Monday, December 5, 2022

05.12.2022





এ এক অদৃশ্য যন্ত্রনা। কাউকে বোঝানো যায় না। প্রকাশ করাও যায় না। প্রতিদিন একই কথা, সকাল সন্ধ্যা।
সকাল ১০টায় অফিসে অসার পর এক এক করে কাজের চাপ বাড়তে থাকে। এর মধ্যে জান্নাত বার বার ফোন দিতে থাকে। ফোনে জান্নাতের একটাই কথা, আমার মন ভালো লাগছে না। 
কখন অফিসে থেকে আসবা ?
আমি এখন কি করবো ?
জান্নাতের এসব প্রশ্নের কোন উত্তর আমি খুজে পাইনা। কারন ঘন্টা দুয়েক আগে বাসা থেকে এলাম। মানুষের সামনে না পারি কোন উত্তর দিতে। না পারি বুঝিয়ে কিছু বলতে। চুপচাপ জান্নাতের কথা হজম করতে হয়। 
যাই হোক এভাবেই সকালের অফিস শেষ করে ২টা থেকে আড়াইটার মধ্যো বাসায় পৌছে গেলাম। গোসল খাওয়া দাওয়া। শেষ করে মেয়ের সাথে জান্নাতের সাথে একটু দুষ্টিুমি করে সাড়ে চারটার সময় অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। সাড়ে ৬ টার দিকে আবার ফোন শুরু হলো। জান্নাতের ভাষার কোন পরিবর্তন নাই।  সেই একই রকম কথা কখন আসবা ? অফিসে কি করো ? আমি এখন কি করবো, আমার মন ভালো লাগছে না। কিছু ভালো লাগছে না। তুমি স্বামী নামের কলঙ্ক । আমাকে একটুও সময় দাও না। 
তখন আমি বললাম এইযে, সাড়ে চারটা পর্যন্ত বাসায় থাকলাম তখন কাকে সময় দিয়েছি ? তার পর জান্নাতের যে সব ভাষা বের হতে লাগলে তা উচ্চারন করাও লজ্জাকর। 
জান্নাত সবই জানে তারপরও আমাকে যন্ত্রনা দিয়ে কি পায় । এক আল্লাহ জানে। 
ওর ভিতরে তীল পরিমান লজ্জা নাই। এতো বুঝালাম, বকাঝকা করলাম, গায়ে পর্যন্ত হাত তুললাম, ওর বাবা মাকে অপমানর সাথে কথা বললাম তারপরও বাজে স্বভাব বদলালো না।
যে মেয়ে নিজের বাবা মাকে অপমান করতে পারে তার মধ্যে আবার কি গুনাগুন থাকতে পারে আর  মানুষকে ভালো রাখার গুন তো দুরের কথা। 
আমার মেয়ের কথাতো বাদই দিলাম। কথায় কথায় মেয়েকে গালিগালাজ করতে থাকে। চিতকার করে বাজে কথা বলতে থাকে। মেয়ের বয়স মাত্র তিন বছর। 
তিন বছরের মেয়ে যদি তার ভূলের কারনে এমন বাজে বাজে কথা শোনে, তাহলে যে ধামড়ি বকছে তার ভূল হলে তাকে কি করা দরকার ?

Thursday, June 16, 2022

16.06.2022

 


এভাবেই চলছে দিন। আমি জান্নাতের সাথে তেমন না পারতে কথা বলিনা। অফিস থেকে বাসায় গিয়ে নিজের মতো করে ভাত তরকারী নিয়ে খেয়ে দেয়ে শুয়ে থাকি। জান্নাত ও তার মতো। সারাদিন মোবাইল নিয়েই থাকে। সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গে ওর মোবাইলে কথা বলার শব্দে, আবার রাতে বাসায় ফিরেও দেখি সেই মোবাইল হাতে। আমি নিজের মতো করে হাতমুখ ধুয়ে, প্লেট ধুয়ে ভাত নিয়ে খেতে বসি। 

পক্ষান্তরে আমি আমি অফিস থেকে বাসায় ফিরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে । যদি একটু মোবাইল নিয়ে বসি তাহলে জান্নাতের মুখের দিকে তাকানো যায় না। মুখ খানা মুখপোড়া হনুমানের মতো করে এমন ভাব করে যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। 

সকালে আমি সেভ করছি জান্নাতের চিতকার, আমার উদ্দেশ্যে তোমার স্বাভাব এখনো ভালো হয়ন। আমি কোন উত্তর দিচ্ছি না। এবার আমার কাছাকাছি এসে বললো ঐ মেয়ের সাথে তোমার এখনো যোগাযোগ আছে। 

আমি বললাম - জুতা দিয়ে পিটিয়ে মুখ ভেঙ্গে দেবো। এই বেয়াদপ কোথার মেয়ে। 

জান্নাত বললো- এই যে রানু তোমাকে  ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। আমি বললাম দেখি কোথায় ?

দেখলাম রোহান তানভির নামে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পেন্ডিং । প্রায় ১বছর আগে পাঠিয়েছে। নামের উপরে  ৩২ ডব্লিউ লেখা (32w)। তাতে বুঝলাম ৩২ সপ্তাহ আগে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। আমি জানিনা এই রোহান তারভির কে ? কিন্তু জান্নাত জানে। ও বলছে এটা রানুর ছেলে। 

আমি জান্নাতকে বললাম তুমি, তোমার এই স্বভাব ছাড়ো। ভালো হয়ে যাও। কে শোনে কার কথা। মানুষ হলে তো শুনতো। শুরু করলো গালিগালাজ আজে বাজে কথা, সাথে মেয়েকে ও গালিগালাজ। রাগে আমার শরীর জ্বলতে লাগলো। কোন কথার কোন উত্তর না দিয়ে অফিসের  উদ্দেশ্যে রওনা করালাম।  

আল্লাহ ভালো জানে কতো দিন আমার আর আমার নিস্পাপ মেয়ের এই নির্যাতন সইতে হবে। মেয়েটা যদি বিছানায় একটু পানি ফেলে , সাথে সাথে মেয়েকে বিশ্রি ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে আর বলতে থাকে  এই সংসারে আর শান্তি নাই। বালের সংসার, বালের একটা মেয়ে, জীবনটা ধ্বংস করে দিলো। জীবনটা কয়লা করে দিলো ইত্যাদি। আবার রাতে বা দিনে মশায় কামড়ালেও সংসারের আর আমার মেয়ের দোষ। শুরু হয় গালিগালাজ। 

১৩ই জুন জান্নাতের জন্মদিন ছিলো। একটা মোবাইল কিনে দিয়েছি। ভালো মন্দ কিছুই বললো না। তারপরও আমার মোবইল নিয়ে টিপতে থাকবে। আমি কয়েকবার বলেছি। আমি তো তোমার মোবাইল ধরি না। তুমি আমার মোবাইল ধরবা কেন ? জান্নাত বলে। আমার মোবাইল তুমি ধরতে পারবা না কিন্তু আমি তোমার টা ধরবো। যা খুশি তাই করবো। 

আমি কোন উত্তর দিলাম না।  

Friday, June 3, 2022

03.06.2022

 

৭ মে ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষ করে ঢাকার পথে রওনা করি। কোনো গাড়ির টিকিট না পেয়ে অবশেষে কাটা লাইনে রওনা হতে হলো। মাওয়া ঘাটে আসার পর জান্নাত জিদ ধরলো ফেরিতে পার হবে। লঞ্চে ওর ভয় লাগে।  সাতার জানেনা তো তাই এই জিদ। বুঝতে পারলাম ওর সমস্যাটা তাই , সবাই গাড়ি থেকে  নেমে ছুটছে লঞ্চ ঘাটের দিকে আমি ছুটছি উল্টোদিকে। একটা ভ্যানে করে ফেরিঘাটের দিকে ছুটলাম। ভ্যানওয়ালা যে ঘাটে নামালো সেখানে ফেরি নাই। ফেরি ভিরছে অন্য ঘাটে তাই ছুটলাম সেদিকে। ফেরির স্লাব নামানোর আগেই বেয়েছেয়ে শত শত লোক ফেরিতে পড়ে বসেছে। আমিও বাধ্য হয়ে জান্নাতকে নিয়ে সেটাই করলাম। ফেরিতে ওঠার পরে আর জানে জান নাই।

যেমন রোদ তেমন গরম, আমার ঘাড়ে ব্যাগ আর মেয়ে কোলে। দাঁড়ানোর যেখানে জায়গা নাই সেখানেতো বসার কথা চিন্তাই করা যায় না। মেয়েও তেমনি নাছোড় বান্দা কোল থেকে নামবে না। মেয়ে ঘেমে নেয়ে একাকার, মেয়ের গায়ের জামা খুলে দিলাম। আমার নাক মুখ কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে। মেয়ে তার জামা দিয়ে আমার মুখের ঘাম মুছে দিচ্ছে। এ যেন প্রবল ক্ষরার মাঝে প্রশান্তির সুশীতল বাতাস।জান্নাতও আমার পাশে দাড়িয়ে। ঘাট পর হয়ে এবার পরিবহনে ওঠার যুদ্ধ। অনেক ঠেলাঠেলি করে আমি প্রথমে গাড়িতে উঠলাম। হাতেও একটু ব্যাথাও পেলাম। তারপর সিট বুক করে জান্নাতকে গাড়িতে উঠালাম।

ঢাকার বাসায় পৌছাতে পৌছাতে রাত ৮ টা বেজে গেলো। বাসায় পৌছেই জান্নাত কাপড় খুলছে আর বলছে এতো কষ্ট করে মানুষ যায় , এর পর থেকে আমি আর বাড়ি যাবো না। তুমি একা একা যাবা। আমি কোন উত্তর দিলাম না। শুধু মনে মনে বললাম এমন ভাব আর এমন কথা বলছে, আমার মেয়ে আর আমি যেন অতি আরামে উনার কোলে  উঠে এসেছি। জান্নাত নিজের মতো বকবক করতেই লাগলো । আমি কোন উত্তরা না দিয়ে বাজার করার জন্য বের হয়ে গেলাম। কারন ৮দিন পর ঢাকায় আসলাম। চাল ছাড়া ঘরে আর কোন বাজার নাই।

