Friday, October 22, 2021

23.10.2021



 গত ২১.১০.২০২১ তারিখ বৃহস্পতিবার জান্নাতকে টিকা দিতে নিয়ে যাই মিরপুর। টিকা দেয়া শেষ করে গিয়াস উদ্দিন ভাইয়ের টালিকো রেষ্টুরেন্টে লাঞ্চ করি। উত্তরায় ফিরতে ফিরতে ৪ টা বেজে যায়। উত্তরায় ফিরে একটু সময় অফিসে রেষ্ট নিযে এপেক্স থেকে ১৭৯০ টাকা দিয়ে জান্নাতকে একটি জুতা কিনে দেই। জুতাটি জান্নাত নিজে পছন্দ করে কিনেছে।

শুক্রবার ২২.১০.২১ সারাদিন বাসায় ছিলাম। সন্ধ্যায় বের হয়েছিলাম জান্নাতের জন্য ওষূধ কেনার জন্য।সাথে দুটো জামা নিয়ে বের হই । জামাদুটো চাপাতে হবে। এমন সময় মিলন ভাই ফোন করে। মিলন ভাই জরুরী তলব করে আমাকে। সাথে কপি ছবি নিতে বলে । তাই অফিসে গিয়ে এক কপি ছবি নিয়ে মিলন ভাইয়ের সাথে দেখা করি। মিলন ভাই একটা ফর্ম দেয় সেটা পুরন করে ছবিটা এটাচ করে দিই। ফর্মটি ছিলো উত্তরা ১নং আওযামীলীগের সদস্য ফর্ম। বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে নয়টা বেজে যায়। রাতটা খুব ভালোভাবেই কাটে। রাতে জান্নাত খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আমি অনেকক্ষন  জেগে ছিলাম ঘুম আসছিলো না। 

সকালে ঘুম ভাঙ্গে জান্নাতের মোবাইলে নাটক দেখার শব্দে। তখনও চোখে ঘুম। জান্নাত বললো -এই খানে দরজাল প্রথম দুনিয়ায় এসে কি করবে ? কি বলবে জানো ?

আমি শুয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ অবস্থায় বললাম- হমমম উনি প্রথম এসে তোমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলবে, তারপর বলবে একটা মজার নাটক চালাও দেখি। তোমার সাথে বসে নাটক দেখবে।

জান্নাত -আমার কথার কোন উত্তর দিলো না। মনে হয় নাটক দেখায় মনোযোগ দিয়েছে।

কিছুক্ষনপর অনুভব করলাম জান্নাত আমার গায়ের উপর শুয়ে পড়েছে। তখন বাজে সকাল নয়টা। জান্নাত বললো আমি রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম এখন আমাকে কিছু দিতে হবে। জান্নাতের কথা শুনে আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম। দেখি নয়টা ১০ বাজে। আমি বললাম ছাড়ো অফিসে যাবার সময় হয়ে গেছে। আর পাশে মেয়ে শুয়ে আছে ওর ঘুম ভাঙ্গার সময় হয়ে গেছে।

জান্নাত- ও আমি একটু কাছে এলাম আর অফিসে যাওয়ার সময় হয়ে গেলো। 

আমি বললাম এটা তুমি আমাকে জিজ্ঞাসা ন করে ঘড়ির দিকে তাকাও। 

রাগান্বিত কন্ঠে চিৎকারের সাথে জান্নাতের কথা গুলো ছিলো এমন - তোমার কোন অনুভূতি নাই, তুমি হিজড়া হয়ে গেছো , তুমি অপারগ পুরুষ। আমাকে এক বিন্দু সুখ দিতে পারোনা। 

আমি বললাম সকাল বেলা তুমি কি শুরু করলা। এটা কোন কথা।

জান্নাত বললো যাও তুমি , তোমার সাথে কথা বলতেও আমার ঘৃনা হচেছ। আরো অনেক কথা যা প্রকাশ করা বা লেখা সম্ভব না।

