রাতে বাসায় ফেরার সময় মুড়ি, পানি, আটা ও আনজুমার জন্য প্যাম্পাস নিয়ে ফিরলাম। হাতমুখ ধুয়ে খাওয়া শেষ করে শুযে পড়লাম। জান্নাত আশপাশ থেকে গোত গোত করে বেড়াচ্ছে, এখানে গিয়ে মুখ ভার করে বসে থাকছে, সেখান থেকে উঠে আরেক জায়গায় দিয়ে বসছে। আমি বুঝতে পারছি কিছু জিজ্ঞাসা করলে বা বললেই শুরু হয়ে যাবে। তাই কিছু বললাম না। শুযে পড়লাম। মশারী না টানিয়ে বসে আছে। আমি টানাতে বললেই শুরু করবে। তাই আমি কিছু না বলে নিজেই মশারি টানিয়ে শুয়ে পড়লাম।
তখন ভোর ৫টা। জান্নাত আমাকে ঘুম থেকে ডেকে উঠিয়ে বলছে, নাহ তোমার সাথে আমার সংসার হবে না। যেসব স্বপ্নে দেখেছি। তাতে আর সংসার হবে না।
আমি জানতে চাইলাম কি স্বপ্নে দেখেছো বলো ? কি দেখেছো ?
কিছুই বললো না। কয়েকবার জানতে চাওয়ার পরেও কিছু বললো না। আমি চুপ করে শুয়ে রইলাম। সাড়ে ৫ টার দিকে আবার আমাকে ডেকে বলছে চিরুনী কোথায় রেখেছো। চিরুনী পাচ্ছি না।
আমি বললাম ওযারড্রবের উপর রেখেছিলাম। তাওতো সেই সকালে অফিসে যাবার সময়, সারাদিন গেল, সারারাত গেলো এখন তোমার ................... চুপ করে গেলাম ।
কিছুক্ষনপর আবার ডাকলো-বললো উঠো এখানে আসো। আমি কোন কথা না বলে বিছানা থেকে উঠে আসলাম।
জান্নাত বললো ওই ঘরে চলো।ওর সাথে ওই ঘরে গেলাম। সোফার উপর পাশাপাশি বসলাম। মিনিট খানেক পরে জান্নাত আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। আমি ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম। মাথাটা বুকের সাথে জড়িয়ে রাখলাম। মিনিট দুয়েক পরে জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে তোমার ?
জান্নাত- ভালো লাগছে না।
কেন ? কি হয়েছে?
জান্নাত- জানিনা মনটা ভালো লাগছে না।
আমি কিছু বললাম না, ওর মাথাটা বুকের সাথে জড়িয়ে রাখলাম।
কযেক মিনিট পর জান্নাত বললো-আমার কি কোন স্বাদ, আহ্লাদ নাই। সারাদিন একা একা ঘরের মধ্যে আর ভালো লাগে না।
সেই একই কথা শুনতে খারাপ লাগলেও আমি বললাম শোনো আমি তো পরের চাকরী করি। চাকরীর বাইরে যখন সময় পাই তখনই তো তোমাকে নিয়ে বাইরে যাই। আমার উপর বিশ্বাস রাখো, নিজের মনটাকে ধৈর্য্যশীল করো। যা আশা করছো তার চেয়ে বেশি পাবা।
জান্নাত ক্ষেপে গিয়ে বললো-আর কতো ধৈর্য্য ধরবো। চারটা, পাচটা বছর ধরে ধৈর্য্য ধরছি।
আমি বললাম তুমি ভূল বলছো। তুমি ধৈর্য্য ধরলে এতো অশান্তি কখনো হতো না। আমি অফিসে মানুষের মধ্যে থাকি তুমি জানো, তারপরও বার বার ফোন করে আজেবাজে কথা বলে আমার আত্মসম্মান নষ্টকরো, আমাকে মানষিক টর্চার করো। যাতে আমার কাজকর্মে ভূল হতে থাকে। বসের গালিগালাজ শুনতে হয়। আমার ক্যারিয়ার পুরো ধ্বংস হযে যাচ্ছে। এই একটি ব্যাপারেও তোমাকে হাজার বার বুঝিয়েছি।
জান্নাত আমার কথা কেড়ে নিযে বললো- আর তুমি যে আমার জীবনটাই ধ্বংস করে দিচ্ছো।
আমি ওর কথার উত্তর না দিয়ে বলতে থাকি- আমি ঘরের বাইরে গেলে আর ঘরে ফিরতে ইচ্ছা করেনা। যে কোন উপায় মরে যেতে ইচ্ছা করে তবু ঘরে ফিরতে ইচ্ছা করেনা। তুমি ঘরটাকে জাহান্নাম বানিয়ে রেখেছো।
জান্নাত বললো-তাহলে আসো কেন ?