পরের দিন জান্নাত বলছে, হঠাৎ জান্নাত আমাকে বলছে তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না। আমি জান্নাতের মুখের দিকে চেয়ে পড়লাম। জান্নাত বললো  এই কয়টা দিন থেকে আসলাম আমাকে একটু কোথাও ঘুরতে নিয়ে গেলে না। কতো আশা করেছিলাম ক্যান্টমেন্ট যাবো, ভূতের আড্ডায় যাবো। আমার কোন আশা কোন দিন পুরন হয় না। কপাল নিয়ে এসেছে ওরা। 

আমি কোন উত্তর না  দিয়ে ওর মুখের দিকে চেয়ে আছি। 

জান্নাত আবার বলতে শুরু করলো , আমারা চলে আসার পরের দিন তোমার ছোট ভাই তার বউকে নিয়ে বেড়াতে গেছে। ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে বউ পালা শেখো। তোমার তো মুরদ নাই।

আমি বললাম তুমি বলছো , বুঝতে পারছো। 

জান্নাত মুখটা বিকৃত আকারের করে বললো , হয় আমারই তো তোমাকে আর তোমার মেয়েকে বুঝতে হবে। আমারে বোঝার কেউ নেই। যেদিন পরপুরুষের কাছে চলে যাবো , সেদিন বুঝবা।

আমি কোন কথার উত্তর না দিয়ে পাশের রুমে চলে গেলাম। 

তার একদিন পরে ১০ তারিখে দুপুরের খাওয়া শেষ করে শুয়ে আছি। মেয়ে আমার বুকের উপর শুয়ে আছে। মেয়েকে সরিয়ে দিয়ে আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো জান্নাত। আমি এক হাত মাথার উপর আর এক হাত দিয়ে জান্নাত কে জড়িয়ে রাখছি। জান্নাত বললো আমাকে কোলে নাও। 

আমি বললাম তুমি তো আমার কোলের ভিতরেই আছো। আর কিভাবে কোলে নিবো ? 

জান্নাত উত্তর দিলো পরপুরুষ যখন কোলে নিবে তখন দেখে দেখে শিখে নিও। তোমার ছোট ভাই কেমন করে দেখোনা।

 আমি বললাম আমি কি ওদের ঘরে ডুকে বসে থাকি। 

জান্নাত বললো -ঘরে ডুকে বসে থাকা লাগে, আন্দাজ করলেই তো হয়। ওরা সারাদিন ঘরের মধ্যে ডুকে করে কি।

 আমি কোন উত্তর না দিয়ে পাশের রুমে চলে গেলাম। মিনিট দুয়েক পরে জান্নাত  এসে আমার পাশে বসে তুমি এখানে বসে আছো কেন? আমি তো ভেবেছি তুমি বাথরুমে গেছো।

আমি খুব রাগান্বিত কন্ঠে বললাম- যা এখান থেকে, সর আমার পাশ থেকে জানোয়ারের বাচ্ছা জানোয়ার।

জান্নাত ও খুব রেগে গিয়ে বললো আমার কিন্তু এই ব্যবহার মনে থাকবে।

আমি ধমক দিয়ে বললাম আবার কথা বলিস, বেয়াদব।

Thursday, June 2, 2022

03.06.2022



 আজ প্রায় ১ বছর পর আবার প্রচন্ডভাবে অত্যাচারিত হয়ে জান্নাতকে কয়েকটা চড় থাপ্পড় মারলাম।

তখন সকাল সাড়ে ৬টা। জান্নাত প্রচন্ড বেগে চিল্লাতে লাগলো। এই ওঠো, এ-ই এ-ই। আমি ধরফরিয় লাফিয়ে উঠে, জান্নাতকে বললাম কি হয়েছে বলো। জান্নাত আমার দিকে তাকিয়ে একরাশ ঘৃনার ভরা চোখে তাকিয়ে, ঝাঁজালো কন্ঠে চিৎকার করতে লাগলো - এভাবে ক সংসার হয়ে?  এভাবে মানুষ বাঁচতে পারে?এটাকে কি জীবন বলে?

আমি হাত ইশারা করে বললাম আস্তে,আস্তে সাত সকালে তুমি এমন করছো কেনো?  কি হয়েছে বলো?  দাতে ব্যাথা বেড়েছে নাকি শরীর খারাপ লাগছে? 

জান্নাত বললো আরে রাখো তোমার দাতে ব্যাথা। তুমি আমাকে একটুও আদর করনা, আমার কাছে আসোনা, ইত্যাদি ইত্যাদি বকবক করতে লাগলো।

আমার বুকের উপর পা তুলে দিয়ে গলা জড়িয়ে শুয়ে থাকা আমার কলিজার টুকরো টাকে আস্তে করে পাশে সরিয়ে দিয়ে জান্নাতে হাত বাড়িয়ে ডাকলাম, আসো কাছে আসো। এখানে পাশে শুয়ে পড়ো। ২ থেকে ৩ বার ডাকলাম কিন্তু কাছে না এসে জান্নাত বললো তোমার কিছু আছে?  কোনো অনুভূতি আছে?  তুমি তো হিজড়া হয়ে গেছো। 

আমি আরও কোনো কথা না বাড়িয়ে পাশ ফরে চুপচাপ শুয়ে রইলাম। জান্নত একা একা বকবক করতে লাগলো। আমি না শোনার ভান ধরে চুপচাপ রইলাম।

মিনিট ২ পরে জান্নাত আমার পা ধরে নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলছে। এই কি বলছি তুমি শোনো না, শুনছো। ৩ থেকে ৪ বার এমন করার পর আমি বললাম। কি শুনবো?  তোমার এমন বাজে কথার কোন উত্তর আমার কাছে নাই।

জান্নাত উত্তর দিলো, বাজে কথা না উচিত কথা। উচিত কথা বললেই তোমার গায়ে লাগে। তখন উঠে গিয়ে কষে দুটো থাপ্পড় মারলাম। আর বললাম আমার খেয়ে পরে, আমার বুকে শুয়ে তুমি পরপুরুষের গুনগান করো,  তোমাকে অধঘন্টা করার পরেও, বলো এটুকু পারো, তোমার সব শেষ হয়ে গেছে, ১ থেকে ২ দিন তোমার কাছে না গেলে আমাকে হিজড়া বলে সম্ভোধ করছো। আবার তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা, অনুভূতি চাও।

আবার আমি যখন তোমাকে বোঝানোর শুরে বলি, তুমি এমন করে কেনো বলতেছো?  আমি তো কখনো তোমাকে কারো সাথে তুলনা করনি। তখন তোমার উত্তর আসে,  আমি হিজড়া গেছি, তোমার সাথে কারো তুলনা করার যোগ্যতা আমার নাই।

জান্নাত চুপ করে রইলো, কিন্তু এ-ই চুপ বোধোদ্বয়ের নয়। বুঝতে পারলাম যখন বিয়ের সময় পরানো আংটি ওনাকফুল খুলে ছুড়ে দিলো। আমিও কোনো কথা না বাড়িয়ে আংটি ও নাক ফলটা কুড়িয়ে এনে কাগজে পেচিয়ে যত্ন করে রেখে দিলাম। আর কোন কথা না বলে অফিসে আসার জন্য রেডি হতে লাগলাম। যদিও অফিসে আসার সময় হয়নি। জান্নাত বললো - তোমার কিডনি বিক্রি করে হলেও আমার দেন মোহর পরিশোধ করে দাও। আমি আর সংসার করবো না। আরও বললো তুমিতো আমার অত্যাচারে আত্মহত্যা করতে চাও , যাও করো গিয়ে, দেখি কেমন পারো।

আমি কোন কথা না বলে ঘর থেকে বের হয়ে চলে এলাম।

আগের দিনের ঘটটনাটা একটু বলি।

 ০১.০৬.২০২২ দুপুরে অফিস থেকে বাসায় এলাম লাঞ্চ করার জন্য। গোসল করে যখন খেতে বসলাম, আমি নিজে খাচ্ছি এবং মেয়েকে খাওয়াচ্ছি।

জান্নাত বললো- তোমার ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে তোমার শিক্ষা নেয়া উচিত। কপাল নিয়ে আইছে ওরা। সোনার কপাল। আর আমার  পোড়া কপাল।

আমি শুধু জান্নাতে দিকে একবার চেয়ে দেখলাম,  কোনো উত্তর দিলাম না। এই  কথা আমি প্রতিনিয়ত শুনছি। 

যেমন পাশের বিল্ডিংএর ওই বেটা , তার বউকে নিয়ে ঘুরতে বের হচ্ছে। ঐ বেটা এখন বাসায় তুমি কেনো এখনো অফিসে ইত্যাদি ইত্যাদি যা সহ্য করা আমার পক্ষে খুবই কঠিন হচ্ছে।

Wednesday, April 27, 2022

27.04.2022


 রমজান মাসটা মোটামুটি ভালোই কাটছিলো। জান্নাত এক হুজুরের মাহফিল শুনে বুঝতে পারলো যে, ও আমার সাথে অনেক অন্যায় করেছে। আমাকে অনেক নির্যাতন করেছে। 

আমি ইফতারের পরে অফিসে আসার জন্য রেডি হচ্ছি এমন সময় জান্নাত এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেললো। আমি বললাম কি হয়েছে ? এমন করছো কেন ?