জান্নাতের কথাগুলো শুনে আমার এতো পরিমান রাগ হচ্ছিলো যে, খুব তাড়াতাড়ি আমি ঘর থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু জান্নাতের মুখ থাকছে না। একপর্যায়ে আর সহ্য করতে না পেরে আমি জান্নাতকে দু চারটে চড় থাপ্পর মেরে না খেয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসি।


Tuesday, October 19, 2021

আনজুমা-২


 আজ সকালে ঘুম ভাঙ্গলো জান্নাতের মোবাইলে দেখা নাটকের শব্দে। আমি ঘুম ভাঙ্গতেই আনজুমাকে বললাম পাখিটা ওঠো সকাল হয়ে গেছে। আনজুমা খুব তড়িঘড়ি করে  পাশ ফিরে উঠে বসে আমার কপালে গালে হাত বুলিয়ে চুমু খেয়ে বলছে ওঠো পাখি ওঠো। আমার প্রান জুড়িয়ে গেলো। মেযের এমন আচরনে। উঠে দেখি টেবিলে প্লেটে ভাত তরকারী দিয়ে রাখা আছে। আমি দাত ব্রাশ করলাম । মেয়েকে ও ব্রাশ দিলাম। আনজুমা টুটপেষ্ট খেয়ে ফেলে, তাই বেবি পেষ্ট ব্রাশে মাখিয়ে দিয়ে যতটুকু ব্রাশ করানো যায়। এটা  দাত ব্রাশ করানোর অভ্যাস তৈরির চেষ্টা । অবশ্যই অভ্যাসটা তৈরিও হচেছ। খাওয়া দাওযা সেরে,  দুটো পানির পট নিয়ে আমি অফিসে রওনা করলাম। 
 লাঞ্চ করার জন্য বাসায় গেলাম। গোসল করে নামাজ পড়ে দুপুরের খাওয়া শেষ করতে না করতে জান্নাত বললো আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। এখন ঘুমাবো।

আমি কোন কথা বললাম না চুপচাপ খেয়ে মেয়েকে নিয়ে খেলা করতে লাগলাম ।কারন আমার ঘুম আসছে কিন্তু মেয়ের ঘুম আসছে না । তাই আমি ঘুমিয়ে গেলে ও কি করবে। এমন সময় আমার মোবাইরে নটিফিকেশন আওয়াজ হলো। জান্নাত পাশ ফিরেই বললো -মানুষকে তিলে তিলে মারায় তুমি ওস্তাদ। এক তিল শান্তি নাই সংসারে। আর এই একটা বেজাত জন্মাইছে। ওর জন্যও কোন শান্তি নাই। 
আমি কোন উত্তর না দিয়ে । আসরের নামাজের জন্য তৈরি হলাম। নামাজ শেষ করে আবার অফিসে রওনা করলাম।

আমার মেয়ে -১

 আমার মেয়ের মতো মেয়ে কোটিতে হয় কিনা সন্দেহ। আমার মেয়ে বলে বলছি না। আমার বয়সে অনেক বাচ্চা আমি দেখেছি। আত্ময় স্বজনের মধ্যে , বন্ধু বান্ধবের মধ্যে। কিন্ত আমার মেয়ের মতো এতো শান্ত শিষ্ট বাচ্চা আমি দেখিনি। ওর ক্ষুধা না পেলে ও কাদে না। তাও আবার খুব বেশি ক্ষুধা পেলে কাদে । সারাদিন একা একা খেলা করবে। নিজের মতো নিজে খেলানা নিয়ে মনের আনন্দে হইচই করতে থাকবে। উচ্চস্বরে নিজের ভাষায় কিযে গাইতে থাকে তার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝার সাধ্য আমার নাই।অথচ এই মেয়ের সাথে সারাক্ষন খেচখেচ করতেই থাকে জান্নাত। অফিসে থেকে বাসায় ফিরে প্রতিদিনই আমার শুনতে হয়। মেয়ের অত্যাচারে জান্নাত নাকি অতিষ্ট। অথচ আমি যতক্ষন বাসায় থাকি মেয়ে ততক্ষন আমার সাথে কতো সুন্দর খেলা করে। আহ্লাদ করে। দৌড়ে এসে গালে চুমু দিয়ে যায়। কোলে রাখতে চাইলে কোলে থাকতে চায় না। ঘরে ছুটা ছুটি খেলা ধুলা করতে চায়। 

