Thursday, June 16, 2022

16.06.2022

 


এভাবেই চলছে দিন। আমি জান্নাতের সাথে তেমন না পারতে কথা বলিনা। অফিস থেকে বাসায় গিয়ে নিজের মতো করে ভাত তরকারী নিয়ে খেয়ে দেয়ে শুয়ে থাকি। জান্নাত ও তার মতো। সারাদিন মোবাইল নিয়েই থাকে। সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গে ওর মোবাইলে কথা বলার শব্দে, আবার রাতে বাসায় ফিরেও দেখি সেই মোবাইল হাতে। আমি নিজের মতো করে হাতমুখ ধুয়ে, প্লেট ধুয়ে ভাত নিয়ে খেতে বসি। 

পক্ষান্তরে আমি আমি অফিস থেকে বাসায় ফিরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে । যদি একটু মোবাইল নিয়ে বসি তাহলে জান্নাতের মুখের দিকে তাকানো যায় না। মুখ খানা মুখপোড়া হনুমানের মতো করে এমন ভাব করে যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। 

সকালে আমি সেভ করছি জান্নাতের চিতকার, আমার উদ্দেশ্যে তোমার স্বাভাব এখনো ভালো হয়ন। আমি কোন উত্তর দিচ্ছি না। এবার আমার কাছাকাছি এসে বললো ঐ মেয়ের সাথে তোমার এখনো যোগাযোগ আছে। 

আমি বললাম - জুতা দিয়ে পিটিয়ে মুখ ভেঙ্গে দেবো। এই বেয়াদপ কোথার মেয়ে। 

জান্নাত বললো- এই যে রানু তোমাকে  ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। আমি বললাম দেখি কোথায় ?

দেখলাম রোহান তানভির নামে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পেন্ডিং । প্রায় ১বছর আগে পাঠিয়েছে। নামের উপরে  ৩২ ডব্লিউ লেখা (32w)। তাতে বুঝলাম ৩২ সপ্তাহ আগে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। আমি জানিনা এই রোহান তারভির কে ? কিন্তু জান্নাত জানে। ও বলছে এটা রানুর ছেলে। 

আমি জান্নাতকে বললাম তুমি, তোমার এই স্বভাব ছাড়ো। ভালো হয়ে যাও। কে শোনে কার কথা। মানুষ হলে তো শুনতো। শুরু করলো গালিগালাজ আজে বাজে কথা, সাথে মেয়েকে ও গালিগালাজ। রাগে আমার শরীর জ্বলতে লাগলো। কোন কথার কোন উত্তর না দিয়ে অফিসের  উদ্দেশ্যে রওনা করালাম।  

আল্লাহ ভালো জানে কতো দিন আমার আর আমার নিস্পাপ মেয়ের এই নির্যাতন সইতে হবে। মেয়েটা যদি বিছানায় একটু পানি ফেলে , সাথে সাথে মেয়েকে বিশ্রি ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে আর বলতে থাকে  এই সংসারে আর শান্তি নাই। বালের সংসার, বালের একটা মেয়ে, জীবনটা ধ্বংস করে দিলো। জীবনটা কয়লা করে দিলো ইত্যাদি। আবার রাতে বা দিনে মশায় কামড়ালেও সংসারের আর আমার মেয়ের দোষ। শুরু হয় গালিগালাজ। 

১৩ই জুন জান্নাতের জন্মদিন ছিলো। একটা মোবাইল কিনে দিয়েছি। ভালো মন্দ কিছুই বললো না। তারপরও আমার মোবইল নিয়ে টিপতে থাকবে। আমি কয়েকবার বলেছি। আমি তো তোমার মোবাইল ধরি না। তুমি আমার মোবাইল ধরবা কেন ? জান্নাত বলে। আমার মোবাইল তুমি ধরতে পারবা না কিন্তু আমি তোমার টা ধরবো। যা খুশি তাই করবো। 

আমি কোন উত্তর দিলাম না।  

Friday, June 3, 2022

03.06.2022

 