জান্নাত বললো আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি। তোমাকে অনেক যন্ত্রনা ‍ দিয়েছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও। 

আমি কি বলবো ঠিক বুঝতে পারলাম না। চুপচাপ থাকলাম। আর মনে মনে বললাম আলহামদুলিল্লাহ।  কিন্তু শুধু বুঝলে হবেনা কাজেও লাগাতে হবে।

এক সপ্তাহ পরেই জান্নাত আবার নিজের রুপে ফিরে এলো। ২০ রমজান থেকে শুরু করে দিয়েছে নানা অসৌজন্য মূলক আচরন। যেমনঃ আমরা এবার ঈদে বাড়ি যাবোনা। তুমি বেশি টাকা পয়সা খরচ করতে যেয়োনা। কারো জন্য কিছু কিনবা না। আমাদের কে কি দেয়। 

বাসায় গেলেই একা একা শুরু করবে। এই একই কথা প্রতিদিন। আমি রেগে গিয়ে একদিন বললাম। আব্বা মারা গেছে ৬ মাস আগে , আম্মা বাড়ি একা। এই প্রথম আব্বাকে ছাড়া ঈদ করছে। একটাবার মানুষের মতো করে ভেবে দেখো, জানোয়ারের রুপে থাকলে কোনদিন এসব বুঝবে না।

আমি যেদিন রোজা রাখছি না, সেদিন দুপুরে বাসায় গিয়েও কোন খাবারের বন্দবস্ত নাই। ক্ষুধায় চরম খারাপ লাগে তারপরও কিছু বলি না। আমি যখন কাজে খুব ব্যস্ত থাকি তখনই জান্নাতের ফোন আসে। কোন জরুরী কথা নয়। কথা হলো কখন বাসায় আসবা, আমার একা একা মেয়েকে সামলাতে খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছে, দরাকারের সময় কোনদিন তোমাকে কাছে পেলাম না। তুমি কোনদিন আমার কোন উপকারে আসালে না। ইত্যাদি ইত্যাদি। 

জান্নাতের মনে হয়, ঘরের মধ্যে থেকে শুধু মেয়েটার খেয়াল রাখবে, এটা অনেক বড় ঝামেলার কাজ। আর আমি অফিসে এসে ঘুমাই। এখনতো রমজান মাস, দুপুরে রান্নার ঝামেলা নাই। তাই এতো কথা।

প্রতিদিন জান্নাত কোন কারন ছাড়াই চিল্লাচিল্লি করতে থাকে । আমি কোন কথার উত্তর দেই না। চুপচাপ শুধু শুনি। এবং নানান কথায় টপিক অন্যদিকে নিতে চেষ্টা করি। সেখানেও বিপত্তি। জান্নাতের চিল্লাচিল্লির কেনো উত্তর দেই। টপিক কেন অন্যদিকে নিয়ে যাই। 

 আমি অফিসের কাজে কক্সবাজার গিয়েছিলাম ২ দিনের জন্য। তখন অনিক ( জান্নাতের ভাই ) এসেছিলো। বাসায় থাকার জন্য।

১৬ রমজানে অনিক রাড়ি চলে গেলো। আমি কতো করে অনুরোধ করলাম বোঝালাম যে ঈদের আগে রাস্তায় প্রচুর জ্যাম হবে।  তোমাদের নিয়ে রাড়ি যেতে খুব কষ্ট হবে। বাস-ট্রেন কোন পরিবহনের টিকিট পাওয়া যায় না। আর অফিস কবে বন্ধ হবে ঠিক নাই। সুযোগ আছে, আমি ট্রেনের টিকিট কেটে দিচ্ছি , তুমি মেয়েকে নিয়ে অনিকের সাথে খুলনায় চলে যাও।কোন ভাবেই গেলো না। 


প্রতিদিন অশান্তি সৃষ্টি করার জন্য একটার পর একটা ঝামেলা করতে থাকে।  যেমন ২৪ রমজান দিবাগত রাতে আমি পাশের রুমে নামাজ পড়ছি। জান্নাত দেখেছে  মন্তব্য ও করেছে যে, এতো রাতে কিসের নামাজ পড়ছে আল্রাহ ভালো জানে। তারপরও রুমের দরজা ভিতর  থেকে আটকে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি নামাজ শেষ করে দরজা বন্ধ পেয়ে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। ঘন্টাখানেক সোফায় বসে থেকে আবার দরজা নক করলাম। বেশি জোরে শব্দ করতে পারছি না, লজ্জায় কারন নিচের ফ্লাটের মানুষ যদি শব্দ শোনে কি মনে করবে। তখন রাত সাড়ে ১২টা বা ১টা হবে। শব্দ অনেক দুর পর্যন্ত শোনা যাবে। বেশকিছুক্ষন পর জান্নাত দরজা খুললো। আমি কিছু না বলে , নিজের জায়গায় শুয়ে পড়লাম।

পরের দিন ইফতারের পর আমি ইউটিউবে একটা ব্যবসার ভিডিও দেখে জান্নাতকে ডাকলাম দেখো খুব ভালো একটা আইডিয়া পেয়েছি। জান্নাত আমার কাছে আসলো তখন আমি ফেসবুক চালাচ্ছি । ফেসবুকে কে বা কাহারা একটি মেয়ের ছবি পোষ্ট পড়েছে সেটা আমার স্কিনেও দেখা যাচ্ছে। শুরু হয়ে গেলো জান্নাতের ফালতু প্যাচাল-এই মেয়েটা কে ? এই সব করে বেড়াচ্ছো।

আমি যতই বোঝাতে চেষ্টা করছি যে, ততই বেশি বেশি চিল্লাচ্ছে। তখন আমারও প্রচন্ড রাগ হয়ে গেলো কারন জান্নাত প্রতিনিয়ত এভাবে আমাকে চরিত্রহীন প্রমান করার চেষ্টা করে। আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলে। যার কোন ভিত্তি নাই। তখন আমি জান্নাতকে খুব গালিগালাজ করলাম। 

Tuesday, April 5, 2022

05.04.2022

 


আজ ২০২২ সালের ৩য় রমজান। রমজানে আমার অফিসের রুটিন পরিবর্তন হয়েছে। সকাল ১০ টায় অফিসে আসি দুপুর ২টা থেকে ৩ টার মধ্যে বাসায় চলে যাই। ৬ টা ২০ মিটিটে ইফতার করে, নামাজ পড়ে ৭ টা থেকে সাড়ে ৭টার দিকে বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা করি। 

প্রতিদিন অফিসে আসার পর ঘন্টা পার হতে না হতেই জান্নাতের ফোন আসতে শুরু করে। সেই পুরোনো প্যাচাল। কখন বাসায় আসবা। আমার শরীর ভালো লাগছে না। মেয়েটা বিরক্ত করছে  ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রতিদিন কানে মেয়ের কান্নার আওয়াজ শুনেতে পাই। যদি জিজ্ঞাসা করি জিদনী কাদছে কেনো ?

জান্নাতের উত্তর ইচ্ছা মতো মারছি। খুব বিরক্ত করছিলো। 

আমার কলিজাটা কষ্টে ফেটে যায়। আর কতো বুঝাবো ?

আমি জান্নাতকে কয়েক হাজারবার বলেছি যে, দেখো মেয়েটার তুুমি আর আমি ছাড়া কেউ নাই। দাদা-দাদী , নানা- নানী কেউ কাছে থাকে না। আদর ভালোবাসা যা পাওয়ার তোমার আমার কাছ থেকেই পায়। আমি সারাদিন অফিসে থাকি, ওর যা কিছু চাওয়ার পাওয়ার সব তোমার কাছে। মেয়েটার উপর এমন অবিচার করোনা। এটা খুবই খারাপ কাজ।

কে শোনে কার বুঝ। শুরু করে নিজের অমানুষিক রুপটাকে আরো ফুটিয়ে তোলার বিষবাক্য। যেমন -আমার মনে হয় ওকে মেরে ফেলি। এতো বেয়াদপ হয়েছে যা, বলার না। আমার একটুও শান্তি নাই। 

আজ ৫টা বছর ধরে জান্নাত নিজের অমানুষিক ব্যবহার , আচরনের কারনে পুরো সংসারটাকে নরক বানিয়ে রেখেছে। হাজার বুঝানোর পরেও বোঝে না। আর এই নিস্পাপ বাচ্চা মেয়েটা ওর কথা না শুনলে ইচ্ছা মতো শারিরিক নির্যাতন করে। বাচ্চার শাস্তি যদি এই হয় তাহলে ওর শাস্তি কি হওয়া উচিত।

আমি জান্নাতকে বলি জীদনিকে মেরে ফেললে এবং আমিও মরে গেলে কি তুমি সুস্থ হয়ে যাবে। তাহলে তাই করো আমাদের দুজনকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলো। তুমি যদি সুস্থ হয়ে যাও, সুখি হও। আমার তোমাকে আর কিছু বলার নাই। বলেই ফোনটা কেটে দিলাম।

আমি বুঝতে পারিনা কিভাবে বাচবো ?

নিজের শরীরের দিকে নিজে তাকাতে পারি না। শরীর শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। সহজেই বুঝতে পারি কারন, প্রতিদিন জামা কাপড় লুজ ‍লুজ লাগে। প্যান্ট খুলে পড়ে যায়। 

রাতে ঘুমাতে পারিনা। অফিসে শান্তিকে কাজ করতে পারিনা। কোন কাজে মন দিতে পারিনা। 

আমি নিজেই বুঝতে পারি যে, আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। নিজের আচার ব্যবহারে অসামঞ্জ্যতা লক্ষ করতে পারি। রাস্তায় একা একা হাটি আর বকবক করতে থাকি। ২/৪ মিনিট পর সেঞ্চ আসলে , এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। 

মন মেজাজ সব সময় প্রচন্ড খিট খিটে থাকে কেউ ভালো কথা বললেও গা জ্বলে ওঠে। নিরবে মাঝে মাঝে একা একা কাদি আর ভাবতে থাকি আমার মেয়েটার কি হবে। এই অমানুষ জানোয়ারটা তো আরেকটা বিয়ে করবে। আমার মাঝে মাঝে বিশ্বাসেই হয় না, নিজের বাচ্চার সাথে এমন দুঃব্যবহার করতে পারে। তাও আবার অবুঝ নিস্পাপ দুধের বাচ্চা। হায়রে কপাল। 

জান্নাতের  বাপ-মা, অত্মিয়-স্বজন , গুরুজন কাউকে অভিযোগ করতে বাদ রাখিনি। কোন কিছুতে কোন কাজ হয়নি। এখন এদের কাউকে কিছু বলতে আমার নিজের ঘৃনা লাগে। মনে হয় এদের সবগুলোকে জুতার মালা পরিয়ে ঘুরানো উচিত। একটা ভালো ব্যবহার এরা এদের মেয়েকে শিক্ষা দিতে পারেনি। 

Friday, April 1, 2022

০১.০৪.২০২২


 আজ শুক্রবার অফিসে আসার কোন পরিকল্পনা ছিলো না। আর যদিও আসতে হয় তাহলে হয়তো সন্ধ্যায় আসতে হতে পারে। কিন্তু আমার বস হঠাৎ ফোন করে জানালেন ৩টার সময় প্রোগ্রাম আছে আড়াইটায় চলে আসবা। চাকরী করি তাই শত অনিচ্ছা থাকলেও আসতে হবে। 

নিজের অনিচ্ছা , কষ্ট বসদের কাছে কোন পাত্তা না। বিশেষ করে আমার বসের কাছে তো নাই.................