রাত যতই হোক আমি বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত ওর ঘুম আসেনা। ওর মা অনেক বকাঝকা করে মাঝে মাঝে ঘুম পড়ায়। আমার হাতের উপর মাথা রেখে অথবা ওর মায়ের দিকে মাথা আর আমার বুকের উপর পা তুলে না দিলে মেয়ের ঘুমই আসে না। 

মেয়েটার একটু সমস্যা আছে ।

19.10.2021

 

গতকাল দুপুরের কথা । আমি বাসায় গিয়ে মেয়েকে গোসল করিয়ে। ঘরে বসে বসে মো্বাইল টিপছি।জান্নাত আমার সামনে দিয়ে ঘুরছে আর বলছে আমি একটু ফেসবুকে হায় হ্যালো করেছি তাতে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেছে ।যত অত্যাচার সব আমার উপর বলে মেয়ের মাথায় একটা খোচা মেরে বলছে তুই পেটে এসেই আমার সর্বনাশ করেছিস। তোর জন্য মুখ বুজে সব সহ্য করছি। তুই হচ্ছিস সব নষ্টের গোড়া।  আমি আমি চুপচাপ সব শুনছি কোন কথার কোন উত্তর দিলাম না।বুঝতে পারছি অশান্তি করার জন্য ওর শরির কামড়াচ্ছে। এমন সময় ওয়াস রুমের কাছে গিয়ে জান্নাত চিৎকার করেে উঠলো এই এদিকে আসো। আমি এগিয়ে এসে বললাম কি হয়েছে। 

জান্নাত -আমার কাপড়ের বালতিতে পানি দিয়েছো তুমি ?

হ্যা আমি দিয়েছি। শুকনো কাপড় বালতির ভিতর, তারপর এতোখানি ভালো পানি ফেলে দেবো তাই বালতির মধ্যে ঢেলে দিয়েছি।

জান্নাত- তোমার সাথে সংসার করার মতো কোন পরিবেশ নাই।

আমি হতবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম। এই কারনে এই কথা আসে কিনা আমার জানা নাই। বলে চুপ হয়ে গেলাম।

জান্নাত কতক্ষন একা একা যা খুশি বলে গেলো অনুরুপ ভাবে। আমি চুপচাপ বসে মেয়েকে নিয়ে খেলা করছি। যেন কিছুই শনছি না বা কিছুই হয়নি।

বিকাল ৪টার দিকে জান্নাত বললো ডাক্তারের কাছ যেতে হবে। আমি কোন প্রশ্ন না করে বললাম রেডি হও। ডাক্তার দেখিয়ে মেয়েকে এবং ওকে নিয়ে রাত ৮ টা পর্যন্ত আমরা রাস্তায় রাস্তায় হাটলাম ঘুরলাম। 