৭ মে ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষ করে ঢাকার পথে রওনা করি। কোনো গাড়ির টিকিট না পেয়ে অবশেষে কাটা লাইনে রওনা হতে হলো। মাওয়া ঘাটে আসার পর জান্নাত জিদ ধরলো ফেরিতে পার হবে। লঞ্চে ওর ভয় লাগে।  সাতার জানেনা তো তাই এই জিদ। বুঝতে পারলাম ওর সমস্যাটা তাই , সবাই গাড়ি থেকে  নেমে ছুটছে লঞ্চ ঘাটের দিকে আমি ছুটছি উল্টোদিকে। একটা ভ্যানে করে ফেরিঘাটের দিকে ছুটলাম। ভ্যানওয়ালা যে ঘাটে নামালো সেখানে ফেরি নাই। ফেরি ভিরছে অন্য ঘাটে তাই ছুটলাম সেদিকে। ফেরির স্লাব নামানোর আগেই বেয়েছেয়ে শত শত লোক ফেরিতে পড়ে বসেছে। আমিও বাধ্য হয়ে জান্নাতকে নিয়ে সেটাই করলাম। ফেরিতে ওঠার পরে আর জানে জান নাই।

যেমন রোদ তেমন গরম, আমার ঘাড়ে ব্যাগ আর মেয়ে কোলে। দাঁড়ানোর যেখানে জায়গা নাই সেখানেতো বসার কথা চিন্তাই করা যায় না। মেয়েও তেমনি নাছোড় বান্দা কোল থেকে নামবে না। মেয়ে ঘেমে নেয়ে একাকার, মেয়ের গায়ের জামা খুলে দিলাম। আমার নাক মুখ কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে। মেয়ে তার জামা দিয়ে আমার মুখের ঘাম মুছে দিচ্ছে। এ যেন প্রবল ক্ষরার মাঝে প্রশান্তির সুশীতল বাতাস।জান্নাতও আমার পাশে দাড়িয়ে। ঘাট পর হয়ে এবার পরিবহনে ওঠার যুদ্ধ। অনেক ঠেলাঠেলি করে আমি প্রথমে গাড়িতে উঠলাম। হাতেও একটু ব্যাথাও পেলাম। তারপর সিট বুক করে জান্নাতকে গাড়িতে উঠালাম।

ঢাকার বাসায় পৌছাতে পৌছাতে রাত ৮ টা বেজে গেলো। বাসায় পৌছেই জান্নাত কাপড় খুলছে আর বলছে এতো কষ্ট করে মানুষ যায় , এর পর থেকে আমি আর বাড়ি যাবো না। তুমি একা একা যাবা। আমি কোন উত্তর দিলাম না। শুধু মনে মনে বললাম এমন ভাব আর এমন কথা বলছে, আমার মেয়ে আর আমি যেন অতি আরামে উনার কোলে  উঠে এসেছি। জান্নাত নিজের মতো বকবক করতেই লাগলো । আমি কোন উত্তরা না দিয়ে বাজার করার জন্য বের হয়ে গেলাম। কারন ৮দিন পর ঢাকায় আসলাম। চাল ছাড়া ঘরে আর কোন বাজার নাই।

পরের দিন জান্নাত বলছে, হঠাৎ জান্নাত আমাকে বলছে তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না। আমি জান্নাতের মুখের দিকে চেয়ে পড়লাম। জান্নাত বললো  এই কয়টা দিন থেকে আসলাম আমাকে একটু কোথাও ঘুরতে নিয়ে গেলে না। কতো আশা করেছিলাম ক্যান্টমেন্ট যাবো, ভূতের আড্ডায় যাবো। আমার কোন আশা কোন দিন পুরন হয় না। কপাল নিয়ে এসেছে ওরা। 

আমি কোন উত্তর না  দিয়ে ওর মুখের দিকে চেয়ে আছি। 

জান্নাত আবার বলতে শুরু করলো , আমারা চলে আসার পরের দিন তোমার ছোট ভাই তার বউকে নিয়ে বেড়াতে গেছে। ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে বউ পালা শেখো। তোমার তো মুরদ নাই।