প্রতিনিয়ত নিজের কষ্ট নিজের ভিতর লুকিয়ে রাখতে হয়। হয়তো মানুষ এমন অসহায় হলে পরিবার থেকে সাপোর্ট পায় বা শান্তনা পায়। কিন্তু আমার পরিবার বলতে শুধু আমার আড়াই বছরের মেয়ে আর অমানুষ একটা বউ। অমানুষ বলার কারন হলো কোনদিন কোন কাজে কখনো আমাকে সহযোগীতার হাত বাড়ানোর সাধ্য তো নাই , শুধু অতিষ্ট করা যন্ত্রনা, আর অকথ্য ভাষাজ্ঞান ছাড়া এর ভিতর আর কিছুই নাই। 

প্রতিদিন বিকালে ফোন করে বলবে- রাস্তাদিয়ে বিটারা যাচ্ছে আর তুমি অফিসে বসে আছো। আমার ভালো লগাছে না। ঐ বিল্ডিয়ের ঐ বিটা তার বউকে নিয়ে ঘুরছে, ইত্যাদি ইত্যাদি সব অসামঞ্জস্য কথাবার্তা। যা যে কোন মানুষকে অতিষ্ট মুহূর্তেই অতিষ্ট করে তোলে। 

তাই বসের হুকুম মতো জুম্মার নামাজ পড়ে না খেয়ে চলে এলাম অফিসে। অফিসে আসার পর ১০ মিনিট পর পর ফোন কখন আসবা বাসায়। আমার ভালো লাগছে না। আমি এভাবে আর সংসার করতে পারবো না। আমাকে খুলনায় দিয়ে আসো। কি বালের চাকরী করো ......................। আর বিটারা চাকরী করেনা । আরো কতো কি। 

মানুষের মধ্যে থাকি তাই কথার উত্তর দিতে পারিনা। কিন্তু মনের ভিতরটা খেয়ে যায়। কারন সারাদিন অফিসে বসের নানান কথা শুনি । বউয়ের বকাঝকাও শুনি । কোথায় যাবো ??? 

আমি শুধু বলি পরে কথা বলছি কাজে ব্যস্ত আছি। তাতে আরো বেশি কথা শুনতে হয়। মাঝে মাঝ মনে হয় আমি মনে হয় সবার চাকর হয়ে জম্মেছি। সবাই শুধু বলবে আর আমি মুখ বুজে শুনবো।

অফিসে একটা জরুরী কাজে বা কোন প্রোগ্রামে থাকলে যদি এমন বার বার ফোন করতে থাকে তাহলে মান সম্মান কোথায় যায়। এই কথা ওনাকে কয়েক হাজারবার বোঝানো হয়েছে তারপরও উনি বোঝেননা । প্রতিদিন এমন কাজ করছে তো করছেই। 

আমি দোয়া করি আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ির ঘরে এমন একটা বউ আসুক। যাতে করে তার বুঝতে পারে তাদের মেয়ের কি যোগ্যতা। 

নাম জান্নাতুল ফেরদাউস কিন্তু মুখের ভাষা এতটাই কর্কট ও জগন্য যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। ভাষার সাথে সাথে কপাল মুখ চুচকিয়ে, ঘুচিয়ে যা করে, সেটা যে কি জগন্য তা বলার নয়। 

আল্লাহর ৩০টা দিন এমন যন্ত্রনা সহ্য হয় না। করতেও চাই না। কিন্তু আমার নিস্পাপ মেয়েটার মুখের দিকে তাকালে কান্ন এসে যায়। মেয়েটাও চরম অত্যাচারে থাকে। শুধু অপেক্ষা মেয়েটা একটু বড় হোক, বুঝতে শিখুক। বাকিটা আল্লাহর হাতে .................................................................

Tuesday, March 29, 2022

সৎ মা



 প্রতিদিন একই আচরন একই গালি গালাজ। আমি এখন আর কোন কথায় কোন উত্তর দেই না। চুপচাপ থাকি তারপরও শান্তি নাই। নিজের সাথে সাথে মেয়েটাকে নিয়ে খুব খারাপ লাগে। 

আমার মেয়েটা বেশ কিছুদিন ধরে খুব অসুস্থ। প্রসাব আটকে যায়। প্রসাব করতেই চায় না। প্রসাব করার সময় প্রচুর কান্নাকাটি করে। আমার মেয়ে যেমন শান্ত স্বভাবের তেমনি খুব শক্ত। শক্ত বলার কারন হলো সহজে কাদে না।  তার মানে বোঝা যায়, প্রসাব করার সময় প্রচন্ড জ্বালাপোড়া হয়, তাই কাদে। আমার কষ্টটা হলো অসুস্থ মেয়ে জন্ত্রনায় কাদছে। তাকে কোলে করে শান্তভাবে বোঝাতে হবে, কান্না থামানোর চেষ্টা করতে হবে।

জান্নাত করে তার উল্টোটা। মেয়েটা যন্ত্রনায় প্রসাব করতে চায় না, তারউপর মার শুরু করে। রাগ দেখায় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এর থেকে আমাকে ও বাদ দেয় না। আমাকে ফোন করে, যা খুশি তাই বলতে থাকে। যেমন আগে বলেছে- তোমার মেয়ের জন্য আমি মরে যাবো, আমার সহ্য হচ্ছে না। আমার জীবনটা মাটি হয়ে গেছে। একটা ভাইরাস পেটে ধরছি। জ্বালায়ে শেষ করে দিচ্ছে, ইত্যাদি। 

আমি বুঝিনা কি করবো ?

জান্নাত অসুস্থ হলে, বা সামান্য শরীর খারাপ লাগলে আমাকে ফোন করে শুরু করে- তোমার সাথে বিয়ে হয়ে আমার জীবনটা মাটি হয়ে গেছে। আমি যন্ত্রনায় মরে যাচ্ছি তুমি থাকো তোমার চাকরী নিয়ে, আজকে আর বাড়ি আসবা না, পিওনদের সাথে অফিসে ঘুমাবা। আমি বাচি না আমার জ্বালায় তারউপর জন্ম দিছো একটা ভাইরাস । আমাকে জ্বালিয়ে মারছে। 

আমি বলি কি এমন করেছে আমার নিস্পাপ শিশুটি যে, তুমি এমন বাজে বাজে কথা বলছো। 

জান্নাত বলল- বমি করে ঘর ভাসিয়ে দিয়েছে। খুব কান্নাকাটি করছে, কোন ভাবেই থামেছে না। দিছি ইচ্ছা মতো মাইর, তারপরও থামে না। লজ্জা নাই।

আমি বললাম- তাহলে তুমি কি বুঝতে পারছো না, যে ওর খারাপ লাগছে, তারপর তুমি যদি ওর সাথে এমন করো, ও কোথায় যাবে, আমি আর তুমি ছাড়া আর কে আছে। আমি থাকি অফিসে , ও সারাদিন তোমার সাথে থাকে। তুমি একটু সংযত হও। তুমি যা করতেছো এগুলো  ঠিক না।

জান্নাত বললো-আমি শুধু তোমাদের বুঝবো , আমাকে বোঝার কে আছে? আমি অত কিছু বুঝতে চাই না। তোমার সাথে বিয়ে হয়ে আমার জীবনটা ধ্বংস হয়ে গেছে। এই ভাইরাসটা পেটে না ধরলে চলে যেতাম। আমার জীবন অন্য রকম হতো। এমন নরকের জীবন হতো না।

আমি কিছু না বলে ফোন কেটে দিলাম। আমার ঘৃনা ধরে গেছে ওর উপর,  ওর আচার ব্যবহারে আমার প্রচন্ড খারাপ অবস্থা।

স্বাভাবিক ভাবে ও প্রতিনিয়ত আমার সাথে  এমন করে ফলে আমার মন মানসিকতা ভালো থাকেনা। অফিসের কাজে ভূল হয়, বসের কাছে নানান কথা শুনতে হয়। আমার কষ্টগুলো  কোন দিন জান্নাত বুঝবে না। শুধু আমার নয় ও হয়তো কোনো দিন কাউকে বুঝবে না। ও শুধু মানুষের জীবনকে নরক বানাতে পারে। কারো মুখে হাসি ফুটানোর ক্ষমতা ওর নাই। নিস্পপ শিশু মেয়েটার সাথে যা করে তাতে বাইরের কেউ দেখলে মনে করবে, এটা ওর সৎ মা। 

আমি মাঝে মাঝে ভাবনায় পড়ি যে, জান্নাত যদি কারো সৎ মা হতো তাহলে তার জীবনটা কি হতো। আর সেই সাথে  দোয়া করি যে পৃথিবীর কোন বাবা-মায়ের ঘরে যেন এমন মেয়ে না জন্মায়।

জান্নাতের গুনের কথা বলে শেষ করা যাবেনা, যেমন আমি দুপুর তিনটায় বাসায় লাঞ্চে গেলাম। জান্নাত গোসল করে পরিপাটি হয়ে তারপর খেতে দিবে। তাই খেতে খেতে ৫ টা বেজে গেলো। রুটিন অনুযায়ী দেরি না করে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হতে হবে। এখানেও জান্নাতের আপত্তি কেন এখনই রওনা হতে হবে। আরেকটু দেরি করে গেলে কি হয়। শুরু করবে বাজে বাজে ব্যবহার। আর আমি নিরবে সেগুলো শুনতে শুনতে ঘরে থেকে বের হয়ে আসি। 