রাতে ঘুম সকালে উঠে অফিসে রওনা করলাম। দুপুরে বাসায় ফিরে জান্নাতরে করোনা টিকার নিবন্ধন করলাম। আমি গোসলে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি। তখন আড়াইটা বাজে। আমি লুঙ্গি নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকবো । ঘরে তাকিয়ে দেখি জান্নাত খেতে বসে গেছে। আমি গোসল শেষ করে এসে খেতে বসলাম। ততক্ষনে জান্নাত খাওয়া শেষ করে মোবাইলে নাটক দেখতে বসেছে। আমি খাওয়া দাওয়া শেষ করে একটু শুয়ে পড়লাম। বেলা  সাড়ে ৪টার দিকে উঠে বাতাবি লেবু নিয়ে বসলাম।তখনও জান্নাত মোবাইলে নাটক দেখছে। আমার ঘরে রেকসিনের সোফা। আমি সোফায় বসে বাতাবী লেবুর খোসা ছাড়িয়ে সোফার উপর রাখছি আর লেবুর কোয়াগুলো প্লেটে রাখছি। বলে রাখছি এটা লেবুর উপরের মোটা খোসা না, ভিতরের সাদা খোসাটা্ । মেয়ে আমার সাথে লেবু ছেনছে। এমন সময় জান্নাত আমাকে উদ্দেশ্যে করে বলছে । কি করছো তুমি ? খুব গম্ভির গলায়।

আমি কিছু বলছি না। কারন ওর কথার টোনটা ভালো মনে হলোনা। আমার কাজ আমি করছি।

আবার জান্নাত বললো আমার কথা শোনোনি ?

আমি বললাম কি হয়েছে ? এমন করছো কেন ?

জান্নাত- খোসা তুমি সোফায় রাখছো কেন ?

আমি বললাম এটা ভেজা কিছুনা যে, সোফায় লেগে নষ্ট হয়ে যাবে। এগুলো ফেলে একটা মোছা দিলেই পরিস্কার হয়ে যাবে। 

শুরু হয়ে গেলো বকবকান। আমি আর কোন উত্তর দিলাম না। মেয়েকে নিয়ে লেবু ছাড়ানো শেষ করে। সোফা পরিস্কার করে। হাত ধুয়ে এসে জানলায় টাঙ্গানো পুরানো গামছা নিয়ে হাত মুছলাম। 

জান্নাত আবারও খেকিযে উঠলো- এই গামছা ধরলা কেনো ? ঐখানে চেয়ারে একটা গামছা আছে না ? 

আমি কোন উত্তর দিলাম না। কিন্তু জান্নাতের মুখ বন্ধ হলো না। মেয়েকে উদ্দেশ্যে সেই আগের মতো বলতে শুরু করলো। ১৫ মিনিটের মতো একা একা এমন আজে বাজে কথা বলতে শুরু করলো। আমার জীবনটা শেষ করে ফেলছে। জানিনা কোন পাপে এমন কুলাঙ্গারের ঘরে আল্লাহ আমারে পাঠিয়েছে। একটা অমানুষ, এক বিন্দু সময়ও শান্তিতে থাকতে দেয় না। ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি কোন কথার কোন উত্তর না দিয়ে চুপ চাপ সব শুনছি আর আফিসে আসার জন্য জামা প্যান্ট পরছি। মেয়েকে একটু আদর করে বেরিয়ে এলাম অফিসের পথে।

এই দুইদিন যে এমন করছে তা নয়। প্রতিদিন কোন কারন ছাড়াই এভাবে যা না তাই বলা শুরু করে। 

১৫ তারিখে ওকে নিযে বের হয়ে ওর ইচ্ছা মতো ওকে কাপড় কিনে দিলাম। ১৬ তারিখ সন্ধ্যা ৭টার সময় বলছে । চলো টঙ্গি বাজারে যাবো প্লাজু কিনতে। আমি বললাম এখন যেতে যেতেই সাড়ে আটটা নয়টা বেজে যাবে। এখন কিভাবে যাবো। আগামী কাল ৪টার  দিকে যাবো। 

আমি অফিসে থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে মেয়েকে খাওয়ালাম। জান্নাত খাওয়া শেষ করে বলছে এখন একটু ঘুমাবো। আমি কিছু বললাম না। ও ঘুমিয়ে পড়লো। সাড়ে ৫টার দিকে উঠে বলছে টঙ্গি বাজারে যাবানা। 

আমি বললাম এতক্ষন মনে ছিলোনা। গতকালকে বলে রাখছি যে, ৪টার দিকে যাবো। আর এখন সাড়ে ৫টায় তুমি এই কথা বলছো। তোমার রেডি হতেই তো এক ঘন্টার বেশি লাগে। 