আমি বললাম তুমি বলছো , বুঝতে পারছো। 

জান্নাত মুখটা বিকৃত আকারের করে বললো , হয় আমারই তো তোমাকে আর তোমার মেয়েকে বুঝতে হবে। আমারে বোঝার কেউ নেই। যেদিন পরপুরুষের কাছে চলে যাবো , সেদিন বুঝবা।

আমি কোন কথার উত্তর না দিয়ে পাশের রুমে চলে গেলাম। 

তার একদিন পরে ১০ তারিখে দুপুরের খাওয়া শেষ করে শুয়ে আছি। মেয়ে আমার বুকের উপর শুয়ে আছে। মেয়েকে সরিয়ে দিয়ে আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো জান্নাত। আমি এক হাত মাথার উপর আর এক হাত দিয়ে জান্নাত কে জড়িয়ে রাখছি। জান্নাত বললো আমাকে কোলে নাও। 

আমি বললাম তুমি তো আমার কোলের ভিতরেই আছো। আর কিভাবে কোলে নিবো ? 

জান্নাত উত্তর দিলো পরপুরুষ যখন কোলে নিবে তখন দেখে দেখে শিখে নিও। তোমার ছোট ভাই কেমন করে দেখোনা।

 আমি বললাম আমি কি ওদের ঘরে ডুকে বসে থাকি। 

জান্নাত বললো -ঘরে ডুকে বসে থাকা লাগে, আন্দাজ করলেই তো হয়। ওরা সারাদিন ঘরের মধ্যে ডুকে করে কি।

 আমি কোন উত্তর না দিয়ে পাশের রুমে চলে গেলাম। মিনিট দুয়েক পরে জান্নাত  এসে আমার পাশে বসে তুমি এখানে বসে আছো কেন? আমি তো ভেবেছি তুমি বাথরুমে গেছো।

আমি খুব রাগান্বিত কন্ঠে বললাম- যা এখান থেকে, সর আমার পাশ থেকে জানোয়ারের বাচ্ছা জানোয়ার।

জান্নাত ও খুব রেগে গিয়ে বললো আমার কিন্তু এই ব্যবহার মনে থাকবে।

আমি ধমক দিয়ে বললাম আবার কথা বলিস, বেয়াদব।

Thursday, June 2, 2022

03.06.2022



 আজ প্রায় ১ বছর পর আবার প্রচন্ডভাবে অত্যাচারিত হয়ে জান্নাতকে কয়েকটা চড় থাপ্পড় মারলাম।

তখন সকাল সাড়ে ৬টা। জান্নাত প্রচন্ড বেগে চিল্লাতে লাগলো। এই ওঠো, এ-ই এ-ই। আমি ধরফরিয় লাফিয়ে উঠে, জান্নাতকে বললাম কি হয়েছে বলো। জান্নাত আমার দিকে তাকিয়ে একরাশ ঘৃনার ভরা চোখে তাকিয়ে, ঝাঁজালো কন্ঠে চিৎকার করতে লাগলো - এভাবে ক সংসার হয়ে?  এভাবে মানুষ বাঁচতে পারে?এটাকে কি জীবন বলে?

আমি হাত ইশারা করে বললাম আস্তে,আস্তে সাত সকালে তুমি এমন করছো কেনো?  কি হয়েছে বলো?  দাতে ব্যাথা বেড়েছে নাকি শরীর খারাপ লাগছে? 

জান্নাত বললো আরে রাখো তোমার দাতে ব্যাথা। তুমি আমাকে একটুও আদর করনা, আমার কাছে আসোনা, ইত্যাদি ইত্যাদি বকবক করতে লাগলো।

আমার বুকের উপর পা তুলে দিয়ে গলা জড়িয়ে শুয়ে থাকা আমার কলিজার টুকরো টাকে আস্তে করে পাশে সরিয়ে দিয়ে জান্নাতে হাত বাড়িয়ে ডাকলাম, আসো কাছে আসো। এখানে পাশে শুয়ে পড়ো। ২ থেকে ৩ বার ডাকলাম কিন্তু কাছে না এসে জান্নাত বললো তোমার কিছু আছে?  কোনো অনুভূতি আছে?  তুমি তো হিজড়া হয়ে গেছো। 