আমি হয়তো কোন পাপ করেছিলাম যার ফল হিসেবে এমন অমানুষ পেয়েছে কিন্তু আমার মেয়েটাতো নিস্পাপ ওর কি দোষ , ভেবে পাইনা। 

আমি তো  পুরুষ যাই হোক পেটের ধান্ধায় থাকতে হয়। একটু স্বচ্ছলতার আশায় আমার এক ধর্ম খালাত ভাইয়ের চাকরীর তদবির করার চেষ্টা করছিলাম। আমার সেই খালাতো ভাই আমাদের খুলনার বাড়িতে গিয়ে আমার আম্মার কাছে বিষয়টি জানাতে চায়। এবং তখন আমার আম্মা আমাকে ফোন দেয়। জান্নাত দেখলো যে আম্মা ফোন দিয়েছে তারপরও আমাকে জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে। আমি সরল মনে সত্যিটা বললাম। 

জান্নাত আমার কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো- শুরু করলো আজে বাজে বিশ্রি কথাবার্তা বলতে। আমার তখন মনে হচ্ছিলো ওকে টেনে ছিড়ে ফেলি। মা খালা নিয়েও বাজে কথা বলতে একটু বাঝে না। 

আমি শুধু বলেছিলাম - জানোয়ারের বাচ্চা আর একটা কথা বললে তোর কান ফাটিয়ে ফেলবো। তুই তোমা মার কাছে ভালো শুনে দেখ, তুই কোন বৈধ সন্তান না। কোন বাবা মার কোন বৈধ সন্তান এমন কথা বলতে পারেনা। বলে অন্য রুমে চলে গেলাম। মেয়েটা আমার পিছন পিছন আসলো এবং ছোট ছোট করে আমাকে বলছে- আব্বু এসব কথা বলতে হয় না। এগুলো বাজে কথা সরি বলো।

আমি মেয়েকে কোলে তুলে নিলাম। আদর করে চুমু দিয়ে বললাম । ওকে আব্বু সরি।

এই শিশুর কাছ থেকেও যে শিক্ষা নেয়ার আছে সেটা বুজতে ওর কষ্ট হয়। মানুষ হলে অবশ্যই সুধরে যেতো। এখনো যখন সুধরায়নি তখন...............................................

Sunday, March 20, 2022

এটা কি জীবন ?

 


শুনেছি বা দেখেছি পুরুষ বা নারী বিবাহের পর তাদের জীবনে শুধু সঙ্গী বা সঙ্গীনা নয় । অনুপ্রেরনা ও উৎসাহের একটা বড় জায়গা হয়। কিন্তু আমার বেলায় পুরোটাই উল্টো। 

বিয়ের পর থেকে আমার জীবনে উন্নতির সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে বললে ভূল হবে। বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সে আমার স্ত্রী নয় তো যেন আমার জীবনধ্বংস কারীনি।শুনতে খারাপ শোনা গেলেও এটাই সত্য।

আমার ইনকাম আমাকে খাওয়াতে কষ্ট হয়। আমার আয়ের ১০ টাকা থেকে ২ টাকা আমার বাবা মাকে দিলে ওর কলিজা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তাও প্রতিদিন বা প্রতিমাসে নয়, দেখা যায় ছয়মাস বা একবছরে একবার । যেমন আব্বা মারা যাবার পর পেনশনের টাকা পেতে দেরি হচ্ছে দেখে আম্মাকে ২০০০ টাকা দিয়েছিলাম। তার জন্য কতো কি শুনতে হলো। অথচ ঈদের দুই মাসে আগে থেকে প্লান করতে থাকে আমার ছোট ভাইকে এবার ১০০০ টাকা দিতে হবে। ও বড় হয়ে গেছে। এখন ৫০০ টাকা দিলে মানসম্মানে লাগে।

আমি কি কাজ করি , কখন বাসায় ফিরি সব কিছু জান্নাতের জানা। তারপরও প্রতিদিন রাত ৯টা বাজতেই কখন বাসায় আসবা। এখনো অফিসে কি করো। সপ্তাহে দুই একদিন একটু আগে আগে আসা যায় না। এই  একই কথা প্রতিদিন শুনতে হয়। 

আমি বুঝিয়েছি কয়েকশত বার যে, আমি তো পরের চাকরী করি। তারা ছুটি না দিলে কিভাবে আসবো। তুমি তো জানো। 

আমি প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯ টায় অফিসে আসি। দুপুর ২ টা বা আড়াই টার দিকে বাসায় লাঞ্চ করতে যাই। কোন কোন দিন যেমন সপ্তাহে ১ দিন বা মাসে ৪/৫ দিন হঠাৎ জরুরী মিটিং বা কাজ থাকলে  একবারে রাতে বাসায় ফিরি। কিন্তু প্রতিদিনের রুটিন হলো ২ টায় লাঞ্চ করতে যাওয়া, লাঞ্চ করে ৫ টা বা সাড়ে ৫টার মধ্যে আবার অফিসে ফিরে আসা। তারপর যতক্ষন বস অফিসে থাকে ততক্ষন অফিসে থাকতে হয় রাত ১০টা বা ১১ টা।  

সকালে  ৯ টা বা সাড়ে ৯ টার দিকে বাসা থেকে বের হলে অফিসে আসতে আসতে ১০ টা বেজে যায়। দুপুর ১২টার দিকে জান্নাত ফোন করবে।  প্রতিদিন একই বুলি আমার ভালো লাগেছে না। মনটা খুব খারাপ লাগেছে। রাস্তা দিয়ে কতো মানুষ যাচ্ছে আমার ঘরের মধ্যে বন্দি থাকতে মন চাচ্ছে না। তুমি আমাকে একটুই সুখ দিতে পারলে না। সেই একমাস আগে একবার ঘুরতে বের হয়েছি আর এই একমাস ধরে ঘরের মধ্যে পচে মরছি। আরো কতো কি যা ভাষায় বলার মতো না।

তারপর দুপুরে লাঞ্চ সেরে অফিসে আসার পর ৬টা সাড়ে ৬ টার দিকে জান্নাত আবার ফোন দিবে। আমার ভালো লাগেছে না। মনটা খুব খারাপ লাগেছে। রাস্তা দিয়ে কতো মানুষ যাচ্ছে আমার ঘরের মধ্যে বন্দি থাকতে মন চাচ্ছে না। তুমি আমাকে একটুই সুখ দিতে পারলে না। সেই একমাস আগে একবার ঘুরতে বের হয়েছি আর এই একমাস ধরে ঘরের মধ্যে পচে মরছি। আরো কতো কি যা ভাষায় বলার মতো না।

আবার রাত ৯ টা থেকে সাড়ে ৯ টা বাজলেই একই সুর-আমার ভালো লাগেছে না। মনটা খুব খারাপ লাগেছে। রাস্তা দিয়ে কতো মানুষ যাচ্ছে আমার ঘরের মধ্যে বন্দি থাকতে মন চাচ্ছে না। তুমি আমাকে একটুই সুখ দিতে পারলে না। সেই একমাস আগে একবার ঘুরতে বের হয়েছি আর এই একমাস ধরে ঘরের মধ্যে পচে মরছি। আরো কতো কি যা ভাষায় বলার মতো না।

আমার সামনে মানুষ বসা থাকে তাই কোন উত্তর দিতে পারিনা। কিন্তু কেমন নিজের অজান্তেই চোখ থেকে জল গড়িয়ে আসতে চায়। এ কি যন্ত্রনা। এটা মানুষ নাকি ..............................অন্য কিছু। 

ঘরে ডুকলেই শুরু করবে টাকা পয়সা নাই। কিভাবে সংসার চলবে ? ভবিষ্যত কি ? ইত্যাদি 

আবার আমি চাকরীর পাশাপাশি বাইরে কিছু করবো তারও উপায় নাই। একটা চাহিদা পুরন করলে আরেকটা এনে হাজির করে। ঘ্যান ঘ্যান করতেই থাকে। আমি ভালোবেসে ওকে জান্নাত নাম দিয়েছিলাম কিন্তু এই পাঁচ বছরে ওর এবং ওর পরিবারের অত্যাচারে আমি এতোটাই অতিষ্ট যে, জান্নাতকে ছুয়ে দেখতেও আমার ঘৃনা লাগে। ওর কাছে গেলে আমার কোন অনুভূতি জাগে না। মন থেকে ভালোবাসার কোন সায় পাই না। যা করতে হয় সংসারের শান্তির জন্য নিজের উপর জোর করে করতে হয়।

জান্নাতের ডায়াবেটিস আছে তাই যে কোন কারনেই শরীর খারাপ হতেই পারে। কোন রকম একটু খারাপ লাগলেই শুরু হয়ে যাবে- আমি তো মানুষ না । আমার কোন দাম নাই । গাধার মতো খাটতে খাটতে শেষ হয়ে যাচ্ছি। একটু ডাক্তারের কাছে নেয়ার ও প্রয়োজন মনে করোনা। আমাকে তুমি আসলে ভালোবাসোনা তোমার মনের মধ্যে অন্য কেউ। ইত্যাদি ইত্যাদি  যা শুনলে কোন সুস্থ মানুষ স্থির থাকতে পারে না। কতোরাত চুপচাপ বিছানা ছেড়ে উঠে এসে পাশের ঘরে বসে বসে মশার কামড় খেয়েছি ,তবুও জান্নাতের পাশে ঘুমাতে যেতে ইচ্ছা করে না।  সপ্তাহে দু একবার আরামের বিছানা ছেড়ে পাশের ঘরে ফ্লোরে এসে শুয়ে মাশার কামড়ে রাত কাটিয়েছি। সকালে উঠে না খেয়ে অফিসে চলে এসেছি। 

 এটা কি জীবন ?

