারি বলো ? আমি তো অফিসে কাজ করছি তাই না।

জান্নাত- তুমি শুধু অফিস করো, আর কেউ অফিসে করেনা। শতশত পুরুষ মানুষ অফিসে করছে। সংসারও করছে।

আমি বললাম এটা কোন ধরনের কথা। তোমার সমস্যা কি ? এই এক কথা শুনতে শুনতে আমি অতিষ্ট। আর ভালো লাগে না। যদি শত শত পুরুষ মানুষ সম্পর্কে তোমার এতোই ধারনা থাকে তাহলে আমার সাথে সংসার করতে এসেছো কেন ? ফোন রাখো, তুমি তো একা ঘরে সবে যা খুশি বলতে পারো, আমি মানুষের মধ্যে থাকি। আমাকে আর কতো  নিচে নামাবে, আমার আত্মসম্মান আর কতো নষ্ট করবে তুমি ? আমাকে তো জীবন্ত লাশ বানিয়ে ফেলেছো। 

জান্নাত বলেলো একা একা আমার আর ভালো লাগে না, আমি বাইরে যাবো,  তুমি তো সারাদিন বাইরে থাকো তাই টের পাও না।

আমি বললাম- যখন মেয়েটা হয়নি, তখন বলতে একটা বাচ্চা হয়ে তাকে নিয়ে আমার সময় কাটবে, তোমাকে আর জ্বালাবো না। এখন মেয়েকে নিয়ে সময় কাটাতে তোমার ভালো লাগেনা ? আর এটা আমার চাকরী । আমাকে যদি বলে সারাদিন একা এক ঘরে বসে থাকতে , আমার তাই করতে হবে। যখন যেখানে পাঠায় , যা বলে তাই করতে হয়। তুমি তো আমার চাকরী সম্পর্কে, আমার সম্পর্কে সবই জানো । চাকরী মানে কেনা বাদীর মতো যখন যা বলবে তাই করতে হবে। আর বাইরে থাকার কথা বলছো তুমি- আমি বিনোদন করতে বাইরে থাকি না, বা বাইরে ফুর্তি করে বেড়াই না, পেটের ভাত যোগার করতে বাইরে থাকি। তোমাদের মুখে খাবার তুলে দেয়ার জন্যই বাইরে থাকি। 

জান্নাত আমার কষ্টগুলো না বুঝে আবার বলতে শুরু করলো তোমার শুধু অজুহাত আর মানুষ চাকরী করে না ? আর পুরুষ মানুষ নাই জগতে যারা স্ত্রী সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেয়। 

আমি বললাম দেখো আমার সাথে মানুষ আছে তারা আমার একটু পিছনে, আমি রাস্তায় হাটছি । এসব কথা শুনতে কারো ভালো লাগে না । আমি মরে গেলেই তোমার শান্তি হবে। 

 জান্নাত বললো -আমাকে তুমি অনেক বেশি কথা বলে ফেললে, আমাকে তুমি আর কতো কষ্ট দেবে ? আমাকে ডিফোর্স দিয়ে দাও, তোমার সাথে সংসার করবো না।  

আমি আর কোন কথা না বাড়িয়ে ফোন কেটে দিলাম। 

Tuesday, January 4, 2022

নতুন বছর-২০২২



 দিনটি ছিলো ৩১ ডিসেম্বর ২০২১। ৫দিন আগে থেকেই অফিসের প্রোগ্রাম সেট করা কিশোরগঞ্জ যেতে হবে।কারন আমার বস ওখানে একটি ছোট অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।ঢাকা থেকে ১০ জন যাবে তার মধ্যে আমিও। আমি বলেছিলাম যদি দিনে দিনে চলে আসা যায় তাহলে আমি চেষ্টা করবো। 

পারসোনাললি আমার যাওয়ার কোন ইচ্ছাই ছিলোনা। বসকে কয়েকবার বোঝাতে চেষ্টা করেছি যে, আফিসে জরুরী কাজ আছে আমি ঢাকায় থাকি। ফ্যামিলির অজুহাত দিলে , আমার ফ্যামিলি তার কাছে ছোট হয়ে যাবে তাই নানানভাবে বোঝাতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু অফিসের কাজ সস্পর্কে  বসের থেকে ভালো কে জানে ?