কে শোনে কার কথা জান্নাত সব দোষ আমার কাধে চাপিয়ে বলছে। জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে গেলাম একটা কাজ যদি ঠিক মতো করতে পারে। আমার কপালে যে, কেন এমন হলো। কোন কথায় কান না দিয়ে আমি বললাম রেডি হও। 

সেখান থেকে মার্কেট করে ফিরলাম রাত ১০টার দিকে। আমি মাজায় খুব ব্যাথা পেয়েছি। মেয়েটা তেমন হাটতেই চায়না্ শুধু কোলে কোলে।ওর বয়স ২বছর ৩মাস। আর কোলে তো নিতে হয় আমার । আর যদিও হাটতে চায় , সব জায়গায় তো ছেড়ে দেয়া যায় না। রাস্তায় গাড়ির যে চাপ। এই পর পর চারটে পাচটা দিন মেয়েকে কোলে কোলে রাখতে রাখেতে আমার অবস্থা কাহিল। তারওপর যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন তো খুব কষ্ট হয় । আর জান্নাতের ভাষ্য হলো মেয়ে ঘুমিয়ে আছে বিরক্ত করছে না , চলো ঐ মার্কেট থেকে  একটু ঘুরে আসি। ঐটা শেষ হলে চলো পাশের টায় যাই। এর মধ্যে মেয়ে েএকবার ঘুম ভেঙ্গে আবার ঘুমিয়ে পড়ে।

Sunday, October 10, 2021

10.10.2021

 

১০ সেপ্টম্বরের পর থেকে আমি জান্নাতের সাথে তেমন কথা বলিনি। যতটুকু দরকার ততোটুকু। কিছু বললে উত্তর দিয়েছি। না বললে আমিও চুপ থেকেছি। এভাবে ৭/৮ দিন পার হবার পর অফিসে আসার সময় জান্নাত আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে বললো আমাকে মাফ করে দাও। আমি বললাম তোমাকে আমি মাফ করে দিয়েছি কিন্তু আল্লাহ মাফ করবে কিনা জানিনা। 

এভাবেই দিন চলতে লাগলো কিন্তু থেমে নেই জান্নাতের মুখের কর্কশ ভাষা। আমি কোন উত্তর দেই না, না শোনার ভান করে থাকি। যেমনঃ ৮ অক্টোবর দুপুরে আমি মেয়েকে নিয়ে ঘরে বসে আছি। 

জান্নাত ডাকলো একটু এদিকে আসবে ? আমি ডাক শুনে রান্না ঘরে গেলাম। আমাকে দেখে জান্নাত বললো সিঙ্ক থেকে পানি নামছে না। আমি বললাম হয়তো ময়লা জমে পাইপ বন্ধ হয়ে গেছে তাই পানি যাচ্ছে না। 

জান্নাত বললো তোমর লজ্জা করে না। একথা বলতে । পানি যচ্ছে না দেখে দিবা। লজ্জা করা উচিত তোমার। 

আমি কোন কথা বললাম না। আবার ঘরে চলে এলাম। জান্নাত রান্নাঘর থেকে বের হলে, আমি গিয়ে পাইপটা পরিস্কার করে দিয়ে ঘরে এসে আবার মেয়ের সাথে খেলায় মাতলাম।

৯ অক্টোবর আমার বস ঢাকার বাইরে যাবে। তাই ঐদিন সকাল সাড়ে ৬ টায় আমি না খেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসি। বসকে গাড়িতে রওনা করিয়ে দিয়ে আমি বাজারে যাই। কারন জান্নাত বেশ কিছু দিন ধরে বলছে শৈল মাছ,  ফলি মাছ এবং চান্দা মাছের কথা। তাই ভাবলাম আজকে একটু সময় পেয়েছে যাই বাজারে গিয়ে মাছ কিনি। তিনটা বাজার ঘুরে শৈল মাছ পেলাম না, ফলিমাছ এবং ছোট ছোট চান্দা মাছ পেলাম। হাফ কেজি চান্দামাছ, এক কেজি ফলি মাছ কিনলাম। 