আমার বাচ্চার মতো এমন শান্ত বাচ্চা আমার দেখা দ্বিতীয়টা নেই। তারপরও সপ্তাহে দুই  একবার জান্নাতের কাছ থেকে আমার শুনতে হয় - তোমার মেয়ে চরম বেয়াদপ হয়েছে। আমাকে প্রচন্ড জ্বায়ায় মন চাচ্ছে গলাটিপে মেরে ফেলি। জান্নাত যখন এই ধরনের হাজার কথা বলে তখন আমার বুকের ভেতরটা কেপে ওঠে। কি যে করবো ভেবে পাইনা। কোন উত্তর দেবার ভাষা থাকে না। যে উত্তর দেয়া দরকার তা দিতে পারছি না। কারন মেয়েটা ছোট, মাত্র ২ বছর।

Tuesday, January 11, 2022

12.01.2022


 আজ ১২ই জানুয়ারী ২০২২। সকাল সাড়ে ৯ টায় অফিসের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলাম্। দুঃখ জনক হলেও সত্য যে, বাসাথেকে নাস্তা না করেই বের হতে হলো। 

রাতে বাসায় ফেরার সময় মুড়ি, পানি, আটা ও আনজুমার জন্য প্যাম্পাস নিয়ে ফিরলাম। হাতমুখ ধুয়ে খাওয়া শেষ করে শুযে পড়লাম। জান্নাত আশপাশ থেকে গোত গোত করে বেড়াচ্ছে, এখানে গিয়ে মুখ ভার করে বসে থাকছে, সেখান থেকে উঠে আরেক জায়গায় দিয়ে বসছে।  আমি বুঝতে পারছি কিছু জিজ্ঞাসা করলে বা বললেই শুরু হয়ে যাবে। তাই কিছু বললাম না। শুযে পড়লাম। মশারী না টানিয়ে বসে আছে। আমি টানাতে বললেই শুরু করবে। তাই আমি কিছু না বলে নিজেই মশারি টানিয়ে শুয়ে পড়লাম।

তখন ভোর ৫টা। জান্নাত আমাকে ঘুম থেকে ডেকে উঠিয়ে বলছে, নাহ তোমার সাথে আমার সংসার হবে না। যেসব স্বপ্নে দেখেছি। তাতে আর সংসার হবে না।

আমি জানতে চাইলাম কি স্বপ্নে দেখেছো বলো ? কি দেখেছো ?

কিছুই বললো না। কয়েকবার জানতে চাওয়ার পরেও কিছু বললো না। আমি চুপ করে শুয়ে রইলাম। সাড়ে ৫ টার দিকে আবার আমাকে ডেকে বলছে চিরুনী কোথায় রেখেছো। চিরুনী পাচ্ছি না। 

আমি বললাম ওযারড্রবের উপর রেখেছিলাম। তাওতো সেই সকালে অফিসে যাবার সময়, সারাদিন গেল, সারারাত গেলো এখন তোমার ................... চুপ করে গেলাম ।

কিছুক্ষনপর আবার ডাকলো-বললো উঠো এখানে আসো। আমি কোন কথা না বলে বিছানা থেকে উঠে আসলাম। 

জান্নাত বললো ওই ঘরে চলো।ওর সাথে ওই ঘরে গেলাম। সোফার উপর পাশাপাশি বসলাম। মিনিট খানেক পরে জান্নাত আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। আমি ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম। মাথাটা বুকের সাথে জড়িয়ে রাখলাম। মিনিট দুয়েক পরে জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে তোমার ?

জান্নাত- ভালো লাগছে না।

কেন ? কি হয়েছে?

জান্নাত- জানিনা মনটা ভালো লাগছে না। 

আমি কিছু বললাম না, ওর মাথাটা বুকের সাথে জড়িয়ে রাখলাম। 

কযেক মিনিট পর জান্নাত বললো-আমার কি কোন স্বাদ, আহ্লাদ নাই। সারাদিন একা একা ঘরের মধ্যে আর ভালো লাগে না। 

সেই একই কথা শুনতে খারাপ লাগলেও আমি বললাম শোনো আমি তো পরের চাকরী করি।  চাকরীর বাইরে যখন সময় পাই তখনই তো তোমাকে নিয়ে বাইরে যাই।  আমার উপর বিশ্বাস রাখো, নিজের মনটাকে ধৈর্য্যশীল করো। যা আশা করছো তার চেয়ে বেশি পাবা। 

জান্নাত ক্ষেপে গিয়ে বললো-আর কতো ধৈর্য্য ধরবো। চারটা, পাচটা বছর ধরে ধৈর্য্য ধরছি। 

আমি বললাম তুমি ভূল বলছো। তুমি ধৈর্য্য ধরলে এতো অশান্তি কখনো হতো না। আমি অফিসে মানুষের মধ্যে থাকি তুমি জানো, তারপরও বার বার ফোন করে আজেবাজে কথা বলে আমার আত্মসম্মান নষ্টকরো, আমাকে মানষিক টর্চার করো। যাতে আমার কাজকর্মে ভূল হতে থাকে। বসের গালিগালাজ শুনতে হয়। আমার ক্যারিয়ার পুরো ধ্বংস হযে যাচ্ছে। এই একটি ব্যাপারেও তোমাকে হাজার বার বুঝিয়েছি।

জান্নাত আমার কথা কেড়ে নিযে বললো- আর তুমি যে আমার জীবনটাই ধ্বংস করে দিচ্ছো।

আমি ওর কথার উত্তর না দিয়ে বলতে থাকি- আমি ঘরের বাইরে গেলে আর ঘরে ফিরতে ইচ্ছা করেনা। যে কোন উপায় মরে যেতে ইচ্ছা করে তবু ঘরে ফিরতে ইচ্ছা করেনা। তুমি ঘরটাকে জাহান্নাম বানিয়ে রেখেছো। 

জান্নাত বললো-তাহলে আসো কেন ?

আমি বললাম তুমি যদি বুঝতে তাহলে এমন করতে না। শুধু মেযেটার মুখটা চোখের সামনে ভাসে। মেযেটার কি দোষ। ওকে কিভাবে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিবো। বিবেক সায় দেয় না। মেযের কথা মনে পড়তেই কান্না আসে। মনে হয় আমি না থাকলে তুমি মেয়েটাকে মেরেই ফেলবা।আর অবুঝ মেয়েটা আমাকে সারাজীবন ভূল বুঝবে। তাই আবার ফিরে আসি।

জান্নাত বললো- তুমি , আমাকে মোহরানা দিয়ে দাও আমি চলে যাচ্ছি। তুমি আমার জন্য কি করেছো। আমাকে একটুও সুখি করতে পারো নাই। 

আমি বললাম- তোমার জন্য আমি কি করেছি, কি করছি, তা আল্লাহ ভালো জানে। আর আমি বলতে পারি আমি সর্বোচ্চে চেষ্টা করি তোমাদের সুখে রাখার জন্য। নিজের জীবনের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করি এবং করছি তোমাদের সুখে রাখার জন্য। আর এতে যদি তোমার মন না ভরে তাহলে আমাকে মাফ করে দাও। আমি অপারগ। তোমার সুখ, তুমি খুজে নাও। 

জান্নাত বললো- শুধু ভরপুর খাওয়া পড়া দিলেই কি হয় ? আমার কি ইচ্ছা করে না রাস্তা দিয়ে হাটবো বাদাম খাবো।

আমি একটু হেসেই বললাম হায়রে পাগলী- সারাজীবনের তিল তিল করে গড়া সংসারের শান্তির চেয়ে , রাস্তায় হেটে আধঘন্টা বাদাম খাওয়া, তোমার কাছে বেশি মূল্যবান মনে হলো। তোমাকে আমার কিছু বলার নাই।

জান্নাত আমার কোল থেকে লাফ দিয়ে উঠে গিযে পাশেই ফ্লোরে পাতা বিছানায় শুয়ে গায়ে কম্বল টানতে টানতে জান্নাত বললো। আমার একা একা ঘরে ভালো লাগে না এভাবে সংসার করতে পারবো না।

আমি বললাম তু্মিই তো এক সময় ঠিক এভাবে অশান্তি করতে আর বলতে , একটা বাচ্চা নাও , বাচ্চা হলে তাতে নিয়েই ঘরে আমার খুব ভালো সময় কাটবে। কথা দিলাম তোমাকে আর বিরক্ত করবো না। আর এখন ...................পুরো উল্টো কথা বলছো। আসলে তোমার মন কোন দিন পূর্নতা পাবেনা। একটা চাওয়া পূর্ন করলে , আরো দুইটা হাজির করে , নতুন করে অশান্তি শুরু করো।

আমি বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম।একটু ঘুম ঘুম ভাব এসেছে তখন জান্নাত আবার আমাকে ডাকলো।

জান্নাত- আমাকে মোহরানা দিয়ে দাও। আমি সংসার করবো না। 

আমি বললাম ঠিক আছে, তোমার আব্বাকে ফোন দিয়ে বলো এসে তোমাকে নিয়ে যেতে। 

জান্নাত বললো-ওদের টানো কেন তুমি ? আমার জীবন তো জ্বালিয়ে শেষ করে ফেলছো ওদের ও জ্বালিওনা।

জান্নাতের কথা শুনে আমার প্রচন্ড রাগ হলো কিন্তু  নিজেকে সামাল দিয়ে বললাম। আমি তো তোমাকে রাস্তা থেকে, বা প্রেম করে বের করে আনিনি ।ওনারা আমার কাছে তোমাকে তুলে দিয়েছে , আমিও তোমাকে ওনাদের হাতেই দিবো।

জান্নাত বললো -মেয়েটার জন্য মুখ বুজে আছি।

আমি বললাম -নিশ্পাপ মেয়েটার দোষ কেন দাও ? মেয়েটা আছে বলে তুমি এখনো ভালো আছো। শুকরিয়া আদায় করো।শুরু করে দিলো সেই পুরোনো কথা । 

আমি হাতজোড় করে বললাম তুমি আমাকে মাফ করো, আমি আর সহ্য করতে পারছি না। তোমার ভালো না লাগলে তুমি তোমার সুখ খুজে নাও। দেখো কে তোমাকে সুখে রাখতে পারে ? তবে আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি তুমি কোথায় শান্তিতে থাকতে পারবে না। তোমার সাথে কারো বনিবনাই হবে না। তুমি তোমার বাপের বাড়িতেও ২মাসের বেশি শান্তিতে থাকতে পারবে না। তারাও তোমাকে বের করে দিবে। আমি যতটা সহ্য করছি আর কেউ করবে না। গিয়ে দেখো তোমার বাপ-মা, ভাই, কেউ না। যদি ২মাসের বেশি টিকতে পারো তবে আমি নাকেখর ‍ুদিয়ে আসবো। এবং সারাজীবন তোমার কথা শুনবো। 

ওর মতে ও অনেক কিছু বলতে লাগলো আমি কোন উত্তর দিচ্ছি না। কারন উত্তর দিলেই কথা বাড়বে, অশান্তি আরো বাড়বে....................................