আমি বললাম তুমি যদি বুঝতে তাহলে এমন করতে না। শুধু মেযেটার মুখটা চোখের সামনে ভাসে। মেযেটার কি দোষ। ওকে কিভাবে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিবো। বিবেক সায় দেয় না। মেযের কথা মনে পড়তেই কান্না আসে। মনে হয় আমি না থাকলে তুমি মেয়েটাকে মেরেই ফেলবা।আর অবুঝ মেয়েটা আমাকে সারাজীবন ভূল বুঝবে। তাই আবার ফিরে আসি।
জান্নাত বললো- তুমি , আমাকে মোহরানা দিয়ে দাও আমি চলে যাচ্ছি। তুমি আমার জন্য কি করেছো। আমাকে একটুও সুখি করতে পারো নাই।
আমি বললাম- তোমার জন্য আমি কি করেছি, কি করছি, তা আল্লাহ ভালো জানে। আর আমি বলতে পারি আমি সর্বোচ্চে চেষ্টা করি তোমাদের সুখে রাখার জন্য। নিজের জীবনের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করি এবং করছি তোমাদের সুখে রাখার জন্য। আর এতে যদি তোমার মন না ভরে তাহলে আমাকে মাফ করে দাও। আমি অপারগ। তোমার সুখ, তুমি খুজে নাও।
জান্নাত বললো- শুধু ভরপুর খাওয়া পড়া দিলেই কি হয় ? আমার কি ইচ্ছা করে না রাস্তা দিয়ে হাটবো বাদাম খাবো।
আমি একটু হেসেই বললাম হায়রে পাগলী- সারাজীবনের তিল তিল করে গড়া সংসারের শান্তির চেয়ে , রাস্তায় হেটে আধঘন্টা বাদাম খাওয়া, তোমার কাছে বেশি মূল্যবান মনে হলো। তোমাকে আমার কিছু বলার নাই।
জান্নাত আমার কোল থেকে লাফ দিয়ে উঠে গিযে পাশেই ফ্লোরে পাতা বিছানায় শুয়ে গায়ে কম্বল টানতে টানতে জান্নাত বললো। আমার একা একা ঘরে ভালো লাগে না এভাবে সংসার করতে পারবো না।
আমি বললাম তু্মিই তো এক সময় ঠিক এভাবে অশান্তি করতে আর বলতে , একটা বাচ্চা নাও , বাচ্চা হলে তাতে নিয়েই ঘরে আমার খুব ভালো সময় কাটবে। কথা দিলাম তোমাকে আর বিরক্ত করবো না। আর এখন ...................পুরো উল্টো কথা বলছো। আসলে তোমার মন কোন দিন পূর্নতা পাবেনা। একটা চাওয়া পূর্ন করলে , আরো দুইটা হাজির করে , নতুন করে অশান্তি শুরু করো।
আমি বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম।একটু ঘুম ঘুম ভাব এসেছে তখন জান্নাত আবার আমাকে ডাকলো।
জান্নাত- আমাকে মোহরানা দিয়ে দাও। আমি সংসার করবো না।
আমি বললাম ঠিক আছে, তোমার আব্বাকে ফোন দিয়ে বলো এসে তোমাকে নিয়ে যেতে।
জান্নাত বললো-ওদের টানো কেন তুমি ? আমার জীবন তো জ্বালিয়ে শেষ করে ফেলছো ওদের ও জ্বালিওনা।
জান্নাতের কথা শুনে আমার প্রচন্ড রাগ হলো কিন্তু নিজেকে সামাল দিয়ে বললাম। আমি তো তোমাকে রাস্তা থেকে, বা প্রেম করে বের করে আনিনি ।ওনারা আমার কাছে তোমাকে তুলে দিয়েছে , আমিও তোমাকে ওনাদের হাতেই দিবো।
জান্নাত বললো -মেয়েটার জন্য মুখ বুজে আছি।
আমি বললাম -নিশ্পাপ মেয়েটার দোষ কেন দাও ? মেয়েটা আছে বলে তুমি এখনো ভালো আছো। শুকরিয়া আদায় করো।শুরু করে দিলো সেই পুরোনো কথা ।
আমি হাতজোড় করে বললাম তুমি আমাকে মাফ করো, আমি আর সহ্য করতে পারছি না। তোমার ভালো না লাগলে তুমি তোমার সুখ খুজে নাও। দেখো কে তোমাকে সুখে রাখতে পারে ? তবে আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি তুমি কোথায় শান্তিতে থাকতে পারবে না। তোমার সাথে কারো বনিবনাই হবে না। তুমি তোমার বাপের বাড়িতেও ২মাসের বেশি শান্তিতে থাকতে পারবে না। তারাও তোমাকে বের করে দিবে। আমি যতটা সহ্য করছি আর কেউ করবে না। গিয়ে দেখো তোমার বাপ-মা, ভাই, কেউ না। যদি ২মাসের বেশি টিকতে পারো তবে আমি নাকেখর ুদিয়ে আসবো। এবং সারাজীবন তোমার কথা শুনবো।
ওর মতে ও অনেক কিছু বলতে লাগলো আমি কোন উত্তর দিচ্ছি না। কারন উত্তর দিলেই কথা বাড়বে, অশান্তি আরো বাড়বে....................................