৭ মে ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষ করে ঢাকার পথে রওনা করি। কোনো গাড়ির টিকিট না পেয়ে অবশেষে কাটা লাইনে রওনা হতে হলো। মাওয়া ঘাটে আসার পর জান্নাত জিদ ধরলো ফেরিতে পার হবে। লঞ্চে ওর ভয় লাগে। সাতার জানেনা তো তাই এই জিদ। বুঝতে পারলাম ওর সমস্যাটা তাই , সবাই গাড়ি থেকে নেমে ছুটছে লঞ্চ ঘাটের দিকে আমি ছুটছি উল্টোদিকে। একটা ভ্যানে করে ফেরিঘাটের দিকে ছুটলাম। ভ্যানওয়ালা যে ঘাটে নামালো সেখানে ফেরি নাই। ফেরি ভিরছে অন্য ঘাটে তাই ছুটলাম সেদিকে। ফেরির স্লাব নামানোর আগেই বেয়েছেয়ে শত শত লোক ফেরিতে পড়ে বসেছে। আমিও বাধ্য হয়ে জান্নাতকে নিয়ে সেটাই করলাম। ফেরিতে ওঠার পরে আর জানে জান নাই।
যেমন রোদ তেমন গরম, আমার ঘাড়ে ব্যাগ আর মেয়ে কোলে। দাঁড়ানোর যেখানে জায়গা নাই সেখানেতো বসার কথা চিন্তাই করা যায় না। মেয়েও তেমনি নাছোড় বান্দা কোল থেকে নামবে না। মেয়ে ঘেমে নেয়ে একাকার, মেয়ের গায়ের জামা খুলে দিলাম। আমার নাক মুখ কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে। মেয়ে তার জামা দিয়ে আমার মুখের ঘাম মুছে দিচ্ছে। এ যেন প্রবল ক্ষরার মাঝে প্রশান্তির সুশীতল বাতাস।জান্নাতও আমার পাশে দাড়িয়ে। ঘাট পর হয়ে এবার পরিবহনে ওঠার যুদ্ধ। অনেক ঠেলাঠেলি করে আমি প্রথমে গাড়িতে উঠলাম। হাতেও একটু ব্যাথাও পেলাম। তারপর সিট বুক করে জান্নাতকে গাড়িতে উঠালাম।
ঢাকার বাসায় পৌছাতে পৌছাতে রাত ৮ টা বেজে গেলো। বাসায় পৌছেই জান্নাত কাপড় খুলছে আর বলছে এতো কষ্ট করে মানুষ যায় , এর পর থেকে আমি আর বাড়ি যাবো না। তুমি একা একা যাবা। আমি কোন উত্তর দিলাম না। শুধু মনে মনে বললাম এমন ভাব আর এমন কথা বলছে, আমার মেয়ে আর আমি যেন অতি আরামে উনার কোলে উঠে এসেছি। জান্নাত নিজের মতো বকবক করতেই লাগলো । আমি কোন উত্তরা না দিয়ে বাজার করার জন্য বের হয়ে গেলাম। কারন ৮দিন পর ঢাকায় আসলাম। চাল ছাড়া ঘরে আর কোন বাজার নাই।
পরের দিন জান্নাত বলছে, হঠাৎ জান্নাত আমাকে বলছে তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না। আমি জান্নাতের মুখের দিকে চেয়ে পড়লাম। জান্নাত বললো এই কয়টা দিন থেকে আসলাম আমাকে একটু কোথাও ঘুরতে নিয়ে গেলে না। কতো আশা করেছিলাম ক্যান্টমেন্ট যাবো, ভূতের আড্ডায় যাবো। আমার কোন আশা কোন দিন পুরন হয় না। কপাল নিয়ে এসেছে ওরা।
আমি কোন উত্তর না দিয়ে ওর মুখের দিকে চেয়ে আছি।
জান্নাত আবার বলতে শুরু করলো , আমারা চলে আসার পরের দিন তোমার ছোট ভাই তার বউকে নিয়ে বেড়াতে গেছে। ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে বউ পালা শেখো। তোমার তো মুরদ নাই।
আমি বললাম তুমি বলছো , বুঝতে পারছো।
জান্নাত মুখটা বিকৃত আকারের করে বললো , হয় আমারই তো তোমাকে আর তোমার মেয়েকে বুঝতে হবে। আমারে বোঝার কেউ নেই। যেদিন পরপুরুষের কাছে চলে যাবো , সেদিন বুঝবা।
আমি কোন কথার উত্তর না দিয়ে পাশের রুমে চলে গেলাম।
তার একদিন পরে ১০ তারিখে দুপুরের খাওয়া শেষ করে শুয়ে আছি। মেয়ে আমার বুকের উপর শুয়ে আছে। মেয়েকে সরিয়ে দিয়ে আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো জান্নাত। আমি এক হাত মাথার উপর আর এক হাত দিয়ে জান্নাত কে জড়িয়ে রাখছি। জান্নাত বললো আমাকে কোলে নাও।
আমি বললাম তুমি তো আমার কোলের ভিতরেই আছো। আর কিভাবে কোলে নিবো ?
জান্নাত উত্তর দিলো পরপুরুষ যখন কোলে নিবে তখন দেখে দেখে শিখে নিও। তোমার ছোট ভাই কেমন করে দেখোনা।
আমি বললাম আমি কি ওদের ঘরে ডুকে বসে থাকি।
জান্নাত বললো -ঘরে ডুকে বসে থাকা লাগে, আন্দাজ করলেই তো হয়। ওরা সারাদিন ঘরের মধ্যে ডুকে করে কি।
আমি কোন উত্তর না দিয়ে পাশের রুমে চলে গেলাম। মিনিট দুয়েক পরে জান্নাত এসে আমার পাশে বসে তুমি এখানে বসে আছো কেন? আমি তো ভেবেছি তুমি বাথরুমে গেছো।
আমি খুব রাগান্বিত কন্ঠে বললাম- যা এখান থেকে, সর আমার পাশ থেকে জানোয়ারের বাচ্ছা জানোয়ার।
জান্নাত ও খুব রেগে গিয়ে বললো আমার কিন্তু এই ব্যবহার মনে থাকবে।
আমি ধমক দিয়ে বললাম আবার কথা বলিস, বেয়াদব।
No comments:
Post a Comment