মনে হচ্ছে এখনই আত্মহত্যা করি (12.01.2022)

 


আজ ১১ ই জানুয়ারী ২০২২। সকাল থেকে অফিসে । দুপুরে কোন খাওয়া হয়নি। তার উপর বউয়ের যন্ত্রনা। ৫ মিনিট পর পর ফোন আর আজে বাজে কথা। মানুষের সামনে না পারছি কোন উত্তর দিতে , না পারছি সহ্য করতে। 

কয়েক বার ফোন করে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। যে কথা ফোনে বলতে পারিনি সেটা মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি। তারপরও একের পর এক ফোন করেই যাচ্ছে। 

আর ফোন রিসিভ করেই এক কথা -আমার ভালো লাগছে না। ছুটি নিয়ে বাসায় চলে আসো। কেমন চাকরী করো ছুটি নিয়ে আসতে পারবা না। অফিসের চাপ তারউপর এই জেরা ...................... হায়রে কপাল।

কষ্টে বুকটা ফেটে কান্না আসছে। কারো কোন কথা ভালো লাগছে না। মনে হচ্ছে এখনই আত্মহত্যা করি । মুক্তি দিয়ে যাই এই  নিকৃষ্ট অমানুষটিকে। যে আমাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিযেছে। 

Monday, January 10, 2022

আর কতো (11.01.2022)

 

০৮ জানুয়ারী ২২, থেকে সকাল ৭ টায় অফিসে আসতে হচ্ছে। আমি তো চাকরী করি, তাই বসের হুকুম মানতে বাধ্য। কেনো এতো সকালে  অফিসে আসতে হবে তাতেও জান্নাতের আপত্তি। বাসায় গেলেই কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকে। আমি কোন উত্তর দেই না। চুপ করে থাকি । 

জানি কুকুরের লেজ সোজা হতে পারে এই অজাত কোনদিন বুঝবে না। তাই চুপ করে থাকি। আমি সকালে নাস্তা ন করেই অফিসে চলে যাই। কারন এতো সকালে ওর নাস্তা তৈরি করতে সমস্যা হয় ।

আরেকটি কথা না বললেই না। এই কয়েকদিন বাদে প্রতিদিনই আমি অফিসে আসি সকাল ১০ টায়, দুপুরে বাসায় থেকে যাই ২টার দিকে, ৪টা বা সাড়ে ৪ টার দিকে আবার অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা করি। অফিস শেষ করে রাতে বাসায় ফিরতে ফিরতে সাড়ে ১০ টা ১১ টা  বা তার বেশিও বেজে যায়। যতটুকু সময় অফিসে থাকি তার মধ্যে কয়েকবার জান্নাত ফোন করে বলতে থাকে , আমার কিছু ভালো লাগছে না, আমার কিছু ভালো লাগছে না। 

প্রতিদিনের মতো ১১ জানুয়ারী ২২, সকালে অফিসে কাজ করছি। তখন ঘড়ির কাটায় ১১টা। জান্নাতের ফোন।ফোন কেটে দিয়ে আমি ব্যাক করে বললাম। কাজ করছি বলো কি বলবা, 

জান্নাত- ন্যাকামীর সুরে কথায় টান দিয়ে বললো, আমার কিছু ভালো লাগছে না। 

আমি বললাম তোমার ভালো লাগছে না, শুনলাম আমি কি করতে পারি বলো ? আমি তো অফিসে কাজ করছি তাই না।

জান্নাত- তুমি শুধু অফিস করো, আর কেউ অফিসে করেনা। শতশত পুরুষ মানুষ অফিসে করছে। সংসারও করছে।

আমি বললাম এটা কোন ধরনের কথা। তোমার সমস্যা কি ? এই এক কথা শুনতে শুনতে আমি অতিষ্ট। আর ভালো লাগে না। যদি শত শত পুরুষ মানুষ সম্পর্কে তোমার এতোই ধারনা থাকে তাহলে আমার সাথে সংসার করতে এসেছো কেন ? ফোন রাখো, তুমি তো একা ঘরে সবে যা খুশি বলতে পারো, আমি মানুষের মধ্যে থাকি। আমাকে আর কতো  নিচে নামাবে, আমার আত্মসম্মান আর কতো নষ্ট করবে তুমি ? আমাকে তো জীবন্ত লাশ বানিয়ে ফেলেছো। 

জান্নাত বলেলো একা একা আমার আর ভালো লাগে না, আমি বাইরে যাবো,  তুমি তো সারাদিন বাইরে থাকো তাই টের পাও না।

আমি বললাম- যখন মেয়েটা হয়নি, তখন বলতে একটা বাচ্চা হয়ে তাকে নিয়ে আমার সময় কাটবে, তোমাকে আর জ্বালাবো না। এখন মেয়েকে নিয়ে সময় কাটাতে তোমার ভালো লাগেনা ? আর এটা আমার চাকরী । আমাকে যদি বলে সারাদিন একা এক ঘরে বসে থাকতে , আমার তাই করতে হবে। যখন যেখানে পাঠায় , যা বলে তাই করতে হয়। তুমি তো আমার চাকরী সম্পর্কে, আমার সম্পর্কে সবই জানো । চাকরী মানে কেনা বাদীর মতো যখন যা বলবে তাই করতে হবে। আর বাইরে থাকার কথা বলছো তুমি- আমি বিনোদন করতে বাইরে থাকি না, বা বাইরে ফুর্তি করে বেড়াই না, পেটের ভাত যোগার করতে বাইরে থাকি। তোমাদের মুখে খাবার তুলে দেয়ার জন্যই বাইরে থাকি। 

জান্নাত আমার কষ্টগুলো না বুঝে আবার বলতে শুরু করলো তোমার শুধু অজুহাত আর মানুষ চাকরী করে না ? আর পুরুষ মানুষ নাই জগতে যারা স্ত্রী সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেয়। 

আমি বললাম দেখো আমার সাথে মানুষ আছে তারা আমার একটু পিছনে, আমি রাস্তায় হাটছি । এসব কথা শুনতে কারো ভালো লাগে না । আমি মরে গেলেই তোমার শান্তি হবে। 

 জান্নাত বললো -আমাকে তুমি অনেক বেশি কথা বলে ফেললে, আমাকে তুমি আর কতো কষ্ট দেবে ? আমাকে ডিফোর্স দিয়ে দাও, তোমার সাথে সংসার করবো না।  

আমি আর কোন কথা না বাড়িয়ে ফোন কেটে দিলাম। 

Tuesday, January 4, 2022

নতুন বছর-২০২২



 দিনটি ছিলো ৩১ ডিসেম্বর ২০২১। ৫দিন আগে থেকেই অফিসের প্রোগ্রাম সেট করা কিশোরগঞ্জ যেতে হবে।কারন আমার বস ওখানে একটি ছোট অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।ঢাকা থেকে ১০ জন যাবে তার মধ্যে আমিও। আমি বলেছিলাম যদি দিনে দিনে চলে আসা যায় তাহলে আমি চেষ্টা করবো। 

পারসোনাললি আমার যাওয়ার কোন ইচ্ছাই ছিলোনা। বসকে কয়েকবার বোঝাতে চেষ্টা করেছি যে, আফিসে জরুরী কাজ আছে আমি ঢাকায় থাকি। ফ্যামিলির অজুহাত দিলে , আমার ফ্যামিলি তার কাছে ছোট হয়ে যাবে তাই নানানভাবে বোঝাতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু অফিসের কাজ সস্পর্কে  বসের থেকে ভালো কে জানে ?

রওনা দেয়ার ১০ মিনিট আগেও একবার বলেছি। কিন্তু বস বললেন তুমি আসো । তুমিতো আর থাকছো না। যে গাড়িতে আসবে সেই গাড়িতেই রওনা হয়ে চলে যাবা। কোন ঝামেলা নাই।আমার কোন রকম যাওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও একপ্রকার বাধ্য হয়েই রওনা হতে হলো। আমার না যাওয়ার মূল ইচ্ছাটাই ছিলো পরিবারের জন্য। 

যাইহোক   হায়েস গাড়ি । আমরা ৭ জন । গাড়ি চলছে বেশি কিছুদুর যাওয়ার পর জান্নাতের ফোন। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে তুমি কোথায় এখন ?

আমি বললামা গাড়িতে। 

তুমি যাচ্ছো তাহলে। যাও এসে আমাকে মরা পাবে। আমি গলায় দড়ি দিবো। মেয়েকেও খুন করবো। তোমার যা ইচ্ছা তাই করো। বলেই ফোন কেটে দিলো। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার আত্মসম্মান লুটিয়ে পড়লো ধুলোয়।কারন ফোনের কথা শুনে ফেলেছে পাশে থাকা কেউ কেউ। সবাই আমার দিকে কেমন যেন তাকা্চ্ছে। তারপরও আমি আবার ফোন দিলাম দেখলাম জান্নাতের ফোন বন্ধ। পুরো রাস্তাতে কয়েকবার ট্রাই করেছি। ফোন বন্ধই পেয়েছি। আমি তো ফুর্তি করতে যাচ্ছি না , এটা তো অফিসের কাজ। তারপরও কেন ? 