রওনা দেয়ার ১০ মিনিট আগেও একবার বলেছি। কিন্তু বস বললেন তুমি আসো । তুমিতো আর থাকছো না। যে গাড়িতে আসবে সেই গাড়িতেই রওনা হয়ে চলে যাবা। কোন ঝামেলা নাই।আমার কোন রকম যাওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও একপ্রকার বাধ্য হয়েই রওনা হতে হলো। আমার না যাওয়ার মূল ইচ্ছাটাই ছিলো পরিবারের জন্য। 

যাইহোক   হায়েস গাড়ি । আমরা ৭ জন । গাড়ি চলছে বেশি কিছুদুর যাওয়ার পর জান্নাতের ফোন। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে তুমি কোথায় এখন ?

আমি বললামা গাড়িতে। 

তুমি যাচ্ছো তাহলে। যাও এসে আমাকে মরা পাবে। আমি গলায় দড়ি দিবো। মেয়েকেও খুন করবো। তোমার যা ইচ্ছা তাই করো। বলেই ফোন কেটে দিলো। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার আত্মসম্মান লুটিয়ে পড়লো ধুলোয়।কারন ফোনের কথা শুনে ফেলেছে পাশে থাকা কেউ কেউ। সবাই আমার দিকে কেমন যেন তাকা্চ্ছে। তারপরও আমি আবার ফোন দিলাম দেখলাম জান্নাতের ফোন বন্ধ। পুরো রাস্তাতে কয়েকবার ট্রাই করেছি। ফোন বন্ধই পেয়েছি। আমি তো ফুর্তি করতে যাচ্ছি না , এটা তো অফিসের কাজ। তারপরও কেন ? 

বাসায় না আসা পর্যন্ত আমি ছিলাম অস্তির। কিভাবে চাকরী করবো ? প্রতিনিয়ত পরিবার কোন কারন ছাড়াই এমন করে 

সবাই খুব হাসি-খুশি । একটা নতুন জায়গায় যাচ্ছে। গল্পগুজব করছে কতো কি। কিন্তু আমার ভীরটা অবাধে রক্তক্ষরন চলছে। সারাটা দিন সবার সাথ হাসিমুখে কথা বললেও আমার ভীতরটা ‍গুমরে কাদছিলো। মানুষের স্ত্রী কামনা করে , স্বামী যেখানেই যাক ভালো ভাবে সুস্থভাবে বাসায় ফিরে আসুক। আর আমার স্ত্রী আমাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। 

বিকার সাড়ে ৪টার দিকে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ঢাকায় পৌছালাম রাত ৯টায়। মেযের জন্য সামান্য কিছু খাবার কিনে বাসায় ফিরে । নিজের মতো করে খেয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে বসে রইলাম। মেয়েকে নিয়ে মজা করছি। রাত ১২ টা বাজেতেই । নতুন বছরের আনন্দে আতশবাজির শব্দ হতে লাগলা খই ভাজার মতো ।আকাশ ঝলমল করতে লাগলো। আমি উৎফুল্ল হয়ে জান্নাতে একবার এপাশে আরেকবার ওপাশে দেখতে বললাম। জান্নাত আমার উপর খেকিয় উঠলো। আমি কোন উত্তর না দিয়ে চুপচাপ মেয়েকে নিয়ে বসে রইলাম। মেয়েকে আতশবাজির ঝলমলে আকাশ দেখাতে লাগলাম। জান্নাত চিৎকার করে মেয়েকে ডাকতে লাগলো-এই এদিকে আয় , ঘুমাতে হবে। আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেলো, একটা যন্ত্রনা হইছিস আমার পেটে। বুক ফেটে কান্না আসছিলো , রাগে ক্ষোভে শরীর যেন থরথর করে কাপছিলো। তবুও চুপ করে নিজেকে সামাল দিয়ে, ঘরের এক ছোফায় বসে রইলাম। 

এভাবে দুদিন কাটলো । আমি খুব বেশি জরুরী না হলে জান্নাতের সাথে তেমন কথা বলিনা। কি আর বলবো ?


