১০ সেপ্টম্বরের পর থেকে আমি জান্নাতের সাথে তেমন কথা বলিনি। যতটুকু দরকার ততোটুকু। কিছু বললে উত্তর দিয়েছি। না বললে আমিও চুপ থেকেছি। এভাবে ৭/৮ দিন পার হবার পর অফিসে আসার সময় জান্নাত আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে বললো আমাকে মাফ করে দাও। আমি বললাম তোমাকে আমি মাফ করে দিয়েছি কিন্তু আল্লাহ মাফ করবে কিনা জানিনা।
এভাবেই দিন চলতে লাগলো কিন্তু থেমে নেই জান্নাতের মুখের কর্কশ ভাষা। আমি কোন উত্তর দেই না, না শোনার ভান করে থাকি। যেমনঃ ৮ অক্টোবর দুপুরে আমি মেয়েকে নিয়ে ঘরে বসে আছি।
জান্নাত ডাকলো একটু এদিকে আসবে ? আমি ডাক শুনে রান্না ঘরে গেলাম। আমাকে দেখে জান্নাত বললো সিঙ্ক থেকে পানি নামছে না। আমি বললাম হয়তো ময়লা জমে পাইপ বন্ধ হয়ে গেছে তাই পানি যাচ্ছে না।
জান্নাত বললো তোমর লজ্জা করে না। একথা বলতে । পানি যচ্ছে না দেখে দিবা। লজ্জা করা উচিত তোমার।
আমি কোন কথা বললাম না। আবার ঘরে চলে এলাম। জান্নাত রান্নাঘর থেকে বের হলে, আমি গিয়ে পাইপটা পরিস্কার করে দিয়ে ঘরে এসে আবার মেয়ের সাথে খেলায় মাতলাম।
৯ অক্টোবর আমার বস ঢাকার বাইরে যাবে। তাই ঐদিন সকাল সাড়ে ৬ টায় আমি না খেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসি। বসকে গাড়িতে রওনা করিয়ে দিয়ে আমি বাজারে যাই। কারন জান্নাত বেশ কিছু দিন ধরে বলছে শৈল মাছ, ফলি মাছ এবং চান্দা মাছের কথা। তাই ভাবলাম আজকে একটু সময় পেয়েছে যাই বাজারে গিয়ে মাছ কিনি। তিনটা বাজার ঘুরে শৈল মাছ পেলাম না, ফলিমাছ এবং ছোট ছোট চান্দা মাছ পেলাম। হাফ কেজি চান্দামাছ, এক কেজি ফলি মাছ কিনলাম।
বাসায় ফিরে বুঝলাম আমি অনেক বড় অপরাধ করেছি মাছ নিকে। একদিন আগে পুটি মাছ কিনেছিলাম। এবং বলেছিলাম মাছ ফ্রিজে রেখে দাও । পরে সময় সুযোগ করে কুটে নিও। আজ সেই পুুটি মাছ কুটছে। ভাষাগুলো ছিলো এমন আমারে মানুষ মনে হয়না। এভাবে কষ্ট দেয়ার চেয়ে একবারে মেরে ফেলো। শুধু মেয়েটার জন্য মুখ বুজে সব সহ্য করছি। না হলে কবেই সব ছেড়ে চলে যেতাম।
আমি বললাম তুমি বেশ কয়েকদিন ধরে বলছো এই মাছ গুলোর কথা তাই এই মাছগুলো আনছি। সব সময় এই মাছ পাওয়া যায় না, এমনকি আমিও ঠিকমতো সময় সুযোগ পাইনা বাজারে যাওয়ার।আচ্ছা ঠিক আছে আর আনবো না।
তখন আনুমানিক ১২টা বাজে।সকাল থেকে আমি না খাওয়া। যাই হোক কাপড় চেঞ্জ করছি। এমন সময় জান্নাত আবার বললো ঘরে খাবার কিছু নাই, ভাত রান্না করিনি। মুড়ি আছে মিষ্টি আছে ওগুলো খাও। আমি কিছু না বলে চুপচাপ মুড়ি খেয়ে খাটে শুয়ে রইলাম।দুইটার দিকে নিজে গোসল করলাম মেয়েকে গোসল করালাম।
জান্নাতের মাছ কোটা শেষ , জান্নাত এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে বলছে। অনেক কষ্ট হয়ে গেছে এখন একটু ঘুমাবো।আমি কিছু বললাম না, চুপচাপ শুয়ে আছি। বুঝলাম কোন উত্তর দিলেই ঝগড়া শুরু করবে। দুপুরের ভাত যখন খেতে বসলাম কখন আসরের আযান দিচ্ছে। খেয়ে একটু আবার শুয়ে পড়লাম। মেয়েটা জান্নাতের কাছে গেলেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে, গালিগালাজ করছে। আমি মেয়েটাকে বললমা আম্মু আমার কাছে আসো বলে মেয়েকে কোলের মধ্যে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে, যাই হোক উঠে বাইরে বের হলাম , চাউল কেনার জন্য। রাত সাড়ে ৯টার দিকে চাউল, দুটো লাইট, ও জান্নাতের জন্য ফুচকা নিয়ে বাসায় ফিললাম। জান্নাত ফুচকা খাচ্ছে আমি ছোপায় বসে মোবাইল টিপছি, জান্নাত বললো ফুচকা খাবা আমি বললাম না খাবো না।
ফুচকা খাওয়া শেষ করে জান্নাত বললো , আসো লুডু খেলবো। খাটে ওঠো। আমি খাটে গিয়ে বসলাম। জান্নাত আবার বললো মোবাইল রাখো। আমি বললাম তুমি তো এখনো খাটেই ওঠোনি, রেডি করো। জান্নাত খাটে উঠে বসে লুডু মেলছে। এমন সময় আমি মোবাইলে একটি ছবি দেখে হেসে ফেললাম।
আমার হাসি দেখে জান্নাত বললো তোমার লজ্জা করে না , হাসছো্। আমি শুধু অবাক নয়, হতভম্ব হয়ে বললাম কেন ? আমি হাসলে তোমার সমস্যা কোথায় ?
জান্নাত বললো নিজেকে প্রশ্ন করো।
আমি বললাম , কারনটা তুমি বলো, যদি তুমি জানো।
জান্নাত বললো- তুমি ফিডার খাও নাকি ? কিছু বোঝনা, না বোঝার ভান করো।
আমার সাথে জান্নাতের কোনরুপ কথা কাটাকাটি বা অন্য কিছুই হয়নি তারপর মুখ বুজে থেকেও প্রতিনিয়ত এ ধরনের কথা শুনতে আমার খুবই খারাপ লাগছে। তাই আমি জানোয়ার , কুকুর, বেয়াদব, ইত্যাদি বলে নিজের মতো নিজ আবার চুপ হয়ে গেলাম।
No comments:
Post a Comment