বাসায় ফিরে বুঝলাম আমি অনেক বড় অপরাধ করেছি মাছ নিকে। একদিন আগে পুটি মাছ কিনেছিলাম। এবং বলেছিলাম মাছ ফ্রিজে রেখে দাও । পরে সময় সুযোগ করে কুটে নিও। আজ সেই পুুটি মাছ কুটছে। ভাষাগুলো ছিলো এমন আমারে মানুষ মনে হয়না। এভাবে কষ্ট দেয়ার চেয়ে একবারে মেরে ফেলো। শুধু মেয়েটার জন্য মুখ বুজে সব সহ্য করছি। না হলে কবেই সব ছেড়ে চলে যেতাম।

আমি বললাম তুমি বেশ কয়েকদিন ধরে বলছো এই মাছ গুলোর কথা তাই এই মাছগুলো আনছি। সব সময় এই মাছ পাওয়া যায় না, এমনকি আমিও ঠিকমতো সময় সুযোগ পাইনা বাজারে যাওয়ার।আচ্ছা ঠিক আছে আর আনবো না। 

তখন আনুমানিক ১২টা বাজে।সকাল থেকে আমি না খাওয়া। যাই হোক কাপড় চেঞ্জ করছি। এমন সময় জান্নাত আবার বললো ঘরে খাবার কিছু নাই, ভাত রান্না করিনি। মুড়ি আছে মিষ্টি আছে ওগুলো খাও। আমি কিছু না বলে চুপচাপ মুড়ি খেয়ে খাটে শুয়ে রইলাম।দুইটার দিকে নিজে গোসল করলাম মেয়েকে গোসল করালাম। 

জান্নাতের মাছ কোটা শেষ , জান্নাত এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে বলছে। অনেক কষ্ট হয়ে গেছে এখন একটু ঘুমাবো।আমি কিছু বললাম না, চুপচাপ শুয়ে আছি। বুঝলাম কোন উত্তর দিলেই ঝগড়া শুরু করবে। দুপুরের ভাত যখন খেতে বসলাম কখন আসরের আযান দিচ্ছে। খেয়ে একটু আবার শুয়ে পড়লাম। মেয়েটা জান্নাতের কাছে গেলেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে, গালিগালাজ করছে। আমি মেয়েটাকে বললমা আম্মু আমার কাছে আসো বলে মেয়েকে কোলের মধ্যে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে, যাই হোক উঠে বাইরে বের হলাম , চাউল কেনার জন্য। রাত সাড়ে ৯টার দিকে চাউল, দুটো লাইট, ও জান্নাতের জন্য ফুচকা নিয়ে বাসায় ফিললাম। জান্নাত ফুচকা খাচ্ছে আমি ছোপায় বসে মোবাইল টিপছি, জান্নাত বললো ফুচকা খাবা আমি বললাম না খাবো না।

ফুচকা খাওয়া শেষ করে জান্নাত বললো , আসো লুডু খেলবো। খাটে ওঠো। আমি খাটে গিয়ে বসলাম। জান্নাত আবার বললো মোবাইল রাখো। আমি বললাম তুমি তো এখনো খাটেই ওঠোনি, রেডি করো। জান্নাত খাটে উঠে বসে লুডু মেলছে। এমন সময় আমি মোবাইলে একটি ছবি দেখে হেসে ফেললাম। 

আমার হাসি দেখে জান্নাত বললো তোমার লজ্জা করে না , হাসছো্। আমি শুধু অবাক নয়, হতভম্ব হয়ে বললাম কেন ? আমি হাসলে তোমার সমস্যা কোথায় ?