০২ জানুয়ারী ২০২২। অফিসে সন্ধ্যায় সেন্ডুইজ নাস্তা দিলো। নাস্তাটা দেখেই জান্নাতের কথা মনে হলো। ও খুব পছন্দ করে। আমি না খেয়ে কৌশলে প্যাকেট করে রাখলাম। বাসায় আসার সময় ভাবলাম , এটা দেখে হয়তো খুশি হবে। কিন্তু বাসায় ফিরে পোড়া মুখ দেখতে হলো। কপাল কুচকিয়ে, দাতে দাত লাগিয়ে কেমন এক ভাব। যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

কোন কথা না বলে ,কাপড় সেরে খেতে বসলাম । মেয়ে বার বার আমার কাছে আসার চেষ্টা করছে , আর ধমক দিয়ে বলছে ঘুমা , না হলে আছাড় দিয়ে নাড়ি বের করে দিবো। ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমি মেয়েকে শান্ত করার জন্য বললাম-আম্মু কম্বলের নিচে শুয়ে থাকো, বাইরে খুব ঠান্ডা। আমি ভাত খেয়ে তোমার কাছ আসছি। মেয়ে চিতকার করে বলল-আমিও ভাত খাবো।

তখন আমি মেয়েকে বিছানা থেকে কোলে করে নিয়ে আমার পাশে বসিয়ে ভাত  দিতে লাগলাম। এভাবেই সেদিন কাটলো। 

০৪ জানুয়ারী ২০২২। অফিসের কাজে খুব ব্যস্ত। আমার উপর দিয়ে কতোটা চাপ যাচ্ছে। আমি অফিসে  কতোটা বিপদে আছি জান্নাত ভালো করেই জানে। বসেরা এখন আমাকে কেউ আগের মতো স্নেহ করেনা। এর কারনও জান্নাত । কেন বলছি সেটা হলো প্রতিনিয়ত যদি মাথায় এমন পারিবারিক নির্যাতন থাকে, যন্ত্রনা থাকে তাহলে অফিসের কাজে কেমন করে মন বসবে। একের পর এক ভূল হতে থাকে। যা আমার অবস্থানকে নড়বড়ে করে ফেলেছে। আমার ক্যারিয়ার জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে। জান্নাতকে সবই বোঝানো হয়েছে। তারপরও ৫টা বছর ধরে একই মানষিক যন্ত্রনা। জানিনা কতোদিন সহ্য করতে পারবো। কয়েকবার জান্নাতের সামনেই আত্মহত্যা করার চেষ্টাও করেছি তারপরও জ্ঞান হয়না। 

দুই,তিনবার ফোন দিয়েছে জান্নাত। কাজের ব্যস্ততায় এবং আশেপাশে বেশি মানুষ থাকায় ফোন ব্যাক করিনি। ৩য় বার রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে জান্নাত- আমার ভালো লাগছে না তাই ফোন করলাম। 

আমি বললাম কেন কি হয়েছে ?

জান্নাত বলল মনটা ভালো লাগছে না। মনের ভিতর কেমন কেমন করছে। 

আমি আস্তে করে বললাম - একটু পরে ফোন দিচ্ছি। আমি জরুরী কাজ করছি।কাজের থেকে বড় কথা পাশে মানুষ আছে। একটু ফ্রি হয়ে ফোন দিচ্ছি।

জান্নাত বললো- এই অজুহাত আর কতকাল ‍শুনবো। 

আমি বললাম এটা কোন কথা বলার ভাষা না। অফিসে মানুষ থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক। অফিস কি আমার একার ?

জান্নাত আবার বলল- জানি, এসব তোমার ফোন রাখার অজুহাত। 

কথাটা শুনে খুবই খারাপ লাগলো, তাই কোন কথা বলে ফোন কেটে দিলাম।

এক মিনিট যেতে না যেতেই আবার জান্নাতের ফোন, রিসিভ করলাম না। বারবার ফোন দিয়েই যাচ্ছে। 

আমার আত্মসম্মান আর কতো নিচে নামারে ওর এই অত্যাচার শেষ হবে ?