বাসায় না আসা পর্যন্ত আমি ছিলাম অস্তির। কিভাবে চাকরী করবো ? প্রতিনিয়ত পরিবার কোন কারন ছাড়াই এমন করে 

সবাই খুব হাসি-খুশি । একটা নতুন জায়গায় যাচ্ছে। গল্পগুজব করছে কতো কি। কিন্তু আমার ভীরটা অবাধে রক্তক্ষরন চলছে। সারাটা দিন সবার সাথ হাসিমুখে কথা বললেও আমার ভীতরটা ‍গুমরে কাদছিলো। মানুষের স্ত্রী কামনা করে , স্বামী যেখানেই যাক ভালো ভাবে সুস্থভাবে বাসায় ফিরে আসুক। আর আমার স্ত্রী আমাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। 

বিকার সাড়ে ৪টার দিকে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ঢাকায় পৌছালাম রাত ৯টায়। মেযের জন্য সামান্য কিছু খাবার কিনে বাসায় ফিরে । নিজের মতো করে খেয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে বসে রইলাম। মেয়েকে নিয়ে মজা করছি। রাত ১২ টা বাজেতেই । নতুন বছরের আনন্দে আতশবাজির শব্দ হতে লাগলা খই ভাজার মতো ।আকাশ ঝলমল করতে লাগলো। আমি উৎফুল্ল হয়ে জান্নাতে একবার এপাশে আরেকবার ওপাশে দেখতে বললাম। জান্নাত আমার উপর খেকিয় উঠলো। আমি কোন উত্তর না দিয়ে চুপচাপ মেয়েকে নিয়ে বসে রইলাম। মেয়েকে আতশবাজির ঝলমলে আকাশ দেখাতে লাগলাম। জান্নাত চিৎকার করে মেয়েকে ডাকতে লাগলো-এই এদিকে আয় , ঘুমাতে হবে। আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেলো, একটা যন্ত্রনা হইছিস আমার পেটে। বুক ফেটে কান্না আসছিলো , রাগে ক্ষোভে শরীর যেন থরথর করে কাপছিলো। তবুও চুপ করে নিজেকে সামাল দিয়ে, ঘরের এক ছোফায় বসে রইলাম। 

এভাবে দুদিন কাটলো । আমি খুব বেশি জরুরী না হলে জান্নাতের সাথে তেমন কথা বলিনা। কি আর বলবো ?


০২ জানুয়ারী ২০২২। অফিসে সন্ধ্যায় সেন্ডুইজ নাস্তা দিলো। নাস্তাটা দেখেই জান্নাতের কথা মনে হলো। ও খুব পছন্দ করে। আমি না খেয়ে কৌশলে প্যাকেট করে রাখলাম। বাসায় আসার সময় ভাবলাম , এটা দেখে হয়তো খুশি হবে। কিন্তু বাসায় ফিরে পোড়া মুখ দেখতে হলো। কপাল কুচকিয়ে, দাতে দাত লাগিয়ে কেমন এক ভাব। যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

কোন কথা না বলে ,কাপড় সেরে খেতে বসলাম । মেয়ে বার বার আমার কাছে আসার চেষ্টা করছে , আর ধমক দিয়ে বলছে ঘুমা , না হলে আছাড় দিয়ে নাড়ি বের করে দিবো। ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমি মেয়েকে শান্ত করার জন্য বললাম-আম্মু কম্বলের নিচে শুয়ে থাকো, বাইরে খুব ঠান্ডা। আমি ভাত খেয়ে তোমার কাছ আসছি। মেয়ে চিতকার করে বলল-আমিও ভাত খাবো।

তখন আমি মেয়েকে বিছানা থেকে কোলে করে নিয়ে আমার পাশে বসিয়ে ভাত  দিতে লাগলাম। এভাবেই সেদিন কাটলো। 

০৪ জানুয়ারী ২০২২। অফিসের কাজে খুব ব্যস্ত। আমার উপর দিয়ে কতোটা চাপ যাচ্ছে। আমি অফিসে  কতোটা বিপদে আছি জান্নাত ভালো করেই জানে। বসেরা এখন আমাকে কেউ আগের মতো স্নেহ করেনা। এর কারনও জান্নাত । কেন বলছি সেটা হলো প্রতিনিয়ত যদি মাথায় এমন পারিবারিক নির্যাতন থাকে, যন্ত্রনা থাকে তাহলে অফিসের কাজে কেমন করে মন বসবে। একের পর এক ভূল হতে থাকে। যা আমার অবস্থানকে নড়বড়ে করে ফেলেছে। আমার ক্যারিয়ার জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে। জান্নাতকে সবই বোঝানো হয়েছে। তারপরও ৫টা বছর ধরে একই মানষিক যন্ত্রনা। জানিনা কতোদিন সহ্য করতে পারবো। কয়েকবার জান্নাতের সামনেই আত্মহত্যা করার চেষ্টাও করেছি তারপরও জ্ঞান হয়না। 

দুই,তিনবার ফোন দিয়েছে জান্নাত। কাজের ব্যস্ততায় এবং আশেপাশে বেশি মানুষ থাকায় ফোন ব্যাক করিনি। ৩য় বার রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে জান্নাত- আমার ভালো লাগছে না তাই ফোন করলাম। 

আমি বললাম কেন কি হয়েছে ?

জান্নাত বলল মনটা ভালো লাগছে না। মনের ভিতর কেমন কেমন করছে। 

আমি আস্তে করে বললাম - একটু পরে ফোন দিচ্ছি। আমি জরুরী কাজ করছি।কাজের থেকে বড় কথা পাশে মানুষ আছে। একটু ফ্রি হয়ে ফোন দিচ্ছি।

জান্নাত বললো- এই অজুহাত আর কতকাল ‍শুনবো। 

আমি বললাম এটা কোন কথা বলার ভাষা না। অফিসে মানুষ থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক। অফিস কি আমার একার ?

জান্নাত আবার বলল- জানি, এসব তোমার ফোন রাখার অজুহাত। 

কথাটা শুনে খুবই খারাপ লাগলো, তাই কোন কথা বলে ফোন কেটে দিলাম।

এক মিনিট যেতে না যেতেই আবার জান্নাতের ফোন, রিসিভ করলাম না। বারবার ফোন দিয়েই যাচ্ছে। 

আমার আত্মসম্মান আর কতো নিচে নামারে ওর এই অত্যাচার শেষ হবে ?

 আমাকে কতোটা নিশ্বেস করে ও শান্ত হবে ?

হয়তো আমার শরীরে প্রান যেদিন প্রান থাকবেনা সেদিন ওরা বুঝবে। 

এতো যন্ত্রনার পরে কিভাবে একটা মানুষ ভালো কথা বলে, মন খুলে হাসে আমি জানিনা। অফিসেতো বাধ্য হয়েই সব লুকাতে হয়। 

রাতে বাসায় ফিরলাম মেয়ের জন্য আমসত্ব ও রান্নার তেল নিয়ে। দেখেলাম ছোলা মুড়ি বানিয়েছে। না খেলে কি না কি হয়ে। তা্ খেলাম। ছোলা মুড়ি খেয়ে সেই যে, মোবাইল নিযে বসেছে , আর কোন খেয়াল নাই। আমি যদি মোবাইল নিয়ে এমন ১০ মিনিট থাকতাম তাহলেই আমার জাতি বেজাতি শুরু হয়ে যেতো।

আমি নিজে ভাত নিয়ে খেতে বসলাম। খেতে খেতে বললাম -চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে, ১০/৫ কেজি করে না কিনে , একবস্তা চাল কিনে রাখতে হবে। 

জান্নাত উত্তর দিলো বেতন পেয়েছো তো টাকা খরচ করার জন্য কামড়াচ্ছে। 

আমি এক নজর ওর দিকে তাকিয়ে আর কোন কথা বললাম না। চুপচাপ খেয়ে শুয়ে পড়লাম। রাত ৩টার সময় মোবাইলের টুংটাং শব্দে পাশ ফিরে দেখি জান্নাত মোবাইল চালাচ্ছে। দেখে মনে হলো চ্যাট করছে। সেকেন্ডে সেকেন্ডে টুংটাং শব্দ শুধু চ্যাট করলেই হয়।
এটা যদি আমি করতাম তাহলে হয়তো ঘর ছেড়েই চলে যেতো।

আমি কিছু না বলে চুপ করে শুযে রইলাম। বেশকিছু ক্ষন পর আমি দেখছি আমার সহ্যর বাধ ভেঙ্গে যা্চ্ছে । কখন কি বলে ফেলি তাই বিছানা ছেড়ে , পাশের ঘরের সোফায় এসে বসে রইলাম। শীতের রাত। তাই ঘন্টা দুয়েক পরে  ৫টার দিকে গিয়ে দেখলাম জান্নাত শুয়ে পড়েছে। আমিও আস্তে করে নিজের কম্বল নিয়ে একপাশে শুযে রইলাম। সকালে ৮টায় উঠে গোসল করে অফিসে চলে এলাম। তখনও জান্নাত বিছানা থেকে উঠেনি। তাই সকালের খাওয়া আর হলোনা। হায়রে রিজিক। নিজে ইনকাম করে নিজেই খেতে পারিনা। 

কখনো কোন দিন কোন মেয়ের সাথে এক সেকেন্ডের জন্য কথা বলতে দেখেনি, মোবাইলে  কোন মেয়ের নাম্বারও পায়নি তাই জনে জনে বলে বেড়ায় আমি অগনিত মেয়ের সাথে পরকিয়া করে বেড়াই। মেয়েটার কথা চিন্ত করে সব মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। দিনের পর দিন বুঝালাম, গায়ে হাত তুললাম তারপরও ঠিক স্বভাব ঠিক হয় না। 

আমার দৃষ্টিকোন থেকে এর জন্য দায়ী ওর মা ( আমার শ্বাশুড়ি) । কারন ওনি ভালো হলে মেয়েকে ভালো শিক্ষা দিতেন। মেযেকে যতপ্রকার কুশিক্ষা সব ওখান থেকেই আসে। এই চরিত্রহীন অমানুষটি উনার তৈরি। 






শুধু সন্তানের জন্য

 আমি চরম অসহায়। জীবন যুদ্ধে যার সাথে মাঠে নেমেছি  সেই আমার প্রতিদ্বন্দি। সে আর কেউ নয় আমার স্ত্রী। কেন বলছি কারন, আমার আয় করা টাকা থেকে বছরে...