আমি আরও কোনো কথা না বাড়িয়ে পাশ ফরে চুপচাপ শুয়ে রইলাম। জান্নত একা একা বকবক করতে লাগলো। আমি না শোনার ভান ধরে চুপচাপ রইলাম।

মিনিট ২ পরে জান্নাত আমার পা ধরে নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলছে। এই কি বলছি তুমি শোনো না, শুনছো। ৩ থেকে ৪ বার এমন করার পর আমি বললাম। কি শুনবো?  তোমার এমন বাজে কথার কোন উত্তর আমার কাছে নাই।

জান্নাত উত্তর দিলো, বাজে কথা না উচিত কথা। উচিত কথা বললেই তোমার গায়ে লাগে। তখন উঠে গিয়ে কষে দুটো থাপ্পড় মারলাম। আর বললাম আমার খেয়ে পরে, আমার বুকে শুয়ে তুমি পরপুরুষের গুনগান করো,  তোমাকে অধঘন্টা করার পরেও, বলো এটুকু পারো, তোমার সব শেষ হয়ে গেছে, ১ থেকে ২ দিন তোমার কাছে না গেলে আমাকে হিজড়া বলে সম্ভোধ করছো। আবার তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা, অনুভূতি চাও।

আবার আমি যখন তোমাকে বোঝানোর শুরে বলি, তুমি এমন করে কেনো বলতেছো?  আমি তো কখনো তোমাকে কারো সাথে তুলনা করনি। তখন তোমার উত্তর আসে,  আমি হিজড়া গেছি, তোমার সাথে কারো তুলনা করার যোগ্যতা আমার নাই।

জান্নাত চুপ করে রইলো, কিন্তু এ-ই চুপ বোধোদ্বয়ের নয়। বুঝতে পারলাম যখন বিয়ের সময় পরানো আংটি ওনাকফুল খুলে ছুড়ে দিলো। আমিও কোনো কথা না বাড়িয়ে আংটি ও নাক ফলটা কুড়িয়ে এনে কাগজে পেচিয়ে যত্ন করে রেখে দিলাম। আর কোন কথা না বলে অফিসে আসার জন্য রেডি হতে লাগলাম। যদিও অফিসে আসার সময় হয়নি। জান্নাত বললো - তোমার কিডনি বিক্রি করে হলেও আমার দেন মোহর পরিশোধ করে দাও। আমি আর সংসার করবো না। আরও বললো তুমিতো আমার অত্যাচারে আত্মহত্যা করতে চাও , যাও করো গিয়ে, দেখি কেমন পারো।

আমি কোন কথা না বলে ঘর থেকে বের হয়ে চলে এলাম।

আগের দিনের ঘটটনাটা একটু বলি।

 ০১.০৬.২০২২ দুপুরে অফিস থেকে বাসায় এলাম লাঞ্চ করার জন্য। গোসল করে যখন খেতে বসলাম, আমি নিজে খাচ্ছি এবং মেয়েকে খাওয়াচ্ছি।

জান্নাত বললো- তোমার ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে তোমার শিক্ষা নেয়া উচিত। কপাল নিয়ে আইছে ওরা। সোনার কপাল। আর আমার  পোড়া কপাল।

আমি শুধু জান্নাতে দিকে একবার চেয়ে দেখলাম,  কোনো উত্তর দিলাম না। এই  কথা আমি প্রতিনিয়ত শুনছি। 

যেমন পাশের বিল্ডিংএর ওই বেটা , তার বউকে নিয়ে ঘুরতে বের হচ্ছে। ঐ বেটা এখন বাসায় তুমি কেনো এখনো অফিসে ইত্যাদি ইত্যাদি যা সহ্য করা আমার পক্ষে খুবই কঠিন হচ্ছে।

শুধু সন্তানের জন্য

 আমি চরম অসহায়। জীবন যুদ্ধে যার সাথে মাঠে নেমেছি  সেই আমার প্রতিদ্বন্দি। সে আর কেউ নয় আমার স্ত্রী। কেন বলছি কারন, আমার আয় করা টাকা থেকে বছরে...