 আমাকে কতোটা নিশ্বেস করে ও শান্ত হবে ?

হয়তো আমার শরীরে প্রান যেদিন প্রান থাকবেনা সেদিন ওরা বুঝবে। 

এতো যন্ত্রনার পরে কিভাবে একটা মানুষ ভালো কথা বলে, মন খুলে হাসে আমি জানিনা। অফিসেতো বাধ্য হয়েই সব লুকাতে হয়। 

রাতে বাসায় ফিরলাম মেয়ের জন্য আমসত্ব ও রান্নার তেল নিয়ে। দেখেলাম ছোলা মুড়ি বানিয়েছে। না খেলে কি না কি হয়ে। তা্ খেলাম। ছোলা মুড়ি খেয়ে সেই যে, মোবাইল নিযে বসেছে , আর কোন খেয়াল নাই। আমি যদি মোবাইল নিয়ে এমন ১০ মিনিট থাকতাম তাহলেই আমার জাতি বেজাতি শুরু হয়ে যেতো।

আমি নিজে ভাত নিয়ে খেতে বসলাম। খেতে খেতে বললাম -চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে, ১০/৫ কেজি করে না কিনে , একবস্তা চাল কিনে রাখতে হবে। 

জান্নাত উত্তর দিলো বেতন পেয়েছো তো টাকা খরচ করার জন্য কামড়াচ্ছে। 

আমি এক নজর ওর দিকে তাকিয়ে আর কোন কথা বললাম না। চুপচাপ খেয়ে শুয়ে পড়লাম। রাত ৩টার সময় মোবাইলের টুংটাং শব্দে পাশ ফিরে দেখি জান্নাত মোবাইল চালাচ্ছে। দেখে মনে হলো চ্যাট করছে। সেকেন্ডে সেকেন্ডে টুংটাং শব্দ শুধু চ্যাট করলেই হয়।
এটা যদি আমি করতাম তাহলে হয়তো ঘর ছেড়েই চলে যেতো।

আমি কিছু না বলে চুপ করে শুযে রইলাম। বেশকিছু ক্ষন পর আমি দেখছি আমার সহ্যর বাধ ভেঙ্গে যা্চ্ছে । কখন কি বলে ফেলি তাই বিছানা ছেড়ে , পাশের ঘরের সোফায় এসে বসে রইলাম। শীতের রাত। তাই ঘন্টা দুয়েক পরে  ৫টার দিকে গিয়ে দেখলাম জান্নাত শুয়ে পড়েছে। আমিও আস্তে করে নিজের কম্বল নিয়ে একপাশে শুযে রইলাম। সকালে ৮টায় উঠে গোসল করে অফিসে চলে এলাম। তখনও জান্নাত বিছানা থেকে উঠেনি। তাই সকালের খাওয়া আর হলোনা। হায়রে রিজিক। নিজে ইনকাম করে নিজেই খেতে পারিনা। 

কখনো কোন দিন কোন মেয়ের সাথে এক সেকেন্ডের জন্য কথা বলতে দেখেনি, মোবাইলে  কোন মেয়ের নাম্বারও পায়নি তাই জনে জনে বলে বেড়ায় আমি অগনিত মেয়ের সাথে পরকিয়া করে বেড়াই। মেয়েটার কথা চিন্ত করে সব মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। দিনের পর দিন বুঝালাম, গায়ে হাত তুললাম তারপরও ঠিক স্বভাব ঠিক হয় না। 

আমার দৃষ্টিকোন থেকে এর জন্য দায়ী ওর মা ( আমার শ্বাশুড়ি) । কারন ওনি ভালো হলে মেয়েকে ভালো শিক্ষা দিতেন। মেযেকে যতপ্রকার কুশিক্ষা সব ওখান থেকেই আসে। এই চরিত্রহীন অমানুষটি উনার তৈরি। 






শুধু সন্তানের জন্য

 আমি চরম অসহায়। জীবন যুদ্ধে যার সাথে মাঠে নেমেছি  সেই আমার প্রতিদ্বন্দি। সে আর কেউ নয় আমার স্ত্রী। কেন বলছি কারন, আমার আয় করা টাকা থেকে বছরে...