জান্নাত বললো নিজেকে প্রশ্ন করো। 

আমি বললাম , কারনটা তুমি বলো, যদি তুমি জানো। 

জান্নাত বললো- তুমি ফিডার খাও নাকি ? কিছু বোঝনা, না বোঝার ভান করো। 

আমার সাথে জান্নাতের  কোনরুপ কথা কাটাকাটি বা অন্য কিছুই হয়নি তারপর মুখ বুজে থেকেও প্রতিনিয়ত এ ধরনের কথা শুনতে আমার খুবই খারাপ লাগছে। তাই আমি জানোয়ার , কুকুর, বেয়াদব, ইত্যাদি বলে নিজের মতো নিজ আবার চুপ হয়ে গেলাম। 








Tuesday, October 5, 2021

০৫.১০.২১

 ০৫.১০.২১

কিযে করি ভেবে পাই না।

জান্নাতের আচরণ স্বভাব বদলালো না। একমাসও কাটেনি সেই দুর্ঘটনার ।

প্রতিদিন ফোন করে কখন বাসায় আসবা ? আজকেও দেরি হবে ? এই দুটি প্রশ্ন প্রতিদিন একশ বার করে ‍শুনতে হয়। আর কতো সহ্য করবো ?

আব্বার অবস্থা খুব খারাপ, ডাক্তার বলেছে আর আশা নাই। বাড়িতে নিয়ে যান। তারপরও ভাইয়া বললো যতক্ষন থাকে হাসপাতালেই থাকুক। আব্বার রক্ত বমি হচ্ছে। প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন দুঃসংবাদ আসছে। মনের অবস্থা খুবই খারাপ।

আমার অফিসেও প্রচন্ড চাপ। টেনশন আর ভারাক্রান্ত মনে কোন রকম কাজ করছি। ভূল হলেও বকা শুনছি না হলেও বকা শুনছি। মাঝে মাঝ মনে হচ্ছে বাথরুমে গিয়ে একটু কেদে আসি। 

কোন কষ্টই কষ্ট হতো না , যদি ঘর ঠিক থাকতো। কিন্তু আমার এতোটাই খারাপ কপাল যে, ঘরের যন্ত্রনাই আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে।

বাইরের সকল ঝুট ঝামেলা সামলে মনটাকে শক্ত করে যখন বাসায় ফিরি তখন শান্তির ঘুম ঘুমানোর আশায় যখন বিছানায় যাবার মতো সৌভাগ্য আমার হয় না। সারাদিন খেয়ে না খেয়ে যার জন্য জীবন শেষ করছি। বাসায় গিয়ে তার পোড়া মুখ দেখতে হয়। কোন কারন ছাড়াই নানান কথা । বালিশে মাথা রেখে সুখের নিদ্রা তো দুরের কথা কষ্টে বুকটা ফেটে যায়। দুচোখর পাতাই বন্ধ হয়না। কখনো কখনো বুক ফেটে কান্না আসে। 

যদি এমন হতো যে, বছরে দু একবার এমন ঘটনা তাহলে হয়তো মনকে শান্তনা দেয়া যেতো কিন্তু আল্লাহর দিন কোনটা বাদ নাই। যদিও দু,একদিন ভালো থাকে তারপর শুরু হয় আরো ভয়ানক পরিস্তিতি। চারটে বছরে ৬ মাসও ভালো কাটেনি। মেয়েটার উপরও যেভাবে অত্যাচার করে তা বলার না। দুধের বাচ্চাকে যা না তাই বলে গালি দিতে থাকে।

মেয়েটার ভবিষ্যত চিন্তা করলে শরীরটা ঠান্ডা হয়ে যায়, ভিজে যায় দুচোখের পাপড়ি।



শুধু সন্তানের জন্য

 আমি চরম অসহায়। জীবন যুদ্ধে যার সাথে মাঠে নেমেছি  সেই আমার প্রতিদ্বন্দি। সে আর কেউ নয় আমার স্ত্রী। কেন বলছি কারন, আমার আয় করা টাকা থেকে বছরে...